ফাইল চিত্র।
যে সপ্তাহে দেশে দৈনিক সংক্রমণ ছাড়িয়ে গিয়েছে চার লক্ষ এবং মৃত্যু চার হাজারের মাত্রা, সেই সপ্তাহে পাঁচটির মধ্যে তিনটি লেনদেনেই উঠল শেয়ার বাজার। সেনসেক্সের উত্থানের অঙ্ক মোট ৪২৪। সপ্তাহ শেষে তা থিতু হয়েছে ৪৯,২০৬-এ পৌঁছে। অনেকের মনেই প্রশ্ন, করোনার দ্বিতীয় ঢেউ ধাক্কা দেওয়ার পরে বেশ খানিকটা পড়লেও, গত সপ্তাহে সংক্রমণের এমন নজিরবিহীন ভয়ঙ্কর রূপকে উপেক্ষা করে তা নিজের শক্তি ধরে রাখল কী করে? এর উত্তর খুঁজতে গিয়ে যে সমস্ত কারণ চোখে পড়ছে, সেগুলি হল—
• গত বছর অতিমারির প্রথম ঢেউ আছড়ে পড়া এবং লকডাউন শুরু হওয়ার পরে বহু মানুষ আতঙ্কে শেয়ার বিক্রি করেছিলেন। কিন্তু পরে অনুশোচনায় হাত কামড়েছিলেন। কারণ, লকডাউন শেষে বাজার তরিতরিয়ে উঠে সে বারই প্রথম ছাড়িয়ে গিয়েছিল ৫০ হাজারের মাইলফলক। আক্ষেপ তারাও করেছেন, যাঁরা মার্চের মহাপতনে (সূচক নেমে গিয়েছিল ২৫ হাজারে) শেয়ার কেনেননি। এ বার অনেক লগ্নিকারীই তাই সব কিছু বুঝেশুনে, পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে কেনাবেচা চালাচ্ছেন। বাজার একটু নামলেই শেয়ার কিনে রাখছেন।
• এ বার দেশ জুড়ে পূর্ণ লকডাউন ডাকা হয়নি। স্বল্পমেয়াদে আঞ্চলিক বিধিনিষেধ মারফত সংক্রমণকে থামানোর চেষ্টা চলছে। ফলে শুরুতে চিন্তিত হলেও অনেকের ধারণা অর্থনীতির ক্ষয়ক্ষতি কম হবে।
• উৎপাদন, পরিবহণ, বণ্টন, বিক্রি ইত্যাদি কিছুটা বিঘ্নিত হয়েছে ঠিকই, কিন্তু বন্ধ হয়নি।
• অনিশ্চয়তা চলছে বন্ড বাজারে। স্থির আয়ের প্রকল্পেও সুদ কম। তাই শেয়ার বিক্রির টাকা অন্য জায়গায় রাখার ঝোঁক কমেছে।
• তেজি বিশ্ব বাজার শক্তি জোগাচ্ছে ভারতীয় বাজারকে।
• আবহাওয়া দফতরের অনুমান, সময় মতোই (১ জুন) বর্ষা ঢুকবে দেশে। বৃষ্টি স্বাভাবিক হবে বলেও পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।
• বাজারের আশা মাস কয়েকের মধ্যে নিয়ন্ত্রণে আনা যাবে দ্বিতীয় ঢেউকে।
• প্রতিষেধকের ঘাটতি মেটাতে বিদেশ থেকে তা আমদানির অনুমতি দিয়েছে সরকার। আমেরিকা টিকার কাঁচামাল রফতানির উপরেও নিয়ন্ত্রণ শিথিল করেছে। ফলে আশা, দু’মাসের মধ্যে ভ্যাকসিনের ঘাটতি মিটবে।
• বহু সংস্থাই জানুয়ারি-মার্চ ত্রৈমাসিকে প্রত্যাশার তুলনায় ভাল আর্থিক ফল প্রকাশ করেছে।
বস্তুত, কেন্দ্রের মোদী সরকার মনে করে করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের কারণে ঘুরে দাঁড়ানোর গতি কিছুটা কমলেও, অর্থনীতির তেমন কোনও ক্ষতি হবে না। কিন্তু যে ভাবে সংক্রমণ বাড়ছে, তাতে দেশ জুড়ে পূর্ণ লকডাউনের আশঙ্কা এখনই উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। যে কারণে মানুষের মনে আতঙ্ক থেকেই যাচ্ছে। তার উপরে দেশবাসীর জীবন রক্ষার যুক্তিতে পুরোপুরি লকডাউনের জন্য চাপও আসছে বিভিন্ন মহল থেকে। সংক্রমণ এবং মৃত্যুর হার যদি আগামী কয়েক দিনের মধ্যে কমানো সম্ভব না-হয়, তা হলে সামনে কিন্তু ঘোর বিপদ। গোটা বিশ্বের নজর এখন ভারতে। প্রতিষেধক প্রয়োগে চোখে পড়ার মতো গতি না-আসলে অনিশ্চয়তা আরও বাড়বে। বিদেশি লগ্নিকারীরা বড় আকারে লগ্নি ফেরাতে শুরু করলে বাজারে ধসের আশঙ্কাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।
তার উপরে পশ্চিমবঙ্গ-সহ পাঁচ রাজ্যে বিধানসভা ভোট শেষ হতে না-হতেই বাড়তে শুরু করেছে পেট্রল-ডিজেলের দাম। ভোজ্য তেলও বিকোচ্ছে চড়া দরে। আশঙ্কা, এর প্রভাবে আগামী দিনে মূল্যবৃদ্ধির হাল বেশ কিছুটা মাথা তুলতে পারে। করোনার দ্বিতীয় কামড়ে নতুন করে বহু মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়ায় টান পড়বে চাহিদাতেও। জুলাই থেকে বিভিন্ন ক্ষুদ্র সঞ্চয় প্রকল্পে সরকার সুদ কমাবে কি না, এই ভয়ও রয়েছে। অর্থাৎ অতিমারির মধ্যেই আরও নানা সমস্যায় জর্জরিত মধ্যবিত্ত সমাজ। যে কারণে বাজার আপাতত চাঙ্গা থাকলেও, চূড়ান্ত অস্থির। একেক দিন বিপুল ওঠানামা করছে সূচক।
এমন অবস্থায় উদ্বেগ বাড়াচ্ছে মার্চের তুলনায় দেশে যাত্রিগাড়ির বিক্রি ৭% কমে যাওয়া। ২,৮৬,৭৭২টির জায়গায় এপ্রিলে বিক্রি হয়েছে ২,৬৫,৬৩১টি গাড়ি। আগের বছর এপ্রিলে ব্যবসা পুরোপুরি বন্ধ ছিল। দেশে গাড়ি বিক্রি কমলে তার নেতিবাচক প্রভাব পড়ে যন্ত্রাংশ-সহ বিভিন্ন আনুষঙ্গিক শিল্পে। অর্থনীতিতে যার ধাক্কা কম নয়।
গত সপ্তাহে যে সব সংস্থা আর্থিক ফল প্রকাশ করেছে, তার মধ্যে আছে এইচডিএফসি, কোটাক ব্যাঙ্ক, আইডিবিআই ব্যাঙ্ক এবং টাটা স্টিল।
(মতামত ব্যক্তিগত)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy