কথায় কথায় ঝান্ডা হাতে জঙ্গি আন্দোলন। ছুতো পেলেই বিক্ষোভ, ঘেরাও। কাজের দিনে পুরোদমে কাজ হওয়াও এক সময় যেন একটা বেশ ব্যাপার ছিল বিএসএনএলে। আর পাঁচটা রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার মতো। কিন্তু প্রতিযোগিতার গুঁতোয় সেই ‘সুখের দিন’ গিয়েছে। পিঠ ঠেকেছে দেওয়ালে। পট পাল্টেছে এতটাই যে, ছুটির দিনে অফিসে আসতেও না করছেন না কর্মীরা! অন্তত তার প্রতিবাদে পোস্টার পড়েনি অফিসের দেওয়ালে। ইউনিয়নের তরফেও ‘চলছে না-চলবে না’ স্লোগান নেই। বরং উল্টো সুর। যার মোদ্দা কথা, ‘আগে তো সংস্থা বাঁচুক। তার পরে না আন্দোলনের প্রশ্ন।’
সম্প্রতি সংস্থার আয় বাড়াতে কিছু ছুটির দিনেও কর্তৃপক্ষের নির্দেশ মেনে কাজে আসছেন কর্মীরা। আর সেই প্রসঙ্গে তাঁদের সংগঠন বলছে, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলি যদি গ্রাহক পরিষেবার সময় বাড়াতে পারে, তবে বিএসএনএল তা পারবে না কেন?
তুমুল প্রতিযোগিতার বাজারে আয় বাড়াতে সম্প্রতি কিছু নির্দিষ্ট ছুটির দিনে ও রবিবার দেশের সর্বত্র অফিস, গ্রাহক পরিষেবা ও বিল আদায় কেন্দ্র খোলা রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সংস্থাটি। অর্থবর্ষের একেবারে শেষে বৃহস্পতি ও শুক্রবার দু’দিন ছুটি পড়ায় তা-ও বাতিল করা হয়। ভবিষ্যতে রবিবারও গ্রাহক পরিষেবা কেন্দ্রগুলি খোলা রাখার কথা ভাবছেন কলকাতা ও পশ্চিমবঙ্গ সার্কল-এর কর্তারা।
বদলে অন্য দিন ছুটি মিললেও, আগে বিনা বাক্যে এই নির্দেশ মানা প্রায় ভাবাই যেত না বিএসএনএলে। সেখানে বামপন্থী কর্মী সংগঠন বিএসএনএল এমপ্লয়িজ ইউনিয়নের (বিইইউ) পশ্চিমবঙ্গ সার্কল-এর সম্পাদক অনিমেষ মিত্র বলেন, ‘‘দেওয়ালে পিঠ ঠেকেছে সংস্থার। সংস্থাই না থাকলে কর্মীরা কী করে বাঁচবেন? তাই কর্তৃপক্ষের আবেদনে আমরা সাড়া দিয়েছি। সংস্থার পক্ষে ক্ষতিকর সিদ্ধান্ত কর্তৃপক্ষ নিলে আন্দোলন নিশ্চয়ই হবে। কিন্তু সংস্থার স্বার্থ রক্ষায় আমরা একমত।’’ বিইইউয়ের কলকাতা সার্কল-এর সম্পাদক শিশির কুমার রায়ের দাবি, গ্রাহক পরিষেবা ও বিল আদায় কেন্দ্র বেশিক্ষণ খুলে রাখার প্রস্তাব তাঁরাও দিয়েছিলেন। তিনি বলেন, ‘‘রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলি যদি গ্রাহকদের জন্য বাড়তি সময় দরজা খুলে রাখতে পারে, তাহলে আমরা কেন পারব না? একই সুর টেলিকম এমপ্লয়িজ ইউনিয়ন-বিএসএনএলের সম্পাদক বিশ্বনাথ দত্তের কথায়। তিনি বলেন, ‘‘ইউনিয়ন চালুর সময় থেকেই আমরা ধর্মঘট-বন্ধের বিরোধী।’’ তবে বামপন্থী কর্মী ইউনিয়নকে কটাক্ষ করে তাঁর দাবি, ‘‘আরও আগে কর্মসংস্কৃতির গুরুত্ব বোঝা উচিত ছিল।’’
তবে কটাক্ষটুকু বাদ দিলে কিন্তু সংস্থার স্বার্থে কাজে আসা নিয়ে একমত বামপন্থী বিইইউ এবং তৃণমূল কংগ্রেস সমর্থিত টেলিকম এমপ্লয়িজ ইউনিয়ন-বিএসএনএল।
এমনিতে ইউনিয়নগুলির দাবি, কর্তৃপক্ষের কর্মী ও সংস্থার স্বার্থবিরোধী সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধেই তারা পথে নামতে বাধ্য হয়। কিন্তু অনেকেই মনে করাচ্ছেন, কর্মীস্বার্থ বিঘ্নিত না হওয়া সত্ত্বেও কর্মসংস্কৃতি উন্নতির অনেক সিদ্ধান্ত শেষে বাতিল হয়েছে স্রেফ ইউনিয়নের আপত্তিতে। যেমন বছর দশেক আগে কম্পিউটার নিয়ন্ত্রিত হাজিরা ব্যবস্থা বছর কয়েকের মধ্যেই তুলে দিতে বাধ্য হন কর্তৃপক্ষ।
সাধারণ ধর্মঘটে অনুপস্থিত থাকা কর্মীদের বেতন কেটে সাম্প্রতিককালে ইউনিয়নের কোপে পড়ে বদলি হতে হয় বিএসএনএলের পশ্চিমবঙ্গ সার্কল-এর এক সিজিএমকে। কথায় কথায় সিজিএম বা অন্য কর্তাদের ঘেরাও করায় পরিষেবার রক্ষণাবেক্ষণ ব্যাহত হওয়ার অভিযোগও নিত্য লেগে থাকত এ রাজ্যে। বাধা পেয়েছে প্রযুক্তিগত উন্নয়নের কাজও।
অনেকে বলছেন, এর মানে এই নয় যে, কালই সমস্ত সমস্যা উধাও হয়ে যাবে বিএসএনএল থেকে। কিংবা কর্মী বিক্ষোভের ঘটনা আর ঘটবে না। কিংবা কাজের দিনেও টিকি পাওয়া যাবে না কর্মীর। কিন্তু সব কিছুর পরেও ইউনিয়নের এই ‘বিলম্বিত বোধোদয়’কে আশার আলো বলেই মনে করছেন তাঁরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy