মন্দা-বাজার ও দূষণের জোড়া কাঁটায় বানতলা তথ্যপ্রযুক্তি পার্কে বিনিয়োগ আটকে অনেক দিন। পরিস্থিতি আরও জটিল করে তার সঙ্গেই এ বার যোগ হল বাণিজ্য মন্ত্রকের হুঁশিয়ারি। সম্প্রতি মন্ত্রক জানিয়ে দিয়েছে, সেখানে দ্রুত প্রকল্প চালু না-করলে বিশেষ আর্থিক অঞ্চলের ( সেজ ) তকমার দৌলতে পাওয়া সুযোগ-সুবিধা হারাতে হতে পারে তাদের। এতে প্রমাদ গুনছে বানতলা তথ্যপ্রযুক্তি পার্কের নির্মাণ সংস্থাগুলি। কেন্দ্রের এই হুঁশিয়ারির মুখে কার্যত দিশেহারা তারা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে খবর, পূর্বাঞ্চলের ডেভেলপমেন্ট কমিশনার সঞ্জীব নন্দওয়ানি সম্প্রতি তাদের নির্দেশ দিয়েছেন, প্রকল্প দ্রুত শেষ করতে হবে। না-হলে হারাতে হবে সেজ হিসেবে পাওনা যাবতীয় সুযোগ-সুবিধা। সঞ্জীববাবু অবশ্য এ বিষয়ে কোনও প্রতিক্রিয়া জানাননি।
রাজ্যে উৎপাদন ও বড় শিল্পের মতো তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পেও নতুন বিনিয়োগ নেহাতই কম। লগ্নির এই খরায় বানতলা তথ্যপ্রযুক্তি পার্কের চাহিদাও তলানিতে। প্রকল্প বিপণন করতে বেরিয়ে ফাঁকাই থেকে যাচ্ছে নির্মাণ সংস্থাগুলির ঝুলি। ফলে তা শেষ করার পর তা রক্ষণাবেক্ষণের জন্য অনির্দিষ্টকাল ধরে বাড়তি টাকা গুনতে চাইছে না ওই সব সংস্থা।
আবার ১১০০ একরের বানতলা বিশেষ আর্থিক অঞ্চলের জন্মলগ্ন থেকেই তাড়া করে ফিরছে দূষণের ভূত। চর্মশিল্পের পাশেই ১২০ একরের তথ্যপ্রযুক্তি পার্ক। চর্মনগরীর বেহাল বর্জ্য ব্যবস্থা নিয়ে অভিযোগ উঠেছে বারবার। বছর তিনেক আগে সমাধান সূত্র হিসেবে বর্জ্য নিকাশি নালা আলাদা করে দেওয়া হয়। অর্থাত্ তথ্যপ্রযুক্তি শিল্প প্রকল্পে ঢুকে পড়বে না চর্মনগরীর বর্জ্য। কিন্তু তাতেও বিশেষ ফল হয়নি।
এই দূষণের কারণেই টেক মহীন্দ্রা প্রকল্প শেষ করতে পারেনি। কারণ তার কাজ চলাকালীন নির্মাণ কর্মীরা অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। পরে প্রকল্প চালুর আগ্রহ দেখালেও কাজ শুরু হয়নি এখনও। ধনসেরি ও ফোরাম প্রজেক্টস-এর বিশাল দু’টি বাড়িও প্রায় তৈরি। কিন্তু স্রেফ দূষণের জেরে বিপণন করা যাচ্ছে না। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের কারণে কোনও সংস্থা অফিস তৈরির জন্য এখানে জায়গা লিজ বা ভাড়ায় নিতে এগোচ্ছে না। আর এই অবস্থার মধ্যেই কেন্দ্রের সতর্ক বার্তা জারি হয়েছে বানতলা তথ্যপ্রযুক্তি পার্কের জন্য।
রাজ্যে এখন অফিস তৈরির জন্য জায়গার চাহিদা না-থাকার মতোই। বিশেষজ্ঞদের হিসেবে, গত বছর অফিস ও বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহারের জন্য মাত্র ১০ লক্ষ বর্গ ফুট জায়গার চাহিদা ছিল। এর মধ্যে তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পের ভাগ অনেকটাই। রিয়েল এস্টেট বিশেষজ্ঞ সংস্থা কুশম্যান অ্যান্ড ওয়েকফিল্ডের পূর্বাঞ্চলীয় প্রধান অভিজিৎ দাস জানান, চাহিদা কম। সরবরাহ বেশি। সেক্টর ফাইভেই এখনও অনেক ফাঁকা জায়গা পড়ে রয়েছে। সে ক্ষেত্রে বানতলার ব্যবসায়িক সম্ভাবনা যে ক্রমশ ক্ষীণ হচ্ছে, তা স্পষ্ট। তাই এ বার সেজের সুবিধাও হারালে প্রকল্পের বিপণন যে আরও অথৈ জলে পড়বে তা বিলক্ষণ বুঝছে বানতলা।
মূলত রাজ্যে জমি সমস্যার কারণেই তৈরি হয়েছিল বানতলার কলকাতা আই টি পার্ক। সেক্টর ফাইভ ও রাজারহাটে জমির অভাব। যেটুকু আছে, তারও দাম আকাশছোঁয়া। চাহিদা-জোগানের এই সমস্যার কিছুটা সমাধান করে বানতলা। ১৮টি সংস্থা জমি নেয় এখানে। বাজার দরেই জমি কেনে কগনিজ্যান্ট, টেক মহীন্দ্রা, আই-গেট পাটনির মতো সংস্থা। কিন্তু সেক্টর ফাইভ বা রাজারহাটের তুলনায় এখনও বানতলা ‘দুয়োরানি’ থেকে গিয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট মহলের ক্ষোভ।
সমস্যা সামাল দিতে বানতলার জন্য বিশেষ প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষ, ‘বানতলা ইন্ডাস্ট্রিয়াল টাউনশিপ অথরিটি’ তৈরির ভাবনা শুরু হয়েছে ২০০৯ সাল থেকেই। অনেকটা সল্টলেক সেক্টর ফাইভের নবদিগন্ত-র ধাঁচে। তবে পরিকল্পনা সত্ত্বেও রাস্তাঘাট, আলো, নিকাশি, জল, নিরাপত্তা, দূষণ ইত্যাদি পরিষেবার অভাব এখনও তো কাটেইনি। উপরন্তু বানতলাকে নতুন করে দুশ্চিন্তায় ফেলেছে বাণিজ্য মন্ত্রকের পরোয়ানা। এ বার সেজের তকমা বাঁচিয়ে ব্যবসার ইউএসপি ধরে রাখতে বানতলা তথ্যপ্রযুক্তি পার্ক দ্রুত প্রকল্প শেষ করতে পারে কিনা, তা বলবে সময়ই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy