Advertisement
১৭ এপ্রিল ২০২৪
আশানুরূপ কর ঢোকেনি কোষাগারে

তেলে শুল্ক ছাঁটার রাস্তা নেই: কেন্দ্র

বিশ্ব বাজারে তেলের দাম বাড়া ও ডলারে টাকার দাম পড়া— এই দুইয়ের ধাক্কায় পেট্রল-ডিজেলের দর বাড়ছে হুড়মুড়িয়ে। ক্ষোভ চড়ছে আমজনতার। ভোটের মুখে উপায়ন্তর না দেখে তাই তেলের উৎপাদন শুল্ক ছেঁটে দাম কমানোর পথই খুঁজছে অর্থ মন্ত্রক

—প্রতীকী চিত্র।

—প্রতীকী চিত্র।

প্রেমাংশু চৌধুরী
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০৪:২১
Share: Save:

পেট্রল-ডিজেলের লাগামছাড়া দৌড় রুখতে কেন উৎপাদন শুল্ক ছাঁটা হচ্ছে না, তাই নিয়ে নাগাড়ে মোদী সরকারকে বিঁধছে বিরোধীরা। ভোগান্তির অভিযোগ তুলে অন্তত সাময়িক ভাবে ওই কর ছাঁটার আর্জি জানিয়েছে শিল্পও। অথচ মুখে কুলুপ অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলির। তবে এ বার তাঁর মন্ত্রকের কর্তারাই কার্যত কবুল করলেন, এই মুহূর্তে তেলের দাম কমাতে কর ছাঁটার কোনও পথই দেখতে পাচ্ছেন না তাঁরা। যার কারণ, আয়কর ও কোম্পানি কর থেকে সরকারের আশানুরূপ আয় না হওয়া।

বিশ্ব বাজারে তেলের দাম বাড়া ও ডলারে টাকার দাম পড়া— এই দুইয়ের ধাক্কায় পেট্রল-ডিজেলের দর বাড়ছে হুড়মুড়িয়ে। ক্ষোভ চড়ছে আমজনতার। ভোটের মুখে উপায়ন্তর না দেখে তাই তেলের উৎপাদন শুল্ক ছেঁটে দাম কমানোর পথই খুঁজছে অর্থ মন্ত্রক। কিন্তু বাকি সব খাতে আয় ঠিকমতো হচ্ছে কি না দেখতে গিয়েই চোখ কপালে উঠেছে কর্তাদের।

তাঁদের দাবি, আয়কর রিটার্ন দাখিল বাড়লেও, ওই খাতে সরকারের আয় তেমন বাড়ছে না। আরও করুণ ছবি কোম্পানি কর আদায়ে। এপ্রিল থেকে জুলাইয়ে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ওই দুই কর থেকে আয় বেড়েছে মাত্র ৬.৬%। মন্ত্রকের তরফে প্রশ্ন, তা হলে তেলের কর কমবে কী ভাবে? কারণ কেন্দ্রের কর বাবদ আয়ের পথ দু’টি। এক দিকে আয়কর ও কর্পোরেট কর। অন্য দিকে জিএসটি ও জিএসটির বাইরে থাকা পণ্যের কর। আর দ্বিতীয়টির মধ্যে প্রধান তেলের শুল্ক। মোদী জমানায় যেখান থেকে আয় দ্বিগুণ বেড়েছে। অর্থ মন্ত্রকের এক কর্তার কথায়, ‘‘তেলে শুল্ক চাপানোর সুবিধা, কর ফাঁকির পথ নেই। পেট্রল পাম্পগুলিই তা আদায়ের কাজ করে।’’

বিরোধীদের অভিযোগ

• তেলের ধাক্কায় ভুগছে শিল্প। চাপ বাড়ছে আমজনতার উপর।

• বিশ্ব বাজারে অশোধিত তেলের দাম কম থাকার সময় উৎপাদন শুল্ক বাড়িয়েছিল মোদী সরকার। এ বার দাম কমাতে তা ছাঁটা হোক।

শিল্পের দাবি

• তেলের চড়া দামের জেরে বাড়ছে কাঁচামাল ও পণ্য পরিবহণের খরচ। মার খাচ্ছে ব্যবসা।

• বাড়তি খরচের ধাক্কায় বেহাল ছোট-মাঝারি শিল্প।

• সাময়িক ভাবে হলেও অবিলম্বে উৎপাদন শুল্ক ছাঁটুক কেন্দ্র।

• তেল থেকে পাওয়া করকে অন্তত এখন রাজস্ব আদায়ের অন্যতম উৎস না ধরলেই ভাল।

কেন্দ্রের যুক্তি

• সরকারের কর বাবদ আয়ের মূল পথ আয়কর, কোম্পানি কর, জিএসটি এবং জিএসটির বাইরে থাকা পণ্যে বসানো কর।

• আয়কর রিটার্ন দাখিলের সংখ্যা বেড়েছে। কিন্তু ওই খাতে কেন্দ্রের আয় তেমন বাড়েনি।

• কোম্পানি কর থেকে রোজগারের ছবিও করুণ।

• আয়কর ও কোম্পানি কর খাতে সরকারি কোষাগারে আশানুরূপ অর্থ না ঢুকলে তেলে উৎপাদন শুল্ক কমানোর উপায় নেই।

বাজেটে লক্ষ্য

• চলতি অর্থবর্ষে আয়কর খাতে ১৯.৮% আয় বৃদ্ধি।

• কোম্পানি কর বাবদ ১০.৫% আয় বৃদ্ধি।

• এই দুই কর থেকে সম্মিলিত ভাবে আয় ১৪.৪% বাড়িয়ে ১১.৫ লক্ষ কোটি টাকায় নিয়ে যাওয়া।

চার মাসে রাজকোষে*

• আয়কর থেকে কেন্দ্রের রোজগার বৃদ্ধি ১১.৩%।

• কোম্পানি কর খাতে বৃদ্ধি ০.৫৭%।

• দু’টি কর থেকে সম্মিলিত ভাবে আয় বেড়েছে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৬.৬%।

সরকারের আশা

• তেলের উৎপাদন শুল্ক থেকে চলতি অর্থবর্ষে (২০১৮-১৯) সরকারের সিন্দুকে আসবে ২.৫ লক্ষ কোটি টাকা।

*এপ্রিল থেকে জুলাই

৩১ অগস্ট পর্যন্ত আয়কর রিটার্ন দাখিল ৭১% বেড়েছে বলে বড়াই করেছিলেন জেটলি। বলেছিলেন, এটা নোট বাতিলের সুফল। কিন্তু আয়কর দফতরের কর্তাদের দাবি, নোট বাতিল ও জিএসটির দরুন রিটার্ন জমা বাড়লেও, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তাতে করযোগ্য আয় খুব বেশি নয়। কংগ্রেস মুখপাত্র গৌরব বল্লভের প্রশ্ন, ‘‘তা হলে নোট বাতিল করে কী লাভ হল? মনমোহন জমানায় তো আয়কর ও কোম্পানি কর থেকে আয় বৃদ্ধির হার ৩৯ শতাংশও ছুঁয়েছিল।’’

সরকারি সূত্রের দাবি, মন্ত্রক কিছুটা নিজের ফাঁদেও পড়েছে। গত অর্থবর্ষের শেষ ক’মাসে রাজকোষ ঘাটতির লক্ষ্য ছুঁতে বড় অঙ্কের রিফান্ড আটকে রাখা হয়েছিল। এই অর্থবর্ষের শুরুতে তা মেটাতে গিয়ে আয়কর থেকে আয় তেমন বাড়েনি।

অর্থ মন্ত্রক সূত্রের দাবি, এখন অগস্টে যদি ওই দুই কর আদায়ের ছবিটা উজ্জ্বল হয়, তবে তেলে শুল্ক কমানোর সম্ভাবনা বাড়বে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Oil Tax Central Government
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE