Advertisement
E-Paper

সার্বিক মূল্যবৃদ্ধি ৫ বছরে সবচেয়ে নীচে

পাঁচ বছরের মধ্যে সবচেয়ে নীচে নেমে এল সার্বিক মূল্যবৃদ্ধির হার। পাইকারি মূল্য সূচকের ভিত্তিতে হিসাব করা এই হার অগস্টে ছুঁয়েছে ৩.৭৪%। সোমবার প্রকাশিত সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী ২০০৯-এর অক্টোবরের ১.৮ শতাংশের পরে এই হার আর এত নীচে নামেনি। তবে এর জেরে এখনই সুদ কমাতে নারাজ রিজার্ভ ব্যাঙ্ক।

সংবাদ সংস্থা

শেষ আপডেট: ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০২:৪৬

পাঁচ বছরের মধ্যে সবচেয়ে নীচে নেমে এল সার্বিক মূল্যবৃদ্ধির হার। পাইকারি মূল্য সূচকের ভিত্তিতে হিসাব করা এই হার অগস্টে ছুঁয়েছে ৩.৭৪%। সোমবার প্রকাশিত সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী ২০০৯-এর অক্টোবরের ১.৮ শতাংশের পরে এই হার আর এত নীচে নামেনি। তবে এর জেরে এখনই সুদ কমাতে নারাজ রিজার্ভ ব্যাঙ্ক।

মূলত শাক-সব্জি ও খাদ্য সামগ্রীর দাম কমার জেরেই মূল্যবৃদ্ধির চাপ কিছুটা কমলো। শাক-সব্জির দাম সরাসরি কমেছে ৪.৮৮%, যার মধ্যে শুধু পেঁয়াজের দরই পড়েছে ৪৪.৭%। কমেছে মাছ-মাংস-ডিমও। রান্নাঘরের অপরিহার্য সব্জি আলুর আগুন বাজার দর অবশ্য এখনও সকলের মাথাব্যথার কারণ। অগস্টে আলু বেড়েছে প্রায় ৬২%। জুলাইয়ে তা বেড়েছিল ৪৬%। বিশ্ব বাজারের পরিস্থিতি নিয়ে দুশ্চিন্তার প্রভাব এ দিন পড়ে ভারতীয় শেয়ার বাজারে। ফলে মূল্যবৃদ্ধি কমার খবরও সেখানে প্রাণ ফেরাতে পারেনি। বাজার পড়ার জেরে এবং আমদানিকারীদের ডলারের চাহিদা বাড়ায় এ দিন ৪৮ পয়সা কমেছে টাকা, যা গত প্রায় ৫ সপ্তাহে সর্বোচ্চ পতন। দিনের শেষে প্রতি ডলারের দর দাঁড়ায় ৬১.১৩ টাকা।

পরিস্থিতি যে সুদ কমানোর পক্ষে আদৌ অনুকূল নয়, তা এ দিন সাফ জানিয়ে দিয়েছে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। আরবিআই গভর্নর রঘুরাম রাজন মুম্বইয়ে এক অনুষ্ঠানে স্পষ্ট বলেন, “দাম আবার বাড়ছে, সেটা দেখার জন্য সুদ কমানোর কোনও কারণ নেই। শীর্ষ ব্যাঙ্ক তখনই সুদ কমাতে পারবে, যখন সব ধরনের জিনিসপত্রের দাম কমবে।” শিল্পমহল অবশ্য ঋণ নেওয়ার খরচ কমাতে সুদ হ্রাসের জোরালো দাবি জানিয়েছে। তাদের মতে কাঁচা মালের চড়া দামের সঙ্গে চড়া সুদ বহাল থাকায় তাদের লাভে টান পড়ছে।

মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে রুপোলি রেখা দেখা গেলেও সরকারি পরিসংখ্যানে অর্থনীতির একটি উদ্বেগের খবরও ধরা পড়েছে এ দিন। কিছু দিন যাবৎ কমতে থাকা ভারতের রফতানি বৃদ্ধির হার একেবারে তলানিতে এসে ঠেকেছে। অগস্টে তা মাত্র ২.৩৫% বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৬৯৫ কোটি ডলার (১,৬৪,৩৯৫ কোটি টাকা)। ফলে বৈদেশিক বাণিজ্যে ঘাটতির অঙ্ক বেড়ে হয়েছে ১০৮৩ কোটি ডলার (৬৬,০৬৩ কোটি টাকা)। এ দিন শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রক প্রকাশিত পরিসংখ্যান অনুযায়ী সার্বিক ভাবে আমদানি ২.০৮% বেড়ে হয়েছে ৩৭৭৯ কোটি ডলার। শুধু সোনা আমদানির খরচই বেড়ে পৌঁছেছে ২০৩ কোটি ডলারে। তবে অশোধিত তেল আমদানির খরচ অগস্টে প্রায় ১৫% কমে দাঁড়িয়েছে ১২৮৩ কোটি ডলার। তেল ছাড়া অন্য সব খাতে আমদানি অগস্টে প্রায় ১৪% বেড়ে ছুঁয়েছে ২৪৯৫ কোটি ডলার। উল্লেখ্য, মে মাসে রফতানি বেড়েছিল ১২.৪%, জুনে ১০.২২% ও জুলাইয়ে ৭.৩৩%।

সার্বিক মূল্যবৃদ্ধির হার জুলাইয়ের ৫.১৯% থেকে অগস্টে এক ঝটকায় নেমেছে ৩.৭৪ শতাংশে। গত বছরের জুলাইয়ে তা ছিল প্রায় ৭%। সব ধরনের খাদ্য সামগ্রীর মূল্যবৃদ্ধির হার অগস্টে ৫.১৫%। জুলাইয়ে তা ছিল ৮.৪৩%। চিনি, ভোজ্যতেলেও মূল্যবৃদ্ধি কমে দাঁড়িয়েছে ৩.৪৫ শতাংশে। রান্নার গ্যাস, পেট্রোল, ডিজেলের মতো জ্বালানি ক্ষেত্রে ওই হার আগের মাসের ৭.৪০% থেকে কমে হয়েছে ৪.৫৪%।

অন্য দিকে, খুচরো বাজারের মূল্যবৃদ্ধির হারও অগস্টে কমে হয়েছে ৭.৮%। আগের মাসে ছিল ৭.৯৬%।

এ দিকে আরবিআই গভর্নর সুদ না-কমানোর ইঙ্গিত দিলেও শিল্পমহল মনে করছে, এই মুহূর্তে যা পরিস্থিতি তাতে ৩০ সেপ্টেম্বরের ঋণনীতিতে সুদ কমানোই শীর্ষ ব্যাঙ্কের স্বাভাবিক সিদ্ধান্ত হওয়া উচিত। সিআইআইয়ের ডিরেক্টর জেনারেল চন্দ্রজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “কেন্দ্রীয় সরকারও মূল্যবৃদ্ধিতে রাশ টানতে ব্যবস্থা নিচ্ছে। তাই পণ্যের দাম এ বার কমার মুখ নেবে বলেই আমরা আশাবাদী। ঋণনীতির ঠিক আগে প্রকাশিত এই পরিসংখ্যানের ভিত্তিতে তাই রিজার্ভ ব্যাঙ্ক উপযুক্ত সিদ্ধান্ত নেবে বলে মনে করছি।”

ফিকি প্রেসিডেন্ট সিদ্ধার্থ বিড়লা বলেন, “দাম কমাতে কিছু ঘোষণা ইতিমধ্যেই করেছে কেন্দ্র। এখন বেশি জোর দিতে হবেন তার যথাযথ রূপায়ণে।” অ্যাসোচ্যামের সেক্রেটারি জেনারেল ডি এস রাওয়াত সুদ কমানোর প্রতি ইঙ্গিত করে বলেছেন, “বৃদ্ধিকে টেনে তুলতে ঋণনীতিতে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের উচিত শিল্পের উৎপাদন খরচ কমাতে ব্যবস্থা নেওয়া।” পিএইচডি চেম্বার অব কমার্স-এর প্রেসিডেন্ট শারদ জয়পুরিয়ার কথায়, “রেপো রেট কমিয়ে শিল্পকে বৃদ্ধির সড়কে ফেরানো জরুরি।”

এ দিকে গত প্রায় ৫ সপ্তাহের মধ্যে সোমবার সবচেয়ে বেশি পড়ল সেনসেক্স। প্রায় ২৪৫ পয়েন্ট পড়ে তা ২৭ হাজারের নীচে নামল। দাঁড়াল ২৬,৮১৬.৫৬ পয়েন্টে। বিশেষজ্ঞদের মতে, মূল্যবৃদ্ধি কমলেও শিল্প বৃদ্ধি তলানিতে নামাই এর জন্য দায়ী। চিনে শিল্পোৎপাদন বৃদ্ধির শ্লথগতিও বাজারের দুশ্চিন্তাকে বাড়িয়েছে। পতনের আর এক কারণ, মার্কিন শীর্ষ ব্যাঙ্ক তাদের বৈঠকে সুদ বাড়াতে পারে এই দুশ্চিন্তা। কারণ সে দেশে সুদ বাড়লে বিদেশি আর্থিক সংস্থাগুলি ভারতের বাজার থেকে মুখ ফেরাতে পারে।

sensex nifty inflation
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy