Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

দেউচা খনি প্রকল্প নিয়ে চুক্তিপত্রে সই অন্যান্য রাজ্যের

খনি থেকে কয়লা তোলার কাজ কবে শুরু হবে, তা এখনও ঠিক হয়নি। তবে বীরভূমের মহম্মদবাজার ব্লকের দেউচা-পাচামি খনি থেকে পশ্চিমবঙ্গ-সহ ছ’টি রাজ্য কয়লার ভাগ পাবে। তবে খনিটি যেহেতু এই রাজ্যে, তাই সব চেয়ে বেশি কয়লা পাবে পশ্চিমবঙ্গই। দেউচা-পাচামি খনি থেকে কী ভাবে কয়লা তোলা হবে, অংশীদার রাজ্যগুলি তার কত অংশ পাবে, তা ঠিক করতে সম্প্রতি দিল্লিতে বৈঠক হয়।

পিনাকী বন্দ্যোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০৩:০৮
Share: Save:

খনি থেকে কয়লা তোলার কাজ কবে শুরু হবে, তা এখনও ঠিক হয়নি। তবে বীরভূমের মহম্মদবাজার ব্লকের দেউচা-পাচামি খনি থেকে পশ্চিমবঙ্গ-সহ ছ’টি রাজ্য কয়লার ভাগ পাবে। তবে খনিটি যেহেতু এই রাজ্যে, তাই সব চেয়ে বেশি কয়লা পাবে পশ্চিমবঙ্গই।

দেউচা-পাচামি খনি থেকে কী ভাবে কয়লা তোলা হবে, অংশীদার রাজ্যগুলি তার কত অংশ পাবে, তা ঠিক করতে সম্প্রতি দিল্লিতে বৈঠক হয়। সেখানে সংশ্লিষ্ট রাজ্যগুলির মতামতের ভিত্তিতে একটি খসড়া চুক্তিপত্র তৈরি করা হয়েছে। রাজ্যের বিদ্যুৎসচিব গোপালকৃষ্ণ জানান, খসড়া চুক্তিতে সব রাজ্যই সই করেছে। আর তাতেই মনে করা হচ্ছে দেউচা খনি-প্রকল্পের কাজ আরও খানিকটা এগোল।

সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে রাজ্যের হাতে থাকা ছ’টি খনি থেকে কয়লা তোলার অধিকার বাতিল হয়েছে। আগামী ছ’মাস সেখান থেকে কয়লা মিললেও ভবিষ্যতে এর পরিণতি কী হবে, তা স্পষ্ট নয়। তবে বাতিলের তালিকায় দেউচা খনিটির নাম নেই। তাই বিদ্যুৎ কর্তারা আপাতত স্বস্তিতে। এক কর্তা জানান, এখান থেকে কয়লা যাওয়ার কথা কাটোয়ায় প্রস্তাবিত এনটিপিসি-র বিদ্যুৎ প্রকল্পে। রাজ্যের অন্যান্য বিদ্যুৎ কেন্দ্রও তা পাবে।

রাজ্যের এক বিদ্যুৎ কর্তা জানিয়েছেন, চুক্তিপত্র চূড়ান্ত হলে অংশীদার ছয় রাজ্যের প্রতিনিধিদের নিয়ে গড়া সংস্থা গ্লোবাল টেন্ডার ডেকে খনি থেকে কয়লা তোলার বরাত দেবে। সংস্থার রাশ কার হাতে থাকবে তা নিয়ে রাজ্যগুলির মধ্যে টানাপড়েন ছিল। কিন্তু প্রাথমিক ভাবে ঠিক হয়েছে, যৌথ সংস্থার পরিচালন ব্যবস্থা পশ্চিমবঙ্গই নিয়ন্ত্রণ করবে। সংস্থার চেয়ারম্যান হবেন রাজ্যের কোনও আমলা।

দেউচা খনি-প্রকল্পের কাজ শুরু করার জন্য ছয় রাজ্যের প্রতিনিধিদের নিয়ে মাঝে কয়েক বার বৈঠক হলেও বিভিন্ন বিষয়ে মতভেদ হচ্ছিল। কয়লার দাম কী ভাবে ধার্য হবে, কী ভাবে সংস্থা বাছাই হবে ইত্যাদি নিয়ে রাজ্যগুলির মধ্যে মতবিরোধ ছিল। ফলে প্রকল্পের কাজ আলোচনা স্তরেই থমকে যায়। বিদ্যুৎ কর্তারা মনে করছেন, এত দিনে রাজ্যগুলি সহমত হয়ে খসড়া চুক্তিতে সই করায় জটিলতা অনেকটাই কাটল। রাজ্যগুলি এ বার ওই চুক্তিপত্র নিজেদের মন্ত্রিসভায় অনুমোদন করাবে।

কেন্দ্রের সমীক্ষা অনুযায়ী, দেউচা ব্লকে কয়লা মজুত ভূগর্ভের ১০০-১৫০ মিটার নীচে। ভূপৃষ্ঠ থেকে কয়লার স্তরের আগে পর্যন্ত মজুত কালো পাথর। কিন্তু ওই কঠিন পাথর ভেঙে কয়লা বার করে আনার মতো অভিজ্ঞতা ও প্রযুক্তি দেশের কোনও সংস্থার সম্ভবত নেই। তাই বহুজাতিক সংস্থাকেই প্রকল্পের বরাত দেওয়া হবে বলে আপাতত ঠিক হয়েছে। সেই সংস্থার সহযোগী হিসাবে কাজ করবে পশ্চিমবঙ্গ খনিজ উন্নয়ন নিগম।

গত বছরই কেন্দ্র দেউচা খনিটি পশ্চিমবঙ্গকে দেয়। ওই সময়ই কয়লা মন্ত্রক জানিয়েছিল, সেখান থেকে বিহার, উত্তরপ্রদেশ, তামিলনাড়ু, কর্নাটক এবং পঞ্জাবও তাদের বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রগুলির জন্য কয়লা পাবে। তবে খনিটি পশ্চিমবঙ্গে হওয়ায় মোট কয়লার ২৮% পাবে এ রাজ্য। বিহারের বরাদ্দ ২৩%। বাকি কয়লা অন্য রাজ্যগুলির মধ্যে ভাগ করে দেওয়া হবে। দেউচা ব্লকে ২১০ কোটি ২০ লক্ষ টনের মতো কয়লা মজুত রয়েছে। বিদ্যুৎ কর্তাদের দাবি, দেউচা থেকে অন্য রাজ্যকে কয়লা দিলেও পশ্চিমবঙ্গের ভাগে যা থাকবে, তাতে আগামী ২৫-৩০ বছর এখানকার তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলির চলে যাবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

deucha birbhum pinaki bandyopadhyay
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE