Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
ডলার এবং তেলের চাপ বহাল

এই বাজারে ভরসা বুঝেশুনে লগ্নিই

তেলের দামে স্বস্তির চিহ্ন নেই। শুক্রবার টাকা কিছুটা ঘুরে দাঁড়ালেও, সামগ্রিক ভাবে তা নিয়ে চাপ বহাল। এই অবস্থায় টানা ছ’দিন পতনের পর বৃহস্পতিবার থেকে বাজার আবার ঘুরে দাঁড়িয়েছে।

অমিতাভ গুহ সরকার
শেষ আপডেট: ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০২:৩০
Share: Save:

তেলের দামে স্বস্তির চিহ্ন নেই। শুক্রবার টাকা কিছুটা ঘুরে দাঁড়ালেও, সামগ্রিক ভাবে তা নিয়ে চাপ বহাল। এই অবস্থায় টানা ছ’দিন পতনের পর বৃহস্পতিবার থেকে বাজার আবার ঘুরে দাঁড়িয়েছে। সপ্তাহের শেষ দু’টি লেনদেনের দিনে সেনসেক্স বেড়েছে যথাক্রমে ২২৪ ও ১৪৭ অঙ্ক। পৌঁছে গিয়েছে ৩৮,৩৯০ অঙ্কে। সপ্তাহ শেষে নিফ্‌টি বেড়ে থিতু হয়েছে ১১,৫৮৯ পয়েন্টে। পর পর দু’দিন সূচক ওঠায় বাজারে আতঙ্ক খানিকটা কমেছে। কিন্তু ভয় এখনও পুরো কাটেনি।

টাকার দাম আরও পড়লে বাড়বে তেল আমদানির খরচ। আবার তেলের দামের দৌ়ড় জারি থাকলে পকেটে টান পড়বে সাধারণ মানুষের। চোখ রাঙাবে মূল্যবৃদ্ধি। অর্থনীতির পক্ষে যা মোটেও সুখবর নয়। এর সঙ্গে আছে বিশ্ব বাজারের চাপও। ফান্ড থেকে শেয়ার বাজারে টানা লগ্নি জারি থাকায় এই পরিস্থিতিতে বাজার যতটা নামা উচিত ছিল, তা হয়নি। তবে বড় মেয়াদে এই অবস্থা চলতে থাকলে লগ্নি কমার আশঙ্কা তৈরি হবে ফান্ডেও। ফলে এই বাজারে পা রাখতে হবে ভেবেচিন্তে। কষ্টের টাকা ঢালার আগে যাচাই করে নিতে হবে সব দিকই।

টাকার দামে এতটা পতনে অবশ্য বেশ খানিকটা বেড়েছে বন্ড ইল্ড। গত সপ্তাহ শেষে ইল্ড অর্থাৎ বন্ডের প্রকৃত আয় ছাড়িয়েছে ৮%। উল্লেখ্য, ইল্ড বাড়ে আগে ইস্যু করা বন্ডের বাজারদর কমলে। বন্ডের বাজারদর কমায় কমেছে বেশির ভাগ ঋণপত্র নির্ভর (ডেট) বন্ড ফান্ডের ন্যাভ। এই অবস্থায় অনেকে বন্ড ফান্ড থেকে ব্যাঙ্কের স্থায়ী আমানত ও অ-রূপান্তরযোগ্য ডিবেঞ্চারে (এনসিডি) লগ্নি সরানোর কথা ভাবছেন। যেখানে নিশ্চিত আয়ের প্রতিশ্রুতি আছে। ১০ বছর মেয়াদি সরকারি বন্ড ইল্ড ৮ শতাংশের উপরে থেকে গেলে, অক্টোবর থেকে ডাকঘর সঞ্চয় প্রকল্পগুলির সুদ বাড়ার সম্ভাবনা থাকবে বলে মনে করা হচ্ছে।

শেয়ারের পাশাপাশি, ভাটা দেশে যাত্রী গাড়ি বিক্রিতেও। পরপর দু’মাসই যা কমেছে। অগস্টে বিক্রি কমেছে ২.৫৪%। পতনের তালিকায় আছে মারুতি-সুজুকি, হুন্ডাই মোটরস ও হোন্ডা। একই মাসে অবশ্য বিক্রি বেড়েছে টাটা মোটরস ও টয়োটার। আগস্টে মোট বিক্রি হয়েছে ২.৮৫ লক্ষ গাড়ি। গত বছর একই মাসে বিক্রি হয় ২.৯২ লক্ষ। পেট্রলের অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধি ও কেরলের প্রাকৃতিক দুর্যোগ যাত্রী গাড়ি বিক্রি কমার প্রধান কারণ হিসেবে মনে করা হচ্ছে।

তবে আশার কথা, গত মাসে ভাল রকম বিক্রি বেড়েছে বাণিজ্যিক গাড়ির। টাটা মোটরসের বিক্রি বেড়েছে ২৬%, অশোক লেল্যান্ডের ২৭% এবং মহীন্দ্রার ২৫%। এই পরিসংখ্যান ইঙ্গিত দেয় যে, দেশে ব্যবসা বাড়ছে।

মাসের শুরুতে বাজার পড়লেও, এরই মধ্যে টিসিএসের শেয়ারের মোট মূল্য (মার্কেট ক্যাপিটালাইজেশন) ৮ লক্ষ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। মঙ্গলবার সংস্থার শেয়ারদর ২,১০০ টাকা স্পর্শ করায়, তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থাটি এই মাইলফলক ছোঁয়। আগে রিলায়্যান্স ইন্ডাস্ট্রিজ সেই নজির গড়েছিল।

এ দিকে, এক থেকে দে়ড় মাসে বাজারে আসবে প্রায় ১৮,৫০০ কোটি টাকার অ-রূপান্তর যোগ্য বন্ড। ‘এএএ’ রেটিংযুক্ত টাটা ক্যাপিটালের এনসিডির ইস্যু খুলবে আজ, সোমবার। সুদ ৮.৮-৯.১০%। এর পরে আসবে টাটা ক্যাপিটাল হাউজিং ফিনান্স, আধার হাউজিং ফিনান্স এবং ইন্ডিয়া-বুলস কমার্শিয়াল। শেয়ার থেকে মোটা অঙ্ক বন্ড বাজারে সরে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। উল্লেখ্য, এগুলির আর একটি আকর্ষণ হল, ডি-ম্যাট অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে কেনা হলে উৎসে কর কাটা হবে না।

গ্রাহকদের সুরক্ষার জন্য যে সব ব্যাঙ্কের ১০টির বেশি শাখা আছে, তাদের নিজস্ব স্বাধীন অম্বুডজ়মান নিয়োগের নির্দেশ দিয়েছে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। অভিযোগ পরীক্ষা করে, তার সুরাহা করতে নির্দেশ দেবে‌ এই বিশেষ দফতর। এখানে ব্যাঙ্কের কর্মী নন, থাকবেন বাইরের স্বাধীন সদস্য।

নথিভুক্ত অনেক বড় সংস্থার বহু শেয়ার এখনও ধরা আছে কাগজের সার্টিফিকেটের আকারে। চাইলে সেই শেয়ার লগ্নিকারী ধরে রাখতে পারেন। তার উপরে মিলবে ডিভিডেন্ডও। কিন্তু মনে রাখতে হবে যে, ৫ ডিসেম্বরের পরে ওই সব শেয়ার বিক্রি বা হস্তান্তর করা যাবে না বলে নির্দেশ দিয়েছে সেবি। অর্থাৎ কাগজের শেয়ার থাকলে ওই মেয়াদের মধ্যে তা ডি-ম্যাট অ্যাকাউন্টে আনতে হবে। আর যাঁদের ডি-ম্যাট নেই, তাঁদের এর মধ্যেই তা খুলে ফেলতে হবে।

(মতামত ব্যক্তিগত)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Share market Investment Hope
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE