অর্থনীতিতে ফের অশনি সঙ্কেত। সোমবার প্রকাশিত সরকারি পরিসংখ্যান অনুসারে আটটি মূল পরিকাঠামো শিল্পে ডিসেম্বরে উৎপাদন বেড়েছে মাত্র ২.৪%, যা গত তিন মাসে সবচেয়ে কম। নভেম্বরে তা ছিল অনেকটাই বেশি, ৬.৭%। গত ২০১৩ সালের ডিসেম্বরের হার ৪%।
পরিকাঠামো শিল্পে পিছিয়ে পড়ার প্রভাব সাধারণ ভাবে শিল্পোৎপাদন বৃদ্ধির উপর পড়বে বলেই আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের। তার কারণ, সার্বিক শিল্প বৃদ্ধির হার হিসাবের ক্ষেত্রে পরিকাঠামোর গুরুত্ব ৩৮ শতাংশ। রিজার্ভ ব্যাঙ্কও তার ঋণনীতি তৈরিতে পরিকাঠামো শিল্পকে গুরুত্ব দেয়। এই পরিপ্রেক্ষিতে শিল্পোৎপাদনকে টেনে তুলতে শীর্ষ ব্যাঙ্কের কাছে ফের সুদ কমানোর জোরালো দাবি জানিয়েছে শিল্পমহল। আগামী কালই রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর রঘুরাম রাজন তাঁর ঋণনীতি ফিরে দেখবেন।
সাধারণ ভাবে শিল্পোৎপাদন নিয়ে আশঙ্কায় আরও ইন্ধন জুগিয়েছে এ দিনই প্রকাশিত এইচএসবিসি-র সমীক্ষা। কল-কারখানায় উৎপাদন নিয়ে এইচএসবিসি-র জন্য আর্থিক পরিষেবা সংস্থা ‘মার্কিট’ এর সমীক্ষা অনুসারে জানুয়ারিতে তাদের সূচক ‘পার্চেজিং ম্যানেজার্স ইনডেক্স’ বা পিএমআই-ও নেমে এসেছে গত তিন মাসের মধ্যে সবচেয়ে নীচে। ডিসেম্বরের ৫৪.৫ থেকে তা দাঁড়িয়েছে ৫২.৯ অঙ্কে। প্রসঙ্গত, কারখানার নতুন বরাত, জমা থাকা মালপত্র, উৎপাদন, সরবরাহকারীদের কাছে পণ্যের জোগান ও কর্মসংস্থানের পরিবেশ এই পাঁচটি মাপকাঠির উপর ভিত্তি করেই তৈরি পিএমআই। আলাদা করে নতুন বরাতের সূচকও ডিসেম্বরের ৫৭.৯-এর তুলনায় জানুয়ারিতে কমে হয়েছে ৫৪.৪। ভারতের জন্য এইচএসবিসি-র মুখ্য অর্থনীতিবিদ প্রাঞ্জল ভাণ্ডারী জানিয়েছেন, “কল-কারখানার উৎপাদন জানুয়ারিতে বেড়েছে ঠিকই। তবে তা ঢিমেতালে।” তবে ২০১৫-র সূচনায় কল-কারখানার উৎপাদন বাড়ার প্রবণতাই বজায় থাকবে বলে আশাবাদী এইচএসবিসি। ভাণ্ডারী জানান, এ নিয়ে গত ১৫ মাস ধরে একই সঙ্গে বাড়ছে উৎপাদন ও নতুন বরাত, যা এসেছে দেশ ও বিদেশের সংস্থার কাছ থেকে। পাশাপাশি, নতুন বরাত সবচেয়ে বেশি এসেছে ভোগ্যপণ্যে। এটাও ক্রয়ক্ষমতা বাড়ার ইঙ্গিত দিচ্ছে বলে শিল্পমহলের ধারণা। প্রসঙ্গত, এই পিএমআই সূচক ৫০-এর উপরে থাকলেই উৎপাদন বাড়ার ইঙ্গিত দেয়। তার নীচে নামলে বোঝায় উৎপাদন সঙ্কুচিত হয়েছে।
এ দিন যে-আটটি পরিকাঠামো শিল্পের উৎপাদনের হার প্রকাশিত রয়েছে, সেই তালিকায় রয়েছে: কয়লা, অশোধিত তেল, প্রাকৃতিক গ্যাস, শোধনাগারে তৈরি পণ্য, সার, ইস্পাত, সিমেন্ট ও বিদ্যুৎ। এর মধ্যে ডিসেম্বরে অশোধিত তেল উৎপাদন সরাসরি কমেছে ১.৪ শতাংশ, প্রাকৃতিক গ্যাস ৩.৫ শতাংশ, সার ১.৬ শতাংশ, ইস্পাত ২.৪ শতাংশ। তবে কয়লা উৎপাদন বেড়েছে ৭.৫ শতাংশ, শোধনাগারের পণ্য ৬.১ শতাংশ, সিমেন্ট ৩.৮ শতাংশ। বিদ্যুৎ উৎপাদন ৩.৭ শতাংশ হারে বাড়লেও তা আগের বছরের ৭.৬ শতাংশের তুলনায় অর্ধেকেরও বেশি কমেছে।
এপ্রিল থেকে ডিসেম্বর, এই ন’মাসের হিসাব ধরলে এই আটটি পরিকাঠামো শিল্পে বৃদ্ধির হার ডিসেম্বরে ছুঁয়েছে ৪.৪ শতাংশ। গত বছর একই সময়ে তা ছিল ৪.১ শতাংশ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy