সাংবাদিক বৈঠকে আরবিআই গভর্নর। ছবি: পিটিআই
জমি এখনও পোক্ত ভাবে তৈরি হয়নি। তাই সুদের হার কমানোর পথে গেল না রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। মঙ্গলবার ঋণনীতির পর্যালোচনায় বসে সুদের হার অপরিবর্তিতই রাখল শীর্ষ ব্যাঙ্ক। তবে অবস্থার অবনতি না-হলে নতুন বছরে আগামী বার ঋণনীতি ফিরে দেখতে গিয়ে সুদের হার কমানোর কথা তারা ভাবতে পারে বলে এ দিন স্পষ্ট ইঙ্গিত দিয়েছেন গভর্নর রঘুরাম রাজন।
এতে অবশ্য অখুশি শেয়ার বাজার ও শিল্পমহল। সেই কারণেই রাজন ঋণনীতি ঘোষণার পরে পরেই পড়তে থাকে শেয়ার সূচক। এ দিন সেনসেক্স ১১৫.৬১ পয়েন্ট পড়ে থামে ২৮,৪৪৪.০১ অঙ্কে। শিল্পমহল রিজার্ভ ব্যাঙ্ককে সাধারণ ভাবে ‘একগুঁয়ে’ তকমা দিয়ে বলেছে, আর্থিক বৃদ্ধির হারকে টেনে তুলতে রাজন চাইলে সুদ কমানোর পথে হেঁটে একটু মানিয়ে চলতে পারতেন।
ঋণনীতির পর্যালোচনায় সুদের হারে কোনও হেরফের না-হওয়ায়, বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কগুলিকে ঋণ দেওয়ার সময়ে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক যে-হারে সুদ নেয়, সেই রেপো রেট আগের মতোই রাখা হল ৮ শতাংশে। রিজার্ভ ব্যাঙ্ক বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কগুলির কাছ থেকে ঋণ নেওয়ার সময়ে যে-হারে সুদ দেয়, সেই রিভার্স রেপো রেটও অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে। হাত দেওয়া হয়নি নগদ জমার অনুপাত (সিআরআর)-এও। ফলে বাধ্যতামূলক ভাবে আমানতের যে-অংশটা রিজার্ভ ব্যাঙ্কের কাছে ব্যাঙ্কগুলিকে জমা রাখতে হয়, সেই সিআরআর রাখা হয়েছে ৪ শতাংশে। বাধ্যতামূলক ভাবে সরকারি ঋণপত্রে বিনিয়োগের হারও (এসএলআর) পরিবর্তন করা হয়নি।
তা হলে সুদের হার কি কমবে না? রাজন যে-ইঙ্গিত দিয়েছেন তা হল, মূল্যবৃদ্ধি-সহ আর্থিক বাজারের বিভিন্ন মাপকাঠির অবস্থানের অবনতি না-হলে আগামী ঋণনীতিতে সুদ কমানোর রাস্তায় যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের। শুধু তাই নয়, অবস্থার সে-রকম উন্নতি হলে ঋণনীতির পর্যালোচনার আগেই এ ব্যাপারে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক পদক্ষেপ করতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞদের মধ্যে অনেকেই।
প্রবীণ ব্যাঙ্কিং বিশেষজ্ঞ এবং ইউকো ব্যাঙ্কের প্রাক্তন এগ্জিকিউটিভ ডিরেক্টর বি কে দত্ত বলেন, “বাজারে এই মুহূর্তে ঋণের চাহিদা সরাসরি না-বাড়লেও ‘পারচেজ ম্যানেজমেন্ট ইনডেক্স’ অর্থাৎ শিল্প সংস্থাগুলির কাঁচামাল কেনার সূচক বৃদ্ধি পেয়েছে। এর অর্থ, শিল্প সংস্থাগুলি পণ্য উৎপাদনের জন্য কাঁচামাল কেনা বাড়িয়েছে। এই অবস্থায় পণ্য উৎপাদনের খরচ যদি না-কমে তা হলে তাদের পক্ষে প্রতিযোগিতার বাজারে টিকে থাকা কঠিন হবে। তাই আমি মনে করি দীর্ঘমেয়াদি ঋণের ক্ষেত্রে সুদের হার কমানো জরুরি। বিষয়টি মাথায় রেখে সুদ পরিবর্তনের ব্যাপারে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক পদক্ষেপ করবে বলেই আমার বিশ্বাস।”
তবে এই মুহূর্তে সুদের হার না-কমিয়ে যে- রক্ষণশীল ভূমিকা রিজার্ভ ব্যাঙ্ক নিয়েছে, তাকে স্বাগতই জানিয়েছেন বিশেজ্ঞদের মধ্যে অনেকে। তাঁদের মতে, সুদের হার না-কমিয়ে দেশের আর্থিক অবস্থাকে স্থিতিশীল হতে সাহায্য করেছে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। ইউনাইটেড ব্যাঙ্কের প্রাক্তন চেয়ারম্যান ও ম্যানেজিং ডিরেক্টর ভাস্কর সেন বলেন, “এ বার ভাল বর্ষা হয়নি। রবি শস্যের ফলনের উপর তার কী রকম প্রভাব পড়ে, সেটা দেখা জরুরি। কেননা মূল্যবৃদ্ধির সূচক ওঠা-নামার ক্ষেত্রে খাদ্যশস্যের মূল্যের একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকে। আবার, মূল্যবৃদ্ধির উপর দেশের আর্থিক শ্রীবৃদ্ধির বিষয়টিও অনেকটাই নির্ভরশীল। আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম বেশ কিছুটা কমে যাওয়ার দৌলতে এই মুহূর্তে মূল্যবৃদ্ধির হার কিছুটা কমলেও তা কত দিন স্থায়ী হয়, তা আগে দেখে নিতে চান রাজন। তাঁর এই সাবধানী অবস্থানকে স্বাগত জানাচ্ছি।”
আর মাস তিনেকের মধ্যেই ২০১৫-’১৬ সালের বাজেট পেশ করবে কেন্দ্রীয় সরকার। তার আগে কি সুদের হার কমাবে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক? সেই সম্ভাবনার কথা একেবারে উড়িয়ে না-দিলেও, বি কে দত্তের মতো ব্যাঙ্কিং বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, “বাজেটে কেন্দ্রীয় সরকার বেশ কিছু লক্ষ্যমাত্রা স্থির করে। যেমন, রাজকোষ ঘাটতি, আর্থিক বৃদ্ধি, মূল্যবৃদ্ধির হার ইত্যাদি। রিজার্ভ ব্যাঙ্ক তার ঋণনীতি নির্ধারণ করার সময়ে ওই লক্ষ্যগুলি কতটা পূরণ হল, সে দিকটাও মাথায় রাখে। তাই বাজেট না-দেখে বড় মাপের কোনও সিদ্ধান্ত শীর্ষ ব্যাঙ্ক নেবে বলে মনে হয় না।” তবে বিশেষজ্ঞদের মধ্যে অধিকাংশেরই ধারণা, দেশের শিল্প বৃদ্ধিকে সহায়তা দেওয়ার উদ্দেশ্যে আগামী ঋণনীতির পর্যালোচনার সময়ে অথবা তার আগেও ২৫ বেসিস পয়েন্ট সুদের হার কমানোর সিদ্ধান্ত নিতে পারেন রঘুরাম রাজন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy