Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

মোদীতে মজে বাজার, অপেক্ষা বাজেটের

মোদী মসনদে বসার আগেই বাজার তুঙ্গে। লগ্নিকারীদের আশা ‘ষোলো আনা পূর্ণ’ হওয়ায় সেনসেক্স ছাপিয়ে গিয়েছে ২৫ হাজারের মাত্রা। উঠেছে সর্বকালীন রেকর্ড উচ্চতায়। শুক্রবার সকাল ৯.৩৬ ছিল মাহেন্দ্রক্ষণ, যখন প্রথম বারের জন্য মুম্বই সূচক অনায়াসে ২৫ হাজারের বাধা পেরোয়। ঠিক ২৬ মিনিট পর অর্থাৎ ১০টা বেজে ২ মিনিটে সেনসেক্স ছোঁয় ২৫,৩৭৫.৬৩ অঙ্ক, যা এই সূচকের সর্বকালীন উচ্চতা।

অমিতাভ গুহ সরকার
শেষ আপডেট: ১৯ মে ২০১৪ ০২:২৫
Share: Save:

মোদী মসনদে বসার আগেই বাজার তুঙ্গে। লগ্নিকারীদের আশা ‘ষোলো আনা পূর্ণ’ হওয়ায় সেনসেক্স ছাপিয়ে গিয়েছে ২৫ হাজারের মাত্রা। উঠেছে সর্বকালীন রেকর্ড উচ্চতায়।

শুক্রবার সকাল ৯.৩৬ ছিল মাহেন্দ্রক্ষণ, যখন প্রথম বারের জন্য মুম্বই সূচক অনায়াসে ২৫ হাজারের বাধা পেরোয়। ঠিক ২৬ মিনিট পর অর্থাৎ ১০টা বেজে ২ মিনিটে সেনসেক্স ছোঁয় ২৫,৩৭৫.৬৩ অঙ্ক, যা এই সূচকের সর্বকালীন উচ্চতা। আগের দিনের তুলনায় ১,৪৭০ পয়েন্ট বেশি। তবে এই উত্থান স্থায়ী হয়নি। অতি অল্প সময়ের মধ্যেই ফেটেছে এই উত্তেজনার বুদ্বুদ। বিজেপি সরকার গড়বে, এই আশায় বাজার যথেষ্টই উপরে উঠেছিল আগের কয়েক দিনে। সেই কারণে আশা পূর্ণ হওয়ায় বাজারের এতটা বেড়ে ওঠার তেমন জোরালো কোনও কারণ ছিল না। ফলে উত্তেজনার রেশ কাটতেই হুড়মুড়িয়ে নামে শেয়ার সূচক। এমনকী, সবুজ ছেড়ে এক সময়ে লালের ঘরেও ঢুকে পড়ে। দিনের শেষে অবশ্য ২১৬ পয়েন্ট বেড়ে সেনসেক্স থামে ২৪,১২২ অঙ্কে। ৮০ অঙ্ক বেড়ে নিফ্টি বন্ধ হয় ৭,২০৩ পয়েন্টে। অতি তৎপর লগ্নিকারীরা ক্ষণিকের এই উত্থানকে কাজে লাগিয়ে মোটা মুনাফা করেছেন। তবে হতচকিত বেশির ভাগ মানুষই সুযোগকে কাজে লাগাতে পারেননি।

এতে অবশ্য হতাশ হওয়ার কারণ নেই। সূচকের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে বিশেষজ্ঞদের বেশির ভাগই অত্যন্ত আশাবাদী। ১৯৮৪ সালের পর এই প্রথম কোনও একটি দল নিজের জোরেই শক্তিশালী ও স্থায়ী সরকার গড়তে চলেছে, এই কথা মাথায় রেখে ডয়েশ ব্যাঙ্ক এরই মধ্যে আশা প্রকাশ করেছে যে, আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে সেনসেক্স পৌঁছে যেতে পারে ২৮,০০০ অঙ্কে। সপ্তাহের শেষে অনেক বিশ্লেষণ হবে নতুন সরকার ও দেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে। সোমবার যার প্রতিফলন দেখা যাবে শেয়ার বাজারে। কিছু বিশেষজ্ঞর ধারণা, নতুন ‘বুল্’ বাজারের সূচনা হল নয়া সরকারকে কেন্দ্র করে। এ বার ছোট লগ্নিকারীদের মনে আস্থা ফিরবে। এঁরা বাজারে বড় মাত্রায় যোগদান করলে সূচক আরও উপরে উঠতে পারে বলে মনে করছেন তাঁরা।

বাজারের এত খুশির কারণ হল

• শ্লথ এবং বড় আকারের একাধিক দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত নড়বড়ে ইউপিএ সরকারের বিদায়।

• নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠ সরকার।

• থমকে থাকা আর্থিক সংস্কারের গতি পাওয়ার সম্ভাবনা।

• শিল্পে প্রাণ ফেরার আশা।

• বিদেশি লগ্নি বৃদ্ধির সম্ভাবনা।

• সরকারি সংস্থায় বিলগ্নিকরণ গতি পাওয়ার সম্ভাবনা।

তবে মোদী ম্যাজিক যত দ্রুত বাজারকে তুলেছে, ততটাই দ্রুত গতিতে ভারতের অর্থনীতিকে চাঙ্গা করবে কিনা, সে সম্পর্কে কিন্তু যথেষ্ট সংশয় আছে। মনে রাখতে হবে, গুজরাত এবং ভারত এক নয়। দেশের সমস্যা নানাবিধ। বাজারকে চাঙ্গা রাখতে হলে বিদেশি লগ্নি ধরে রাখতে হবে। এ জন্য প্রয়োজন অবিলম্বে অর্থনীতির হাল ফেরানো। বিদেশি লগ্নিকারীরা চাইবে, কার্যভার গ্রহণ করেই সরকার সংস্কারের পথে নামুক। কমিয়ে আনুক ভর্তুকি। শুরু হোক বিলগ্নিকরণ। দৃঢ় পদক্ষেপ করা হোক মূল্যবৃদ্ধি কমানোর জন্য।

সরকার এই সব ব্যাপারে কী ভাবে এগোবে, তার স্পষ্ট ইঙ্গিত পাওয়া যাবে তাদের প্রথম পূর্ণাঙ্গে বাজেটে। অর্থ দফতর কার হাতে দেওয়া হয়, সে দিকেও নজর থাকবে। এল নিনো-সহ কিছু ব্যাপারে আশঙ্কা থাকায় মাঝেমধ্যে সূচক পড়তেও পারে। এমনিতে এত উঁচু বাজারে বিক্রির একটা চাপ থাকবেই। থাকবে আন্তর্জাতিক বাজারের প্রভাব। অর্থাৎ চাঙ্গা ভাব বজায় থাকলেও, এই জায়গা থেকে বাজার একনাগাড়ে উঠবে বলে মনে হয় না। শিল্প এবং অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে মোদী সরকার কী কী পদক্ষেপ করে, তা-ই মাঝারি মেয়াদে বাজারকে দিশা দেখাবে। কার্যভার গ্রহণের পক্ষে সময়টা খুব খারাপ নয়। প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী চিদম্বরমের কিছু পদক্ষেপের সুফল সবে ফলতে শুরু করেছে। রফতানি বেড়েছে। কমছে আমদানি। ‘ব্রিকস’ দেশগুলির মধ্যে ভারত ফের উপরের দিকে উঠে এসেছে। বিদেশি লগ্নি বাড়ায় কমেছে ডলারের দর। ফলে কমবে আমদানির খরচ।

বাজেট পেশ না হওয়া পর্যন্ত নতুন লগ্নির ক্ষেত্রে একটু সাবধানে পা ফেলতে হবে সকলকে। যে সব শিল্পকে সরকার বেশি গুরুত্ব দেবে বলে মনে করা হচ্ছে, তার মধ্যে থাকবে পরিকাঠামো, ব্যাঙ্কিং, তেল-গ্যাস, রেল, বন্দর ইত্যাদি। এরই মধ্যে সুপারিশ এসেছে ব্যাঙ্কিং শিল্পে বিলগ্নিকরণের জন্য। এর প্রভাবে হঠাৎই অনেকটা বেড়েছে প্রায় সব রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক শেয়ারের দাম। ডলারের দাম অনেকটা কমায় উপকৃত হবে আমদানি-নির্ভর বিভিন্ন শিল্প। একই কারণে নামছে সোনার দামও।

বাজেট থেকে শিল্প যেমন নতুন কিছু আশা করছে, তেমনই আশা করছে সাধারণ মানুষ। করমুক্ত আয়ের সীমা বাড়ানো নিয়ে অতীতে অনেক কথা বলেছে ভারতীয় জনতা দল। ক্ষমতা হাতে আসায় এ বার তারা কী করে, তা দেখার জন্য আগ্রহী সকলে। মাঝেমধ্যে ছোটখাটো সংশোধন ছাড়া বাজার স্বল্প মেয়াদে চাঙ্গা থাকবে বলেই মনে করা হচ্ছে। তবে মূল্যবৃদ্ধি উঁচুতে থাকায় আশু সুদ কমার সম্ভাবনা কেউ দেখছেন না। নতুন সরকারের অধীনে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক সুদ নিয়ে কী পদক্ষেপ করে, তা দেখার জন্য অপেক্ষা করবে ঋণের বাজার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

modi market amitabha guha sarkar
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE