Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
তৈরি হল পরিবেশ ছাড়পত্রের জন্য জরুরি মানচিত্র

রসুলপুর বন্দর নিয়ে আশার আলো

রাজ্যের ধূসর বন্দর মানচিত্রে নতুন রং লাগার সম্ভাবনা। আশার আলো রসুলপুরে প্রস্তাবিত গভীর সমুদ্র বন্দর প্রকল্পকে ঘিরে। কারণ, ওই প্রকল্প নির্মাণের জন্য জরুরি ‘কোস্টাল রেগুলেশন জোন ম্যাপ’ অবশেষে তৈরি হল। সংশ্লিষ্ট সূত্রে খবর, বন্দরটি গড়তে ছাড়পত্র পাওয়ার অন্যতম শর্তই পূরণ হচ্ছিল না ওই মানচিত্রের অভাবে।

গার্গী গুহঠাকুরতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২২ মার্চ ২০১৪ ০৩:১৮
Share: Save:

রসুলপুর বন্দর নিয়ে আশার আলো রাজ্যের ধূসর বন্দর মানচিত্রে নতুন রং লাগার সম্ভাবনা। আশার আলো রসুলপুরে প্রস্তাবিত গভীর সমুদ্র বন্দর প্রকল্পকে ঘিরে। কারণ, ওই প্রকল্প নির্মাণের জন্য জরুরি ‘কোস্টাল রেগুলেশন জোন ম্যাপ’ অবশেষে তৈরি হল। সংশ্লিষ্ট সূত্রে খবর, বন্দরটি গড়তে ছাড়পত্র পাওয়ার অন্যতম শর্তই পূরণ হচ্ছিল না ওই মানচিত্রের অভাবে। তাই এ বার সেই বাধা দূর হওয়ায় লোকসভা ভোটের পর বন্দর তৈরি নিয়ে রাজ্যের সঙ্গে চুক্তি হওয়ার বিষয়ে আশাবাদী আগ্রহী সংস্থা আম্মা লাইন্স।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে খবর, এই মানচিত্র তৈরি করেছে রাজ্যের পরিবেশ দফতরের অধীনস্থ ইনস্টিটিউট অব এনভায়রনমেন্ট স্টাডিজ অ্যান্ড ওয়েটল্যান্ড ম্যানেজমেন্ট। এই মানচিত্রের প্রধান কাজ, জোয়ারে সবচেয়ে উঁচু জল কোথায় ওঠে (হাই টাইড লাইন) এবং ভাটায় সব থেকে নীচে জল কোথায় নামে (লো টাইড লাইন), তা চিহ্নিত করা। দেখা যে, ম্যানগ্রোভের বনের মতো পরিবেশের জন্য জরুরি কিছু যাতে নির্মাণের দরুন নষ্ট না হয়। কোথায় নির্মাণ কাজ করা যাবে বা যাবে-না, তা-ও ঠিক হয় মূলত এই মানচিত্র অনুযায়ী। যেমন, জোয়ারে সবচেয়ে উঁচু জল যেখানে ওঠে, তার ২০০ মিটারের মধ্যে কোনও নির্মাণ কাজ বেআইনি। আর এই সমস্ত কারণেই উপকূলবর্তী এলাকায় কোনও নির্মাণের জন্য চূড়ান্ত পরিবেশ-ছাড়পত্র পাওয়ার অন্যতম শর্ত কোস্টাল রেগুলেশন জোন ম্যাপ।

পূর্ব মেদিনীপুরের রসুলপুরের কাছে বিছুনিয়ায় এই বন্দর গড়তে আগ্রহী মেকা গোষ্ঠীর শাখা সংস্থা আম্মা লাইন্স। তাদের দাবি, এই মানচিত্রের ভিত্তিতেই কেন্দ্র ও রাজ্য, দুই সরকারের কাছ থেকেই পরিবেশ সংক্রান্ত ছাড়পত্র পাওয়ার কথা। ওই অনুমোদন পেতে আবার কলকাতা বন্দর কর্তৃপক্ষের কাছ থেকেও পরিবেশ সংক্রান্ত কিছু তথ্য পাওয়া জরুরি। এ নিয়ে বন্দর কর্তৃপক্ষকে ইতিমধ্যেই চিঠি দিয়ে সেই অনুরোধ জানিয়েছে রাজ্য। ফলে সব মিলিয়ে সংস্থার আশা, সব ঠিকঠাক চললে লোকসভা ভোটের পরই বন্দর গড়ার জন্য রাজ্য সরকারের সঙ্গে চুক্তি সই হতে পারে। তবে নির্বাচন বিধি ভঙ্গের আশঙ্কায় এ বিষয়ে এখন মুখ খুলতে নারাজ শিল্প দফতর।

রসুলপুরে বন্দর গড়তে ২০০৭ সালে তৎকালীন বাম সরকারের কাছে আগ্রহপত্র জমা দেয় আম্মা লাইন্স। ২০০৮ সালে প্রকল্প এগিয়ে নিয়ে যেতে রাজ্যকে সবুজ সংকেত দেয় কেন্দ্রও। এর পর ২০১০ সালে সংস্থার হাতে লেটার অফ ইনটেন্ট তুলে দেয় রাজ্য। তাতে পরিবেশ সংক্রান্ত ছাড়পত্র পাওয়া থেকে শুরু করে প্রকল্পের বিস্তারিত পরিকল্পনা ও খরচ জানানোর দায় চাপে সংস্থার উপরই। সেই অনুযায়ী ২০১০ সালের অগস্টে রাজ্য শিল্পোন্নয়ন নিগমের কাছে খসড়া চুক্তিপত্র পাঠায় আম্মা লাইন্স। কিন্তু তার শর্ত নিয়ে চাপানউতোরের কারণে চুক্তি সই হয়নি। এর পর বিধানসভা ভোট এসে পড়ায় বিষয়টি ধামাচাপা পড়ে যায়।

একই সঙ্গে প্রকল্পের পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায় পরিবেশ সংক্রান্ত বিধি-নিষেধও। ২০১০ সালের জানুয়ারিতে হলদিয়ায় শিল্প প্রকল্প অনুমোদনের ক্ষেত্রে পরিবেশ নিয়ে কেন্দ্রীয় নিষেধাজ্ঞা চালু হয়। আটকে যায় রসুলপুরের ছাড়পত্র। ২০১৩-এর সেপ্টেম্বরে নিষেধাজ্ঞা ওঠে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে খবর, এর পর গত নভেম্বরে কেন্দ্রীয় পরিবেশ মন্ত্রকের বিশেষজ্ঞ কমিটির সামনে যাবতীয় প্রশ্নের উত্তর দেন আম্মা লাইন্সের প্রতিনিধিরা। সংস্থার দাবি, সেই ব্যাখ্যায় সন্তুষ্ট হয়ে প্রাথমিক সবুজ সঙ্কেত ডিসেম্বরেই দিয়েছে কমিটি।

সংস্থা সূত্রে খবর, এর পরেও মানচিত্র না-থাকায় পরবর্তী ধাপের কাজ আটকে যায়। যথেষ্ট সংখ্যক কর্মী না-থাকায় প্রাথমিক ভাবে পিছিয়ে গিয়েছিল ইনস্টিটিউট অব এনভায়রনমেন্ট স্টাডিজ অ্যান্ড ওয়েটল্যান্ড ম্যানেজমেন্ট-ও।

এরই মধ্যে আবার ছ’হাজার কোটি টাকার এই প্রকল্পের কাজে দেরির অভিযোগে আম্মা লাইন্সকে কারণ দর্শানোর (শো-কজ) নোটিশ পাঠায় রাজ্য। সংস্থা অবশ্য পাল্টা দাবি করে, শো-কজের চিঠিতে উল্লিখিত পদক্ষেপ রাজ্য করলে, আইনি পথে এগোবে তারাও। এ প্রসঙ্গে সংস্থার অন্যতম কর্তা হেমন্ত মেকা রাও ই-মেলে জানান, নন্দীগ্রাম ঘটনার পরে রাজনৈতিক অস্থিরতা ও চাপের কারণে ওই এলাকায় কাজ করা যায়নি। তাই সেই দায় সংস্থার ঘাড়ে চাপানো অন্যায় বলে অভিযোগ করেন তিনি। এখন অবশ্য ভোটের পর রাজ্যের সঙ্গে চুক্তির বিষয়ে আশাবাদী তাঁরা।

বন্দর পরিকাঠামো গড়ায় দক্ষ আম্মা লাইন্সের দাবি, যে প্রযুক্তিতে বন্দরের চ্যানেল তৈরির পরিকল্পনা করা হয়েছে, তার পেটেন্ট রয়েছে তাদের। এর আগে একই ধরনের প্রযুক্তি ব্যবহার করে মহারাষ্ট্রে মুকেশ অম্বানীদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে রেওয়াস বন্দর গড়েছে তারা। রেওয়াসে নাব্যতা যেখানে ১৬ মিটার, রসুলপুরে তা দাঁড়াবে ১৮ মিটার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

gargi guhathakurata rasulpur port amma lines
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE