গত সপ্তাহটা দেশের অর্থনীতির কাছে ছিল ভাল-মন্দে মেশানো। খুচরো মূল্যবৃদ্ধি, শিল্পোৎপাদন, বাণিজ্য ঘাটতি সন্তোষজনক না হলেও শেয়ার বাজার কিন্তু ফুলে-ফেঁপে উঠেছে। সেনসেক্স ছাড়িয়েছে আগের যাবতীয় নজির। নিফ্টি অতিক্রম করেছে ১১,০০০-এর বাধা। তা সত্ত্বেও প্রশ্ন উঠছে লগ্নিকারীদের কাছে কি মোটের উপর পরিস্থিতি সুখের?
এমনিতে বর্তমানে বাজারের এতটা উত্থান কিন্তু স্বাভাবিক নয়। একটু চোখ রাখলেই দেখা যাবে, সূচক বেড়েছে কার্যত হাতে গোনা কয়েকটি শেয়ারকে কেন্দ্র করে। যার মধ্যে রয়েছে রিলায়্যান্স, ইনফোসিস, টিসিএস, এইচডিএফসি, এইচডিএফসি ব্যাঙ্ক, মারুতি সুজুকির মতো কয়েকটি সংস্থা। যে বিএসই-তে এক সময়ে সব সংস্থার শেয়ার মূলধন (মার্কেট ক্যাপিটালাইজেশন) ১৫৬ লক্ষ কোটি টাকায় পৌঁছেছিল, তা এখন ১৪৮ লক্ষ কোটির নীচে। হাতে গোনা কয়েকটি শেয়ারের অস্বাভাবিক উত্থানও সামগ্রিক ভাবে বাজারের পক্ষে ভাল খবর নয়।
এ বার দেখা যাক এখন অর্থনীতির অবস্থা কী। প্রথমে নজর রাখব প্রতিকূল দিকগুলিতে:
• মার্চে শিল্পবৃদ্ধির হার নেমেছে ৩.২ শতাংশে। যা সাত মাসের সর্বনিম্ন। এক বছর আগের তুলনায় (২.৯%) অবশ্য এই হার সামান্য বেশি।
• উদ্বেগ প্রবল ভাবে বাড়িয়েছে খুচরো মূল্যবৃদ্ধির হার। জুনে তা পৌঁছে গিয়েছে ৫ শতাংশে। যা গত পাঁচ মাসে সবচেয়ে বেশি। ফলে সুদ বৃদ্ধির সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।
• জুনে দেশের বাণিজ্য ঘাটতিও পৌঁছে গিয়েছে ১,৬৬০ কোটি ডলারে। গত পাঁচ বছরে এটিই সর্বোচ্চ বাণিজ্য ঘাটতি। সরকারের পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে, বিশ্ব বাজারে অশোধিত তেলের দাম বৃদ্ধিই এর প্রধান কারণ।
• ৬ জুলাই শেষ হওয়া সপ্তাহে দেশের বিদেশি মুদ্রা ভাণ্ডার ২৪.৮২ কোটি ডলার সঙ্কুচিত হয়ে নেমেছে ৪০,৫৮১ কোটি ডলারে। আগের সপ্তাহেও তা কমেছিল ১৭৬ কোটি। এক দিকে আমদানি বৃদ্ধি, অন্য দিকে বিদেশি লগ্নিকারীদের বিনিয়োগ তুলে নেওয়াই যার মূল কারণ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
এতগুলি প্রতিকূল খবরের মধ্যেও শেয়ার বাজারের উত্থানের কারণ কী? সে দিকেও এক বার নজর রাখা যাক:
• শুরু হয়েছে প্রথম ত্রৈমাসিকের ফল ঘোষণার পালা। প্রথম বলেই ছক্কা হাঁকিয়েছে দেশের বৃহত্তম তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থা টিসিএস। আগের অর্থবর্ষের প্রথম ত্রৈমাসিকের তুলনায় সংস্থাটির মুনাফা বেড়েছে ২৩.৭%। নিট লাভ ৫,৯৫০ কোটি টাকা থেকে পৌঁছে গিয়েছে ৭,৩৬২ কোটি টাকায়। মোট আয়ও বেড়েছে প্রায় ৫,০০০ কোটি টাকা। বিশেষজ্ঞদের প্রত্যাশার তুলনায় ফলাফল আরও ভাল হওয়ায় বাজার তাকে স্বাগত জানিয়েছে।
• টিসিএসের মতো ফল না হলেও আর এক তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থা ইনফোসিস ১:১ অনুপাতে বোনাস শেয়ার দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছে। যা খুশি করেছে শেয়ারহোল্ডারদের। তা ছাড়া শেষ তিন মাসে সংস্থার নিট মুনাফা ৩.৭% বেড়ে পৌঁছেছে ৩,৬১২ কোটি টাকায়। আয়ও বেড়ে পৌঁছেছে ১৯,১২৮ কোটি টাকায়।
• ব্যাঙ্কিং শিল্প নিয়ে দুশ্চিন্তা বহাল ঠিকই। কিন্তু প্রথম তিন মাসে বেসরকারি ইন্ডাসইন্ড ব্যাঙ্কের নিট মুনাফা বেড়েছে ২৪%। অন্যান্য বেসরকারি ব্যাঙ্কও ভাল ফল করবে বলে আশা। কিছুটা উন্নতি হতে পারে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের ফলে।
• বর্ষায় সাময়িক ঘাটতি থাকলেও পূর্বাভাস বলছে, চলতি মাসেই তা পুষিয়ে যেতে পারে। আশা, বর্ষা ভাল হলে খাদ্যপণ্যের দাম নিম্নমুখী হবে।
অর্থাৎ, বাজারের কাছে কয়েকটি আশার দিক থাকলেও মন্দের পাল্লাই কিন্তু ভারী। এই সব সমস্যা রাতারাতি মেটারও নয়। ফলে বাজার এই উচ্চতা ধরে রাখতে পারবে কি না, তা নিয়ে সন্দেহ থেকেই যাচ্ছে। মূল্যবৃদ্ধি চড়লে, সুদ বৃদ্ধি পেলে, তেলের দাম না কমলে বা বিদেশি লগ্নিকারীরা শেয়ার বিক্রি জারি রাখলে সমস্যা বাড়বে।
(মতামত ব্যক্তিগত)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy