মুকেশ অম্বানী,দীপক পারেখ ও অনিল অম্বানী
দিল্লির মসনদে কে বসতে পারে, তার একের পর এক পূর্বাভাস নিয়ে বহু দিন আগে থেকেই দেশ সরগরম। কিন্তু বাস্তব ছবিটা হল, যে-ই বসুক, ভোট-পরীক্ষার থেকে আরও বড় এক পরীক্ষা অপেক্ষা করে আছে তাঁর জন্য।
পণ্য পরিষেবা কর চালু থেকে শুরু করে দেশের আর্থিক বৃদ্ধিতে গতি আনার পথ প্রশস্ত করা। অনাদায়ী ঋণের চাপে জেরবার রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলির আর্থিক স্থিতি সামলানোর দায় এবং রাজকোষ ঘাটতি কমাতে প্রয়োজনে ভর্তুকিতে কোপ মারার অপ্রিয় সিদ্ধান্ত। আগামী ১৬ মে-র পর কেন্দ্রে যে দলই সরকার গড়ুক, তাদের সামনে সব থেকে বড় চ্যালেঞ্জ হবে আর্থিক সংস্কার আর অর্থনীতির চাকায় গতি ফেরানোর পূর্বশর্ত হিসেবে জড়িয়ে থাকা এমন সব গুগ্লি। গত এক দশকের সবচেয়ে গভীর আর্থিক সঙ্কট থেকে এ দেশের অর্থনীতিকে বার করে আনতে অবিলম্বে এই সব বিষয়ে পদক্ষেপ করতে হবে তাদের। এমনকী গোটা শিল্পমহলও এই মুহূর্তে সেই প্রত্যাশাতেই দিন গুনছে। এ দিন মুম্বইয়ে ভোটের বুথ থেকেও হাসি মুখে বেরোতে দেখা গিয়েছে মুকেশ ও অনিল অম্বানী, আদি গোদরেজ, দীপক পারেখ, ছন্দা কোছারের মতো শিল্পপতি ও শিল্পকর্তাদের। অনেকেই মনে করছেন, এঁরা ভোট যে দলকেই দিন না কেন, অর্থনীতির চাকা ঘোরাতে সক্ষম সরকারকেই দিল্লিতে দেখতে চান তাঁরা। চান এমন সরকার, যারা শিল্পের দীর্ঘ দিনের দাবিগুলিকে গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করবে।
যেমন, পণ্য পরিষেবা কর। এটি চালু করতে রাজনীতির বাধাতেই দীর্ঘ দিন হিমসিম খেয়েছে মনমোহন সরকার। অথচ পরোক্ষ করে সংস্কারে এটাই ছিল তাদের অন্যতম বাজি। অর্থনীতিতে গতি আনতে নয়া সরকারকে এই সমস্যা দ্রুত মেটাতে হবে।
একই রকম মাথাব্যথা মূল্যবৃদ্ধিও। পণ্য-সামগ্রীর চড়া দামের কারণেই সুদ কমাচ্ছে না রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। শিল্পের দাবি, সুদ না-কমলে লগ্নি-প্রক্রিয়া মন্থর হবে। আরও নামবে বৃদ্ধি। মূল্যবৃদ্ধি না-কমায় কংগ্রেস সরকার বার বার সুদ কমানোর সওয়াল করলেও তেমন লাভ হয়নি। এ বার দেখার পরবর্তী সরকার কী ভাবে সামলায় বিষয়টি।
চিন্তার আরও একটি বড় জায়গা ভর্তুকি। রাজকোষ ঘাটতি কমাতে অন্তত কিছু ক্ষেত্রে ভর্তুকি ছাঁটাই করতেই হবে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞেরা। তাঁরা দেখতে চান, রাজনীতির বাধ্যবাধকতাকে পাশে সরিয়ে নতুন সরকার অর্থনীতির সেই দাবি মানেন কিনা।
বড় পরীক্ষা বিমায় বিদেশি প্রত্যক্ষ বিনিয়োগের ঊর্ধ্বসীমা ২৬% থেকে বাড়িয়ে ৪৯% করার বিষয়টিও। ইউপিএ সরকার প্রথম থেকেই এই সংস্কারের পক্ষে লড়ে গিয়েছে। তবে বিভিন্ন সরকারি বিমা সংস্থা এবং রাজনৈতিক মহলের একাংশের বিরোধিতায় তা কার্যকর করতে পারেনি। দেশের শ্লথ হয়ে পড়া লগ্নি-পরিবেশকে চাঙ্গা করতেই এই দাওয়াই জরুরি বলে সওয়াল করেছে শিল্পমহল। দেশের প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রেও বিদেশি প্রত্যক্ষ লগ্নি বাড়ানোর পক্ষে তারা।
তালিকা অবশ্য এখানেই শেষ নয়। নতুন সরকারকে আরও যে সব বিষয়ে নজর দিতে হবে তার মধ্যে রয়েছে, শ্রম আইন সংস্কার। নিয়োগকর্তা, কর্মী ও ইউনিয়ন, সকলকে খুশি করে যা আনা এক বড়সড় চ্যালেঞ্জ। লক্ষ্য হওয়া উচিত, রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থায় সরকারের হাতে থাকা শেয়ারের একাংশ বেচে রাজস্ব বাড়ানো। যাতে রাজকোষ ঘাটতি কমানো যায়। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলির অনাদায়ী ঋণের চাপ কমাতে আরও সক্রিয় হওয়া। কয়লা ক্ষেত্রের সংস্কার। দেশের অভ্যন্তরে এই জ্বালানি ভাণ্ডারের অফুরন্ত সম্ভারের সঠিক ব্যবহার। বিশেষত তাতে দুর্নীতি রোখা। দেশের প্রতিটি কোণায় নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সংযোগ নিশ্চিত করাও নতুন সরকারের চ্যালেঞ্জ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy