বিদ্যুৎ সংবহন ও চুরির ফলে ক্ষতি আগের তুলনায় কিছুটা কমেছে। ওই লোকসান কম হওয়ার নিরিখে রাজ্যের স্থান পূর্বাঞ্চলে দ্বিতীয়। ঝাড়খণ্ডের ঠিক পরেই। কিন্তু কেরল, কর্নাটক, তামিলনাড়ুর মতো দক্ষিণী রাজ্যগুলির তুলনায় এ বিষয়ে এখনও অনেক পিছনে পশ্চিমবঙ্গ।
সম্প্রতি সেন্ট্রাল ইলেকট্রিসিটি অথরিটি (সিইএ) ২০১৩-’১৪ থেকে ২০১৫-’১৬ সাল পর্যন্ত বিদ্যুৎ মন্ত্রককে এই সংক্রান্ত যে তথ্য দিয়েছে, তা থেকে এমন ছবিই উঠে আসছে। দেখা যাচ্ছে, ক্ষতির নিরিখে পূর্বাঞ্চলে সব রাজ্যকে ছাপিয়ে গিয়েছে বিহার। সেখানে বিদ্যুৎ পর্ষদের অর্ধেক টাকাও আদায় হচ্ছে না গ্রাহকদের কাছ থেকে।
২০১৫-’১৬ অর্থবর্ষে ‘ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন লস’ অর্থাৎ বিদ্যুৎ নিয়ে গিয়ে গ্রাহকদের পরিষেবা দেওয়ার পরে ঝাড়খন্ডের আর্থিক লোকসান প্রায় ১৭%। সেখানে বিহার এবং ওডিশা যথাক্রমে ৪৯ ও ৩৯ শতাংশ। পশ্চিমবঙ্গেও তা ২২ শতাংশের বেশি। যা আগের দু’বছরের থেকে সামান্য কম হলেও, দক্ষিণ ভারতের রাজ্যগুলির ক্ষতির বহরের থেকে অনেক বেশি। সংশ্লিষ্ট সূত্রে খবর, পরের আর্থিক বছরগুলিতেও এই ছবি একেবারে আমূল বদলায়নি।
সারণিতেই দেখা যাচ্ছে, দক্ষিণী রাজ্যগুলিতে ক্ষতির হার নেমে এসেছে ১০ শতাংশের আশেপাশে। অন্ধ্রপ্রদেশ, তেলঙ্গানা, পুদুচেরিও সেই পথে হাঁটছে। যেখানে সারা দেশে গড় ক্ষতি ২২ শতাংশের কাছাকাছি। রাজ্যের বিদ্যুৎ দফতরের এক কর্তার কথায়, ‘‘বেশ কিছু জেলায় হুকিং, বিল না-দেওয়া ইত্যাদি এত বেশি, যে ক্ষতির নিরিখে পশ্চিমবঙ্গ ওই জায়গা থেকে এগোতে পারছে না।’’
লোকসানে কে কোথায়
২০১৩-’১৪ ২০১৪-’১৫ ২০১৫-’১৬
• বিহার ৪৭.২৬ ৪৬.২৭ ৪৯.২৯
• ওডিশা ৩৮.৮৬ ৪১.৯৬ ৩৯.০১
• ঝাড়খন্ড ১৩.০৬ ১৭.০২ ১৬.৯৯
• পশ্চিমবঙ্গ ২৪.০৫ ২৪.৬৬ ২২.১৬
• কর্নাটক ১০.১৮ ১১.০৫ ১০.২১
• কেরল ১৪.৯৯ ১৫.০৪ ১০.৭৮
• তামিলনাড়ু ১০.৮৪ ১১.০৭ ১০.১৩
* সংবহন ও চুরির কারণে হওয়া ক্ষতির হার শতাংশে
তবে বিহার, ওডিশার মতো ১২টি রাজ্যে বিদ্যুৎ পরিষেবা দিতে গিয়ে সরকারি সংস্থাগুলি নাজেহাল। বিপুল ক্ষতি মাথায় নিয়ে এবং ব্যাঙ্ক ঋণ নিয়ে তাদের বিদ্যুৎ পরিষেবা দিতে হচ্ছে। নির্ভর করতে হচ্ছে সরকারি ভর্তুকির উপরে। পশ্চিমবঙ্গের অবস্থা তার তুলনায় কিছুটা ভাল হলেও, বিদ্যুৎ কর্তাদের একাংশ মানছেন যে, এখানে রাজস্ব ক্ষতি এখনও অনেক বেশি।সাধরণত বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থাগুলির দু’ভাবে ক্ষতি হয়। একটি হচ্ছে বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে গিয়ে তা চুরি, সংবহনজনিত ক্ষতি ইত্যাদি। অন্যটি ভুল মিটার রিডিং-সহ বিল আদায় না হওয়া। এই সমস্ত কিছুই আর্থিক ক্ষতির মধ্যে পড়ে। কেন্দ্রের এক বিদ্যুৎ কর্তা জানাচ্ছেন, দীর্ঘদিন ধরে রক্ষণাবেক্ষণের অভাব, পুরনো যন্ত্রাংশ ব্যবহার, দীর্ঘ তার, পুরনো সাবস্টেশন, ট্রান্সফর্মার ইত্যাদি কারণে এ ধরনের ক্ষতি বাড়ে। তাঁর মতে, বিদ্যুৎ কর্মীদের দায়িত্ব বাড়ানোর সঙ্গে পুরনো পরিকাঠামো না-বদলালে ক্ষতি বরং বাড়বে, কমবে না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy