ফাইল চিত্র।
প্রায় নাগাড়ে বেড়ে চলা তেলের দাম নিয়ে ক্ষোভের পারদ চড়ছিল আমজনতার। আক্রমণের ঝাঁঝ বাড়াচ্ছিলেন বিরোধীরাও। শেষ পর্যন্ত এই জোড়া চাপের মুখে পেট্রোল ও ডিজেলে উৎপাদন শুল্ক লিটারে ২ টাকা করে কমানোর কথা ঘোষণা করল কেন্দ্র। এর পরে আইওসি জানিয়েছে, বুধবার কলকাতায় প্রতি লিটার পেট্রোলের দাম ২.৪৬ টাকা কমে হল ৭১.১৬ টাকা। আর ডিজেল ২.২৫ টাকা কমে ৫৯.৫৫ টাকা।
কেন্দ্রের দাবি, বুধবার থেকে এই শুল্ক হ্রাস কার্যকর হওয়ায় চলতি আর্থিক বছরের বাকি ক’মাসে রাজস্ব আদায় কম হবে ১৩ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু তা সত্ত্বেও তেলের দামে কিছুটা স্বস্তি দিতেই এই পদক্ষেপ।
বিরোধীরা-সহ অনেকে অবশ্য বলছেন, নিতান্ত ঠেলায় পড়েই শুল্ক ছাঁটতে বাধ্য হয়েছে মোদী সরকার। তিন বছরের জমানায় এই প্রথম। ২০১৪ সালের নভেম্বর থেকে ২০১৬ সালের জানুয়ারির মধ্যে বিশ্ব বাজারে অশোধিত তেলের দর তলানিতে ঠেকার সময়ে পেট্রোল-ডিজেলে উৎপাদন শুল্ক ৯ বার বাড়িয়েছিল তারা। ফলে ওই সময়ে পেট্রোল-ডিজেলে দাম কমার সুবিধা সাধারণ মানুষ পাননি। কারণ, এক দিকে অশোধিত তেলের দাম যেমন পড়ছিল, তেমনই ১৫ মাসের মধ্যে পেট্রোল-ডিজেলের উপর লিটারে বাড়তি উৎপাদন শুল্ক চেপেছিল যথাক্রমে ১১.৭৭ এবং ১৩.৪৭ টাকা। সেই সূত্রে কেন্দ্রের রাজকোষে বাড়তি ঢুকেছে ২.৪২ লক্ষ কোটি। অনেকের প্রশ্ন, তা হলে জুলাই থেকে যখন বিশ্ব বাজারে অশোধিত তেলের দাম বাড়তে শুরু করল, তখন কেন্দ্র শুল্ক ছাঁটার পথে হাঁটল না কেন? অভিযোগ, তা করা হয়নি বলেই গত তিন মাস প্রায় নাগাড়ে বেড়েছে পেট্রোল-ডিজেলের দাম।
বিশ্লেষকদের মতে, শিয়রে গুজরাতের ভোট। ঢাকে কাঠি পড়তে শুরু করেছে পরের লোকসভা ভোটেরও। অথচ অর্থনীতি নিয়ে দিন-দিন অস্বস্তি বাড়ছে মোদী সরকারের। বৃদ্ধি তলানিতে। শিল্প ঝিমিয়ে। তৈরি হচ্ছে না কাজের সুযোগও। এই পরিস্থিতিতে অন্তত তেলের দাম নিয়ে ক্ষোভে প্রলেপ দেওয়া ছাড়া তেমন রাস্তা খোলা ছিল না কেন্দ্রের সামনে। অনেকে আবার মনে করছেন, এর মাধ্যমে ঋণনীতির ঠিক আগের দিন রিজার্ভ ব্যাঙ্কের সামনে মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে রাখার বার্তা দিল কেন্দ্র।
পেট্রোল, ডিজেলের দর রোজ ঘোষণার নিয়ম চালু হয় জুনের মাঝামাঝি। তার পর থেকে প্রতিদিন সাধারণত তা ওঠে-নামে মাত্র কয়েক পয়সা করে। কিন্তু সেই গুটিগুটি পায়ে চলেই আগুন হয়েছে পেট্রোল-ডিজেলের দাম। আগে এক লপ্তে ৪-৫ টাকা দাম বাড়লে, তা নিয়ে রাজনৈতিক চাপানউতোর হত। ক্ষোভ প্রকাশ করতেন সাধারণ মানুষ। কিন্তু এখন রোজকার অল্প-অল্প করে দাম চড়া তেমন টেরই পাওয়া যাচ্ছে না। অথচ পকেটে কামড় বসছে নিঃশব্দে।
কংগ্রেস নেতা মণীশ তিওয়ারির কটাক্ষ করেছিলেন, ‘‘২০০৮ সালে জ্বালানির দাম বাড়ার সময়ে বিজেপি তৎকালীন ইউপিএ সরকারের বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক সন্ত্রাসের অভিযোগ তুলেছিল। তা হলে এখন?’’ এ দিন অবশ্য শেষমেশ শুল্ক কমাল সরকার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy