Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

বছর ঘুরলেও খোঁড়াচ্ছেই ছোট শিল্প

ছোট সংস্থাগুলির পুঁজি কম। আয় ও মুনাফার হারও সে রকমই। ফলে একবার ব্যবসা মার খেলে ঘুরে দাঁড়ানো অনেক কঠিন হয়ে পড়ে।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

দেবপ্রিয় সেনগুপ্ত
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৯ নভেম্বর ২০১৭ ০১:৫১
Share: Save:

হঠাৎ নোট বাতিলের সিদ্ধান্ত কার্যত কোমর ভেঙে দিয়েছিল রাজ্যের বহু ক্ষুদ্র ও ছোট শিল্প সংস্থার। যে-ছবি একই রকম সারা দেশেই। নগদ লেনদেনে অভ্যস্ত সংস্থাগুলির ব্যবসার পারদ নেমেছিল হু হু করে। বছর ঘুরলেও অনেকের অভিযোগ, এখনও খোঁড়াচ্ছে তারা। আবার, সেই ধাক্কা সামলানোর আগে তড়িঘড়ি জিএসটি-র সঙ্গে মানাতে গিয়ে সমস্যা বেড়েছে আরও।

ছোট সংস্থাগুলির পুঁজি কম। আয় ও মুনাফার হারও সে রকমই। ফলে একবার ব্যবসা মার খেলে ঘুরে দাঁড়ানো অনেক কঠিন হয়ে পড়ে। এ রাজ্যে ওই শিল্পের সংগঠন ফসমি ও ফ্যাকসি-র অনেক সদস্যেরই দাবি, বছর ঘুরলেও সঙ্কট কাটেনি।

যেমন, দক্ষিণ কলকাতার পাখা সংস্থাগুলির ‘ক্লাস্টার’ বা শিল্পগুচ্ছের প্রতিনিধি তথা ফ্যাকসি-র সাধারণ সম্পাদক সুভাষচন্দ্র সেনাপতি জানান, সাধারণত গ্রীষ্মের মরসুমের পাখা তৈরির বরাত তার আগের বছরের শীতে অগ্রিম পান তাঁরা। কিন্তু নোট বাতিলের পরে অগ্রিম বরাত তলানিতে নেমে যায়। এ বছরের গ্রীষ্মে তাঁদের ব্যবসা কমেছে প্রায় ৭০%। কাজের অভাবে বাঁশদ্রোণী, বেহালা, নাকতলা, খানপুর ইত্যাদি এলাকার প্রায় ২০০ কারখানার অধিকাংশ কর্মী অন্য পেশায় চলে গিয়েছেন।

দক্ষিণ ২৪ পরগনার মগরাহাটের ‘সিলভার ফিলিগ্রি’ শিল্পে যুক্ত তিনটি গ্রাম পঞ্চায়েতে হাজার দুয়েক ছোট কারখানার ‘ক্লাস্টার’। সেটির চেয়ারম্যান ও ফ্যাকসি-র সদস্য তাপস মণ্ডল জানান, সাধারণত তাঁরা মহাজনের কাছ থেকে বাট এনে গয়না তৈরি করতেন। কিন্তু নোট বাতিলের জেরে ধাক্কা খায় বাটের জোগান। ফলে আগে ওই অঞ্চলে দৈনিক গড়ে ২ কুইন্টল বাট থেকে গয়না তৈরি হলেও এখন তা কোনও মতে ১-১.৫ কুইন্টলে পৌঁছচ্ছে। প্রায় ৩০০ কারখানার ঝাঁপ বন্ধ।

বস্তুত, নগদ নির্ভর দৈনন্দিন জিনিসপত্রের চাহিদা যথেষ্ট মার খেয়েছিল নোট বাতিলের পরে। ফলে যে-সব সংস্থা সেগুলি তৈরি করে, ভীষণ ভাবে মার খায় তাদের ব্যবসা। যেমন, ভদ্রেশ্বরে ফসমি সদস্য ইন্দ্রজিৎ দত্তের ঘি, আচার, জ্যাম, জেলি তৈরির ব্যবসা। আর আর এক সদস্য স্বপন দাসের সর্ষের তেল, আটা, বেসন ইত্যাদির ব্যবসা। যাঁর কারখানা রয়েছে সিঙ্গুরে। তাঁদের ক্রেতারা মূলত ছোট দোকানদার বা ডিস্ট্রিবিউটর। নোট বাতিলের পরপর হয় তাঁদের অনেকে পুরনো নোটে দাম মেটাতে চেয়েছেন, নয়তো কম কিনেছেন।

আবার স্বপনবাবুদের দাবি, তাঁদের ক্রেতা ছোট ছোট দোকানগুলির অনেকেই আগে মাসখানেকের পণ্য মজুত রাখতেন। তাই তাঁরাও আগে ১৫-২০ দিনের মজুত ভাণ্ডারের জন্য বাড়তি উৎপাদন করতেন। নোট বাতিলের পরে দোকানগুলি কয়েক দিনের বেশি পণ্য মজুত রাখছে না। ফলে উৎপাদন ধাক্কা খাচ্ছে। এর জেরে টান পড়ছে মুনাফায়, ব্যাহত হচ্ছে কার্যকরী মূলধনের জোগান। বছর ঘুরলেও পরিস্থিতির খুব একটা উন্নতি হয়নি বলেই সকলের দাবি।

তার উপর নোট বাতিলের ধাক্কা কাটিয়ে ওঠার আগেই জিএসটি নতুন করে আঘাত করেছে বলে দাবি ছোট শিল্প সংস্থাগুলির। জিএসটি-র কাঠামো মেনে চলতে গিয়ে নতুন করে হিমসিম দশা তাঁদের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Small industries Demonetisation
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE