নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গ-সহ পূর্বাঞ্চলে এমপ্লয়িজ প্রভিডেন্ট ফান্ডে (ইপিএফ) ৫৫০ কোটি টাকা জমা দেয়নি বিভিন্ন সংস্থা। ওই বকেয়ার পাশাপাশি পিএফ ফাঁকির প্রবণতাও এখানে যথেষ্ট। দেশের অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় বেশ কম ইপিএফের সদস্য সংখ্যাও। সোমবার কলকাতায় বণিকসভা ইন্ডিয়ান চেম্বার অব কমার্স আয়োজিত এক সভায় এই অভিযোগ তুললেন কেন্দ্রের অতিরিক্ত (অ্যাডিশনাল) প্রভিডেন্ট ফান্ড কমিশনার ভি বিজয়কুমার।
একই সঙ্গে তিনি জানান, অবসরের পর ইপিএফ সদস্যদের যে অন্তত হাজার টাকা পেনশন দেওয়ার কথা ঠিক হয়েছে, তা কার্যকর হবে কেন্দ্রে নতুন সরকার আসার পর। মাসে ১৫ হাজার টাকা পর্যন্ত বেতন পাওয়া কর্মীদের পিএফের আওতায় আনার প্রস্তাবও কার্যকর করা হবে ওই সময়ই। উল্লেখ্য, দু’একটি নির্দিষ্ট শিল্প ছাড়া বাকি সবখানেই এখন ৬,৫০০ টাকা বেতন (মূল বেতন ও মহার্ঘ ভাতা মিলিয়ে) পর্যন্ত ইপিএফের সুবিধার আওতায় পড়েন কর্মীরা। ফলে তার বেশি বেতনের কর্মীদের পিএফ দেওয়ায় সংস্থা কর্তৃপক্ষের কোনও বাধ্যবাধকতা নেই। কিন্তু নতুন প্রস্তাব কার্যকর হলে, যে সমস্ত কর্মী ১৫ হাজার টাকা পর্যন্ত বেতন পাবেন, তাঁদের সকলকেই ইপিএফ প্রকল্পের আওতায় আনা বাধ্যতামূলক হবে।
এ ছাড়া, ইপিএফের সঙ্গে যুক্ত বিমা প্রকল্পে (এমপ্লয়িজ ডিপোজিট লিঙ্কড ইনশিওরেন্স স্কিম) ২০% বোনাস দেওয়ার প্রস্তাব কার্যকর করার বিষয়টিও কেন্দ্রে পরবর্তী সরকার আসার অপেক্ষায় রয়েছে বলে জানিয়েছেন বিজয়কুমার। তাঁর দাবি, “এই তিনটি প্রস্তাবই পিএফের অছি পরিষদ এবং পরিচালন পর্ষদে ইতিমধ্যেই অনুমোদিত হয়েছে।”
এমপ্লয়িজ প্রভিডেন্ট ফান্ড নিয়ে পশ্চিমবঙ্গ-সহ পূর্বাঞ্চলের কথা বলতে গিয়ে তাঁর অভিযোগ, “২০০০ সাল থেকে ইপিএফের টাকা ঠিক সময়ে জমা দেওয়ার বিষয়টি সংস্থার মালিকদের সদিচ্ছার উপরই ছেড়ে দিয়েছিলাম আমরা। আশা ছিল, তাঁরা নিজেরাই সময়ে টাকা জমা দিতে উদ্যোগী হবেন। কিন্তু এ বিষয়ে আমাদের অভিজ্ঞতা তিক্ত। ইতিমধ্যেই পশ্চিমবঙ্গ-সহ পূর্বাঞ্চলে এই খাতে বিভিন্ন সংস্থার বকেয়ার অঙ্ক দাঁড়িয়েছে ৫৫০ কোটি টাকা।” তাই এ বার থেকে ওই টাকা যাতে ঠিক সময়ে জমা পড়ে, সেই বিষয়টি নিশ্চিত করতে কড়া পদক্ষেপ করা হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
আর পিএফ ফাঁকি সম্পর্কে কেন্দ্রীয় সরকারি কর্তাটি বলেন, “যে সমস্ত শিল্পে ইপিএফের টাকা ফাঁকির প্রবণতা বেশি, তার মধ্যে অন্যতম হল চটকল। সেখানে বহু কর্মী পিএফের আওতায় আসার যোগ্য হওয়া সত্ত্বেও, তাঁদের আনা হয়নি। একই ভাবে বহু ‘যোগ্য’ কর্মী বঞ্চিত হচ্ছেন নির্মাণ এবং বিড়ি শিল্পেও। এঁদের ইপিএফের আওতায় আনতে কঠোর পদক্ষেপ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।” তাঁর অভিযোগ, “সম্প্রতি শ্রম বিষয়ক সংসদীয় কমিটি জানিয়েছে যে, শুধুমাত্র পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন চটকলেই এ রকম ৩২ হাজার কর্মী রয়েছেন, যাঁরা ইপিএফের আওতায় আসার যোগ্য। কিন্তু তাঁদের ওই আওতায় আনা হয়নি। এ ছাড়া, বিড়ি শিল্পেও এ রকম ৬০ হাজার কর্মী থাকার কথা সমীক্ষায় দেখেছি আমরা।”
শুধু তা-ই নয়। এ রাজ্য-সহ পূর্বাঞ্চলে ইপিএফের সদস্য সংখ্যাও দেশের অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় প্রায় ২০ লক্ষ কম। অন্য অঞ্চলগুলিতে যেখানে নিদেন পক্ষে এক কোটি সদস্য রয়েছেন, সেখানে পূর্বাঞ্চলে তার সংখ্যা ৮০ লক্ষ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy