বড় বাগানগুলির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে এগোচ্ছেন ক্ষুদ্র চা চাষিরা। হিসেব বলছে, সারা দেশে যতটা চা তৈরি হচ্ছে, তার প্রায় অর্ধেকই জোগাচ্ছে খুব ছোট মাপের বাগানগুলি। যার হাত ধরে দ্রুত বদলাচ্ছে চা শিল্পের সমীকরণ। সময়ের সঙ্গে গুরুত্ব বাড়ছে এ ধরনের বাগানগুলিরও। যদিও তাদের পাতার গুণমান নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে এখনও। মান বাড়ানোর লক্ষ্যে এর আগে রাজ্যের সঙ্গে যৌথ ভাবে ছোট চাষিদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছে টি বোর্ড। তবে শিল্পমহলের মতে, এই উদ্যোগ একটানা চালিয়ে যেতে হবে। তবেই ফল মিলবে হাতেনাতে।
কারও চা বাগানের জমি ২৫ একর পর্যন্ত হলে, তিনি ক্ষুদ্র চাষি। পশ্চিমবঙ্গ-সহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় বিকল্প কর্মসংস্থানের খোঁজে অনেকেই এ রকম ছোট মাপের চাষ শুরু করেছিলেন বাড়ির লাগোয়া জমিতে। গোড়ায় বটলিফ কারখানাগুলি (যারা বাইরে থেকে পাতা কিনে চা তৈরি করে) তাঁদের থেকে পাতা কিনত। পরে কিছু বড় বাগানও সেই পথে হাঁটে।
এখন ছোট বাগানের পাতার জোগান এতটাই বেড়েছে যে, মে মাসে মোট চায়ে তাদের ভাগ ৫০% বলে জানিয়েছে টি বোর্ড। ১২.১৩ কোটি কেজি চায়ের মধ্যে ৬.০৭ কোটি।
সূত্রের খবর, এর কারণ তিনটি— এক, ছোট বাগান তৈরি করে চা চাষের ঝোঁক বাড়তে থাকা।
দুই, কয়েক’শো বছরের পুরনো বড় বাগানগুলির উৎপাদনশীলতা কমা। কারণ, সেগুলির গাছ বহু পুরনো। মাটিও ক্ষয় হয়েছে। তবে উৎপাদনশীলতা বাড়াতে টি বোর্ড আর্থিক সাহায্যের ব্যবস্থা করেছে। কিন্তু সেই পুনরুজ্জীবন পরিকল্পনার অঙ্গ হিসেবে লাগানো নতুন গাছে চা তৈরির উপযুক্ত পাতা বেরোতে লাগে ৫-৬ বছর। ফলে জোগান বহাল রাখতে অনেক সময় ছোট বাগানের উপর নির্ভর করতে হচ্ছে তাদের।
তিন, ছোট বাগানের সরকারি স্বীকৃতি পাওয়া।
জোগান বাড়ার পাশাপাশি অবশ্য উঠে আসছে গুণমানের প্রশ্নও। যা এখনও কিছুটা কাঁটা। এই পরিপ্রেক্ষিতে ইন্ডিয়ান টি অ্যাসোসিয়েশনের প্রাক্তন কর্তা সি এস বেদীর দাবি, ক্ষুদ্র চাষিদের গুরুত্ব বাড়া সার্বিক ভাবে চা শিল্পের পক্ষে ভাল। কিন্তু বড়গুলির মতো তাঁদেরও পাতার গুণগত মানে নজর দিতে হবে। তিনি বলেন, ‘‘সারা বিশ্বে ভারতীয় চায়ের আলাদা কদর। তাই মানের সঙ্গে আপোস করা যাবে না। সঠিক পদ্ধতি মেনে চাষে জোর দিতে হবে।’’
সংশ্লিষ্ট মহলের একাংশের অভিযোগ, মূলত বাড়ির লাগোয়া ছোট জমিতেই চাষ শুরু করায় অনেক সময় তার নিয়ম ঠিকমতো মানা হয় না। বেশি পাতা পাওয়ার জন্য জেনে বা না-জেনে নিষিদ্ধ কীটনাশক ব্যবহারেরও অভিযোগ আছে অনেক ক্ষেত্রে। তাই সব মিলিয়ে উৎপাদন বাড়লেও, বহু ছোট বাগানের চা পাতার গুণগত মান নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। ফলে দামও ঠিকমতো মেলে না।
গুণগত মান বজায় রাখার বিষয়টি মানছেন ক্ষুদ্র চা চাষিদের সংগঠন সিস্টা-র প্রেসিডেন্ট বিজয়গোপাল চক্রবর্তীও। তাঁর মতে, এই লক্ষ্যেই টি বোর্ড এবং টি রিসার্চ অ্যাসোসিয়েশন যৌথ ভাবে একটি প্রশিক্ষণ কর্মসূচি নিয়েছে। চালাচ্ছে কর্মশালা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy