জোড়া ধাক্কা বিজয় মাল্যের। এক দিকে ইউনাইডেট স্পিরিটসের (ইউএসএল) কর্তার পদ ছাড়ার জন্য সেটির ক্রেতা সংস্থা ডিয়াজিও-র কাছ থেকে প্রাপ্য ৭.৫ কোটি ডলার (প্রায় ৫১৫ কোটি টাকা) এখনই হাতে পাবেন না মাল্য। এই নির্দেশ দিয়েছে বকেয়া ব্যাঙ্কঋণ আদায় ট্রাইব্যুনাল (ডিআরটি)। যত দিন না ঋণের টাকা ফেরত পেতে ২০১৩ সালে স্টেট ব্যাঙ্কের দায়ের করা মূল মামলার নিষ্পত্তি হয়, তত দিন সেই টাকা ডিয়াজিওকে না-মেটাতেও বলেছে তারা। অন্য দিকে, বন্ধ কিংফিশার এয়ারলাইন্স কর্তার বিরুদ্ধে এ দিনই বেআইনি ভাবে অর্থ সরানোর অভিযোগে কালো টাকা প্রতিরোধ আইনে মামলা করল এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)।
আইডিবিআই ব্যাঙ্কের থেকে কিংফিশারের নেওয়া ৯০০ কোটি টাকা ঋণের অর্থ কোথায় গিয়েছে, এতে কোনও দুর্নীতি হয়েছে কি না— এ বিষয়ে ইতিমধ্যেই তদন্ত শুরু করেছে সিবিআই। যার অঙ্গ হিসেবে এ দিন মাল্যের বিরুদ্ধে পৃথক মামলা করেছে ই়ডি।
প্রসঙ্গত, দীর্ঘ টালবাহানার পরে গত মাসেই ইউএসএলের চেয়ারম্যান এবং নন-এগ্জিকিউটিভ ডিরেক্টরের পদ ছাড়ার ঘোষণা করেন বিজয় মাল্য। আগামী কয়েক বছর ইংল্যান্ড বাদে ব্রিটিশ মদ প্রস্তুতকারকটির সঙ্গে বিশ্বের অন্যান্য দেশে প্রতিযোগিতায় না-নামার শর্ত হিসেবেই ৭.৫ কোটি ডলার তাঁকে দিচ্ছে ডিয়াজিও। ইউএসএল এখন ব্রিটিশ বহুজাতিক ডিয়াজিওরই হাতে। মাল্য পদ ছাড়ার সময়ে এক বিবৃতিতে জানান, ইউএসএলের সঙ্গে তাঁর আর কোনও সম্পর্ক থাকবে না। তবে ইউএসএলের ফাউন্ডার এমেরিটাস থাকছেন তিনি। আর পরিচালন পর্ষদে ডিরেক্টর হিসেবে অন্তত দু’বছর থাকবেন তাঁর ছেলে সিদ্ধার্থ। আইপিএল-এ ইউএসএলের ক্রিকেট দল রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর চিফ মেন্টার হিসেবেও কাজ করবেন মাল্য। মাল্যের দাবি ছিল, আগামী দিনে পরিবারের সঙ্গে আরও বেশি সময় কাটাতে চান তিনি। সেই কারণে বেশির ভাগ সময় ব্রিটেনে কাটাতে চান তিনি। গত ২৮ বছর ধরেই তিনি অনাবাসী ভারতীয়। সে কথা রিজার্ভ ব্যাঙ্কও জানে।
এর পরেই ডিয়াজিও-র সঙ্গে চুক্তিতে আইন লঙ্ঘন হয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখার কথা জানায় সেবি। একই সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে ফের ডিআরটির দ্বারস্থ হয় স্টেট ব্যাঙ্ক। তাদের দাবি ছিল, মাল্যের প্রাপ্য টাকা আগে ১৭টি ব্যাঙ্কের ঋণ শোধ হওয়ার জন্য ব্যবহার করতে দিতে হবে। উল্লেখ্য, স্টেট ব্যাঙ্কের নেতৃত্বে ১৭টি ব্যাঙ্কের কনসোর্টিয়াম এখন বসে যাওয়া কিংফিশার এয়ারলাইন্সকে ঋণ দিয়েছিল। ব্যাঙ্কগুলির পাওনা ৭ হাজার কোটি টাকা। পাশাপাশি, পৃথক আরও চারটি অভিযোগে মাল্যকে গ্রেফতার এবং তাঁর পাসপোর্ট বাজেয়াপ্তের সিদ্ধান্ত নিতে হবে বলে মামলা করে তারা। ওই অভিযোগগুলি নিয়ে শুনানি ২৮ মার্চ।
গত বছরই ঋণ ফেরত না-দেওয়া সংক্রান্ত এক তদন্তের সূত্র ধরে কিংফিশার এবং তার কর্ণধারের বাড়িতে তল্লাশি চালায় সিবিআই। উল্লেখ্য, ২০১৩ সালে বিভিন্ন কর্পোরেট সংস্থাকে দেওয়া ঋণ অনুৎপাদক সম্পদে পরিণত হওয়া নিয়ে ২৭টি মামলা চালাচ্ছে সিবিআই। এর সঙ্গে কোনও ধরনের জালিয়াতি যুক্ত কি না, তা-ই তদন্তের মূল বিষয়। যার আওতায় রয়েছে কিংফিশার মামলাও।
যদিও, মাল্যের দাবি, তদন্তে সহযোগিতার সঙ্গেই ঋণের টাকা মেটানো নিয়ে কথা চালাচ্ছেন তিনি। কোনও ভাবেই আত্মগোপন করার ইচ্ছা তাঁর নেই। তাঁর আরও দাবি, ২০১২-য় কিংফিশার বন্ধের আগে থেকেই সংস্থার বেহাল দশার কথা জানত স্টেট ব্যাঙ্কও। ফলে এখন তাদের স্বেচ্ছায় ঋণখেলাপির তকমা দেওয়ার কোনও মানে নেই বলেই তাঁর অভিযোগ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy