উর্জিত পটেল। —ফাইল চিত্র।
অনাদায়ী ঋণ থেকে ব্যাঙ্ক জালিয়াতি— পান থেকে চুন খসলেই আঙুল উঠছে পাহারাদারের ব্যর্থতার দিকে। অথচ হাতে প্রয়োজনীয় ক্ষমতা না দিয়ে সেই পাহারাদারকেই করে রাখা হয়েছে ঢাল-তলোয়ারহীন নিধিরাম সর্দারের মতো। তাই রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে আঁটোসাটো নজরদারি চাইলে, আগে তার জন্য হাতে জরুরি ক্ষমতা তুলে দেওয়ার পক্ষে জোরালো সওয়াল করলেন রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর উর্জিত পটেল। যা শুনে কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রকের পাল্টা প্রশ্ন, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে পর্যাপ্ত ক্ষমতা না থাকার কথা পটেল বলছেন। কিন্তু বেসরকারি ব্যাঙ্কে সেই সমস্যা নেই। তা হলে আইসিআইসিআই ব্যাঙ্কে কেলেঙ্কারি এড়ানো গেল না কেন?
মঙ্গলবার রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে প্রশ্ন করতে অর্থ মন্ত্রকের সংসদীয় স্থায়ী কমিটি তলব করেছিল পটেলকে। সেখানে অনাদায়ী ঋণের বিপুল বোঝা থেকে শুরু করে পঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাঙ্কে নীরব মোদীর প্রতারণা পর্যন্ত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কমিটির চেয়ারম্যান বীরাপ্পা মইলি, তৃণমূলের সৌগত রায়দের কঠিন প্রশ্নের মুখে পড়তে হয় তাঁকে। সেই উত্তর দিতে গিয়েই পটেলের পাল্টা দাবি, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে সঠিক নজরদারির জন্য আগে যথেষ্ট ক্ষমতা হাতে পেতে হবে তাঁদের।
তিনি বলেন, কোনও বেসরকারি ব্যাঙ্কে চেয়ারম্যান ও ম্যানেজিং ডিরেক্টরকে (সিএমডি) সরিয়ে দিতে পারে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। কিন্তু রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে তাদের সে ক্ষমতা নেই। আরও ক্ষমতা দরকার বোর্ড বৈঠকে পর্যবেক্ষক পাঠানো, ব্যাঙ্ক গুটিয়ে নেওয়ার মতো সিদ্ধান্ত ইত্যাদি ক্ষেত্রে। কেন্দ্রকে সে জন্য ব্যাঙ্ক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধন করতে হবে। এমনকি নোটবন্দির পরে এটিএমে নগদের অভাব নিয়ে প্রশ্নের মুখেও সেই নজরদারিতে ক্ষমতার অভাবকেই ঢাল করেছেন তিনি। তবে বলেছেন, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের বোর্ডে শীর্ষ ব্যাঙ্কের প্রতিনিধি থাকুক, এই দাবি তাঁর নেই।
অনেকে বলছেন, নোটবন্দি থেকে পাহাড়প্রমাণ অনুৎপাদক সম্পদের জেরে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলির বেহাল দশা— সবেতেই আঙুল উঠেছে উর্জিত ও রিজার্ভ ব্যাঙ্কের দিকে। ধাক্কা খেয়েছে তাদের ভাবমূর্তি। এই অবস্থায় কমিটির সামনে উর্জিত বলে রাখলেন, আসলে হাতে ক্ষমতা না দিয়েই তাঁদের উপর দায় চাপিয়ে দিচ্ছে কেন্দ্র।
যদিও অর্থ মন্ত্রকের কর্তারা পাল্টা বলছেন, ব্যাঙ্ক নিয়ন্ত্রণ আইনে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক একই সঙ্গে ব্যাঙ্কের নিয়ন্ত্রক ও নজরদার। সেখানে সরকারি ও বেসরকারি ব্যাঙ্কের মধ্যে তেমন কোনও ফারাক নেই। কিন্তু সূত্রের দাবি, উর্জিত কমিটিকে লিখিত নোট দিয়ে জানিয়েছেন, স্টেট ব্যাঙ্কের মতো সরকারি ব্যাঙ্কগুলি আইনত নিগম। আইন অনুযায়ী বেসরকারি ব্যাঙ্কগুলিই ব্যাঙ্ক কোম্পানি (সংস্থা)। সেখানেই রিজার্ভ ব্যাঙ্কের পূর্ণ ক্ষমতা। সে ক্ষেত্রে মন্ত্রকের আবার প্রশ্ন, ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও উর্জিত কি আইসিআইসিআই ব্যাঙ্কের কেলেঙ্কারি আটকাতে পেরেছেন? সেখানে বিতর্ক দানা বেঁধেছে খোদ কর্ণধারের নামেই!
তা ছাড়া সূত্রের খবর, নজরদারিতে আরও ক্ষমতা চাইলেও, নীরব কাণ্ডের দায় গভর্নর নিতে চাননি। তাঁর যুক্তি, সব ব্যাঙ্কের প্রতিটি শাখায় নজরদারি সম্ভব নয়। অনেকের প্রশ্ন, উর্জিত যদি মেনেই নেন যে, নজরদারি অসম্ভব, তা হলে বাড়তি ক্ষমতা পেয়ে সমস্যার ছবি বদলানোর কথা টিকবে কী ভাবে?
ক্ষমতা চাই
সরকারি ও রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে—
• কর্ণধার (সিএমডি) নিয়োগ এবং প্রয়োজনে তাঁকে সরানোর ক্ষেত্রে
• লাইসেন্স দেওয়া ও তার জন্য শর্ত চাপানোর বেলায়
• চেয়ারম্যান, ম্যানেজিং ডিরেক্টর, ডিরেক্টর নিয়োগের ক্ষেত্রে ছাড়পত্র
• ব্যাঙ্কের ডিরেক্টরদের বৈঠক ডাকা। বোর্ডের বৈঠকে অফিসার বা পর্যবেক্ষক পাঠানো
• দরকারে ম্যানেজার ও অন্যান্য পদের আধিকারিকদের সরানো
• বোর্ডের উপরে কথা বলা
• ব্যাঙ্ক গুটিয়ে ফেলার আবেদন
• ব্যাঙ্ক মিশিয়ে দেওয়ার ছাড়পত্র
• ব্যবসা বন্ধ করা, পুনর্গঠন বা সংযুক্তিকরণের জন্য কেন্দ্রকে আর্জি
কিন্তু প্রশ্ন
• নজরদারিতে আরও ক্ষমতা চেয়েও নীরব-কাণ্ডের দায় নিতে পিছপা কেন?
• সমস্ত বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কের সব শাখায় চোখ রাখা সম্ভব নয় বলে যেখানে গভর্নর নিজেই কবুল করছেন, সেখানে শুধু বাড়তি ক্ষমতায় চিঁড়ে ভিজবে কি?
• পুরো ক্ষমতা হাতে থাকা সত্ত্বেও আইসিআইসিআই ব্যাঙ্কে কেলেঙ্কারি আটকানো গিয়েছে কি?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy