Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪

ভাল বাসার খোঁজ

কেউ মাথার উপরে ছাদ চান। কেউ আবার মুনাফার খোঁজে শাঁসালো সম্পত্তি। উদ্দেশ্য আলাদা। কিন্তু নজর সেই ফ্ল্যাট কিংবা বাড়িতেই। লক্ষ্যভেদের রাস্তা খুঁজলেন আদিল শেঠি।সম্প্রতি এক সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, বাড়ি কেনাকেই জীবনের সবচেয়ে মোড় ঘোরানো পদক্ষেপ বলে মনে করছেন ২৫ থেকে ৩৫ বছর বয়সের তরুণ প্রজন্ম। তাই পুঁজি জোগাড়ের পরামর্শের আগে তাঁদের কিছু তথ্য দিয়ে রাখা ভাল। 

শেষ আপডেট: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০১:০০
Share: Save:

যে  কারও কাছেই বাড়ি কেনাটা সম্ভবত জীবনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক।

জেলা শহর থেকে শিল্প শহরে গিয়ে জীবন গড়ার ইচ্ছে এবং প্রবণতা তরুণ-তরুণীদের মধ্যে বাড়ছে রোজই। এঁদের মধ্যে অনেকে স্থায়ী ভাবে সেখানেই থেকে যেতে চাইছেন। খুঁজছেন নতুন ঠাঁই। অনেকে আবার থাকেন ভাড়া বাড়িতে। তিনি চান পাকাপোক্ত ছাদ। কেউ কেউ আবার বাড়ি কিনতে চান স্রেফ লগ্নির জন্য।

সম্প্রতি এক সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, বাড়ি কেনাকেই জীবনের সবচেয়ে মোড় ঘোরানো পদক্ষেপ বলে মনে করছেন ২৫ থেকে ৩৫ বছর বয়সের তরুণ প্রজন্ম। তাই পুঁজি জোগাড়ের পরামর্শের আগে তাঁদের কিছু তথ্য দিয়ে রাখা ভাল।

বাড়ির দিকে ঝোঁক কেন?

বড় খরচ। তাই ঝুঁকি তো আছেই। যদিও আবাসন বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, এ ব্যাপারে যথেষ্ট মেপে বুঝেই পা ফেলছে তরুণ প্রজন্ম। রেকর্ড বলছে, বিনিয়োগের যে সমস্ত মাধ্যম রয়েছে, সেগুলির মধ্যে গত তিন দশকে জমি-বাড়িই রিটার্ন দিয়েছে সবচেয়ে বেশি। ১৯৯১ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত এই ক্ষেত্রে রিটার্ন এসেছে বছরে প্রায় ২০%। যদিও গত চার বছরে এই গতি কিছুটা থমকেছে।

এটা কি ঠিক সময়?

বাড়ি কেনার সঙ্গে শেয়ার বাজারে লগ্নির মিল আছে। দুই ক্ষেত্রেই দামের ওঠাপড়া নির্ভর করে সময় এবং সামগ্রিক আর্থিক পরিস্থিতির উপরে। জেনে রাখা ভাল, জাতীয় অর্থনীতির সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত একাধিক কারণে এই মুহূর্তেই জোগান এবং চাহিদার ফারাক বিস্তর। সে কারণে অনেক দিন ধরে বাড়ির দাম থমকে রয়েছে। তাই আপনি যে উদ্দেশ্যেই বাড়ি কিনুন না কেন (নিজে থাকা, ভাড়া দেওয়া, লগ্নি) সময়টাকে মোটেও মন্দ বলা যাবে না।

যাঁরা লগ্নির জন্য বাড়ি কিনতে চান, তাঁদের জন্য একটা প্রশ্ন গুরুত্বপূর্ণ। তা হল, আবাসন ক্ষেত্রের রিটার্ন আবার সেই ২০ শতাংশের জমানায় ফিরবে কি? এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়া খুব কঠিন। তবে এ কথাও ঠিক যে, কোনও না কোনও সময়ে ফের ভাল রিটার্ন দিতে শুরু করবে এই লগ্নি।

কী ভাবে এই নিশ্চয়তা দিচ্ছি? একটু আগেই যেটা বলছিলাম। রিয়েল এস্টেট ক্ষেত্রে এখন চাহিদার অভাব রয়েছে। এই বাজারে বিল্ডাররাই কিন্তু চাপে। এই সুযোগটাই কাজে লাগাতে পারেন ক্রেতারা। কাজে লাগাচ্ছেনও। ফলে ধীরে ধীরে কমে আসবে জোগান ও চাহিদার ফারাক। তার পরেই আবার গতি আসতে পারে বাড়ির বাজারে। বাড়তে পারে দাম।

তবে একটা ব্যাপার মাথায় রাখতে হবে। বাড়ি কেনার জন্য সময়টা ভাল হলেও, বিক্রির জন্য কিন্তু এটা মোটেও সঠিক সময় নয়।

ক্রেতারই বাজার

এ এক অদ্ভুত সময়। রাস্তা দিয়ে এগোলে বা পাড়ার ভিতরে ঢুকলে দিকে দিকে চোখে পড়ছে তৈরি হয়ে যাওয়া ফাঁকা বহুতল। যাকে বলে ‘রেডি টু মুভ’। অনেকগুলি আবার নির্মীয়মাণ অবস্থায়। বাড়ি আছে। নেই শুধু ক্রেতা। বছর দশেক আগেও তো পরিস্থিতি এমন ছিল না! তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পের জোয়ারের সঙ্গে তাল মিলিয়ে সেই সময়ে শহর কলকাতা ও পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে গড়ে উঠেছে একের পর এক বহুতল। বিভিন্ন জায়গা থেকে আসা পেশাদার তরুণ-তরুণীরাও বাড়ি কিনেছেন এখানে। এই বিপুল চাহিদার ফলেই তখন লাফিয়ে লফিয়ে বেড়েছে বাড়ির দাম।

এখন কিন্তু পরিস্থিতি ঠিক উল্টো। তৈরি বাড়ির ক্রেতা নেই। আবার বিধির কড়াকড়িতে নির্মীয়মাণ প্রকল্পও সময়সীমার মধ্যে শেষ করে ক্রেতার হাতে তুলে দিতে বাধ্য হচ্ছেন নির্মাতারা। ফলে বাড়ি বিক্রির তাগিদ তাঁদের মধ্যেই বেশি। এই অবস্থায় নির্মাতারা ছাড়ের পাশাপাশি বিভিন্ন অফার দিচ্ছেন। যেমন, নিখরচায় ক্লাব মেম্বারশিপ, গ্যারাজ বা পার্কিং ইত্যাদি। সব মিলিয়ে ক্রেতারাই রয়েছেন শক্তপোক্ত জায়গায়।

পুঁজির সাত-সতেরো

এতক্ষণ তো বললাম বাড়ির বাজারের কথা। কিন্তু বাড়ি কেনার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তো টাকার জোগাড় যন্ত্র করা। এ ব্যাপারেই এ বার কয়েকটি পরামর্শ দেওয়ার চেষ্টা করব।

মনে রাখতে হবে, খুব কম মানুষই পুরোপুরি থোক টাকা দিয়ে বাড়ি কেনেন। অধিকাংশ ক্রেতার ক্ষেত্রেই বাড়ি কেনার পুঁজির দু’টি ভাগ।

১) ডাউনপেমেন্ট। ২) ঋণ।

• ডাউন পেমেন্ট: অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বাড়ির দামের ২০% ডাউনপেমেন্ট দিতে হয়। তবে কোনও কোনও ক্ষেত্রে তা কমতেও পারে।

• ঋণ: ব্যাঙ্কগুলি সাধারণত বাড়ির দামের ৮০% ঋণ দিয়ে থাকে। ক্ষেত্র বিশেষে তা ৯০% পর্যন্তও হতে পারে। এ ক্ষেত্রে ‘লোন টু ভ্যালু’ হিসেব করে ব্যাঙ্কগুলি। পাশাপাশি, আপনি সর্বোচ্চ কত টাকা ঋণ পেতে পারেন তা নির্ভর করবে আপনার আয় এবং ক্রেডিট স্কোরের উপর।

টাকার সংস্থান

বাড়ি ক্রেতার কাছে সবচেয়ে বড় মাথা ব্যথা নিঃসন্দেহে ডাউনপেমেন্টের টাকা জোগাড় করা। এর জন্য অনেক আগে থেকেই পরিকল্পনা করতে হবে। হাতে সময় থাকলে পুঁজি জোগাড় অনেক সহজ হয়ে যায়।

• এসআইপি: বাড়ি কেনার জন্য দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনা থাকা প্রয়োজন। আর টাকা জমানো শুরু করা উচিত অনেক আগে থেকে। আপনার হাতে যদি যথেষ্ট সময় থাকে তা হলে ইকুইটি মিউচুয়াল ফান্ডে সিস্টেমেটিক ইনভেস্টমেন্ট প্ল্যানে (এসআইপি) লগ্নি করার কথা ভাবতে পারেন। সেটাই পরীক্ষিত সহজতম পন্থা। সে ক্ষেত্রে প্রত্যেক মাসের নির্দিষ্ট সময়েই আপনাকে নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা সরিয়ে রাখতে হবে এসআইপিতে লগ্নির জন্য।

ধরা যাকে আপনি তিন বছরে ১০ লক্ষ টাকা জমাতে চান। প্রত্যেক মাসে যদি ২৫,০০০ টাকা বাছাই করা ইকুইটি মিউচুয়াল ফান্ডে ঢালতে থাকেন, তা হলে তিন বছরে ১০ লক্ষ টাকার অনেক বেশিই জমাতে পারবেন। যদি অবশ্য ফান্ডগুলি মোটামুটি ১২% রিটার্ন দেয়। গত কয়েক বছরে শেয়ার বাজার এবং ইকুইটি ফান্ডগুলি যে রকম পারফরম্যান্স করছে তাতে এই হার অস্বাভাবিক কিছু নয়।

• শুভাকাঙ্ক্ষী: আপতকালীন পরিস্থিতি তৈরি না হলে এই রাস্তায় না হাঁটাই ভাল। যদিও অনেকেরই পরিবার এবং আত্মীয়দের সঙ্গে সম্পর্কের রসায়ন অন্য রকম হয়। তাঁদের কাছে ডাউনপেমেন্টের একটা অংশ জোগাড়ের এটাও একটা রাস্তা হতে পারে। তবে সে ক্ষেত্রে খুব তাড়িতাড়ি সেই টাকা ফেরত দেওয়ার পরিকল্পনাও করতে হবে আপনাকে। যেমন, বার্ষিক বোনাস এবং উৎসাহ ভাতার টাকায় ওই ঋণ মেটাতে পারেন আপনি।

বাকি খরচ

• রেজিস্ট্রেশন: বাড়ির রেজিস্ট্রেশনের খরচও একটা ঝক্কি। কোনও কোনও ব্যাঙ্ক অবশ্য রেজিস্ট্রেশনের খরচের একটি অংশ ঋণ হিসেবে দেয়। না হলে ওই টাকা আপনাকেই জোগাড় করতে হবে। সেই টাকাও জমাতে হবে ডাউনপেমেন্টের টাকার সঙ্গেই।

• মাসিক কিস্তি: আপনি কত বছরের জন্য ঋণ নিতে চান তা শুরুতেই ব্যাঙ্ককে জানাতে হয়। তখনই চূড়ান্ত হয়ে যায় মাসিক কিস্তির অঙ্ক। তবে সুদ বাড়া-কমার সঙ্গে সঙ্গে সেই অঙ্কেরও কিছুটা হেরফের হয়। এই টাকার সাধারণ উৎস অবশ্যই মাসিক রোজগার। মাসের গোড়াতেই সেই টাকা সরিয়ে রাখতে হবে। এটা সত্যি, বাড়ি কেনার জন্য অনেক কৃচ্ছ্রসাধন করতে হয় ক্রেতাকে।

সুদে ভর্তুকি প্রকল্প

আর্থিক ভাবে দুর্বল এবং নিম্নবিত্তদের বাড়ি কেনার জন্য কিছু সুবিধা দিচ্ছে সরকার। রয়েছে প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা। এই খাতে চলতি অর্থবর্ষে বরাদ্দ করা হয়েছে ১,০০০ কোটি টাকা। সরকারের দেওয়া এই সুবিধা পাওয়া যাচ্ছে বেসরকারি বহু প্রকল্পের ক্ষেত্রেও। কারণ দু’টি। নিম্ন এবং মধ্য আয়ের মানুষের মধ্যে এই প্রকল্পের বিপুল জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগাতে চাইছে গৃহ নির্মাণ সংস্থাগুলি। তা ছাড়া এই প্রকল্পের কাজ শেষ করার জন্যও কিছুটা বাড়তি সময় পাওয়া যায়।

লেখক ব্যাঙ্ক বাজার ডট কমের সিইও

(মতামত ব্যক্তিগত)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Home House Home loan
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE