রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে ঋণ দেওয়া নয়। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলির বিপুল অঙ্কের অনাদায়ি বোঝার পিছনে আসল কারণ আন্তর্জাতিক মন্দা। সেই সঙ্গে ব্যাঙ্ক কর্তাদের অপরিণামদর্শিতাও। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের প্রাক্তন গভর্নর রঘুরাম রাজনের ইঙ্গিত এমনই।
২০১৭ সালের ৩১ ডিসেম্বরের হিসেব অনুযায়ী, ভারতীয় ব্যাঙ্কগুলিতে অনুৎপাদক সম্পদের পরিমাণ ছিল ৮.৯৯ লক্ষ কোটি টাকা। যার বড় অংশই রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের। সেই ঋণের আসল ছবিটা জানতে রাজনই প্রথম উদ্যোগী হন। নির্দেশ দেন, ৫ কোটি টাকার উপরে সমস্ত ঋণের হিসেব তৈরি করতে হবে। কিন্তু অভিযোগ ওঠে, সেই অনাদায়ি ঋণের খাতায় অর্থ সংস্থান করতে গিয়েই শিল্পের জন্য ঋণ বিলি কমিয়ে দিতে বাধ্য হয় ব্যাঙ্কগুলি। নীতি আয়োগের উপাধ্যক্ষ সম্প্রতি দাবি করেছেন, ওই নীতির জন্যই আর্থিক বৃদ্ধির হার কমেছে। রাজনের অবশ্য যুক্তি, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের ঋণ বিলিতে ধাক্কা এসেছিল তার আগেই।
ব্যাঙ্কগুলির অনাদায়ি ঋণের বিপুল বোঝা নিয়ে আলোচনা করছে সংসদের এস্টিমেটস কমিটি। বিজেপি নেতা মুরলী মনোহর জোশীর নেতৃত্বাধীন সেই কমিটিই রাজনের মত জানতে চেয়েছিল। সূত্রের খবর, সেই মতামত কমিটির হাতে পৌঁছেছে। রাজন জানিয়েছেন, মনমোহন সরকারের জমানায় ২০০৬ সালের আগে পর্যন্ত পরিকাঠামো প্রকল্পগুলিতে বিরাট মুনাফা হচ্ছিল। তার থেকেই কর্তারা ধরে নেন আগামী দিনেও এ ভাবেই চলবে। ফলে বিরাট অঙ্কের ঋণ বণ্টনের সময়ে তার ভালমন্দ খুঁটিয়ে দেখা হয়নি। তাতেই তৈরি হয় সমস্যা। রাজন জানিয়েছেন, ২০০৮ সালে বিশ্ব জুড়ে আর্থিক সঙ্কটের জেরে ছবিটা বদলে যেতে থাকে। কমতে থাকে বৃদ্ধির হার। ব্যাঙ্কগুলি যে পরিমাণ বৃদ্ধির হার ধরে হিসেবনিকেশ করেছিল তা আর মিলছিল না। সেই সঙ্গে কয়লা খনি বণ্টন, টু-জি কেলেঙ্কারির ধাক্কায় সরকারের সিদ্ধান্ত গ্রহণও শ্লথ হয়ে গিয়েছিল। যাকে বিরোধীরা বলতেন ‘নীতিপঙ্গুত্ব’। যদিও রাজনের বক্তব্য, ওই সমস্ত ঘটনার জেরে তদন্তের ভয়ে ইউপিএ আমলের পাশাপাশি সরকারি সিদ্ধান্ত গতি হারিয়েছিল এনডিএ আমলেও। রাজনের মতে, ঋণ শোধ না হলেও ব্যাঙ্কের হাতে সে সময়ে সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা বা ঋণ খেলাপি সংস্থাগুলিকে দেউলিয়া ঘোষণা করার মতো আইন ছিল না। সে কারণে ঋণ শোধের সময়সীমা বাড়িয়ে, সহজ কিস্তিতে শোধের ব্যবস্থা করতে বাধ্য হয় ব্যাঙ্কগুলি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy