Advertisement
E-Paper

সেনসেক্সের দৌড়ে বাজারের ছবি স্পষ্ট কি না, প্রশ্ন তা নিয়েই

সাড়ে ২২ হাজার ছাড়িয়ে ২৩ হাজারের দিকে দৌড়চ্ছে সেনসেক্স। অথচ অনেক লগ্নিকারীর হাতেই যে শেয়ার রয়েছে, তার দামে বলার মতো কোনও হেলদোল নেই!বম্বে স্টক এক্সচেঞ্জের (বিএসই) সব থেকে পরিচিত সূচক সেনসেক্স একের পর এক রেকর্ড চুরমার করে এখন সর্বকালীন উচ্চতায়। বৃহস্পতিবারও তা ১২.৯৯ পয়েন্ট বেড়ে পৌঁছেছে ২২,৭১৫.৩৩ অঙ্কে। অথচ তার মধ্যেও বাজারের সিংহভাগ শেয়ারের ওই মিইয়ে থাকা হাল প্রশ্ন তুলে দিয়েছে সেনসেক্সের সর্বজনীনতা নিয়ে। পরিসংখ্যান বলছে, তার এই রেকর্ড-ভাঙা দৌড়ে সামিল হয়নি সিংহভাগ শেয়ারই। বরং বম্বে স্টক এক্সচেঞ্জে নথিভুক্ত ৪,০০০ এবং ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জের (এনএসই) ২,০০০ শেয়ারের অধিকাংশের দরই গত ছ’বছরে কমেছে। তাই স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠেছে, বাজারের সত্যিকারের ছবির প্রতিফলন কি আদৌ দেখা যায় সেনসেক্সে? সূচকটির এই চুড়োয় অবস্থান কি আদৌ বাজারের বর্তমান হালের আয়না?

প্রজ্ঞানন্দ চৌধুরী

শেষ আপডেট: ১১ এপ্রিল ২০১৪ ০২:২৮

সাড়ে ২২ হাজার ছাড়িয়ে ২৩ হাজারের দিকে দৌড়চ্ছে সেনসেক্স। অথচ অনেক লগ্নিকারীর হাতেই যে শেয়ার রয়েছে, তার দামে বলার মতো কোনও হেলদোল নেই!

বম্বে স্টক এক্সচেঞ্জের (বিএসই) সব থেকে পরিচিত সূচক সেনসেক্স একের পর এক রেকর্ড চুরমার করে এখন সর্বকালীন উচ্চতায়। বৃহস্পতিবারও তা ১২.৯৯ পয়েন্ট বেড়ে পৌঁছেছে ২২,৭১৫.৩৩ অঙ্কে। অথচ তার মধ্যেও বাজারের সিংহভাগ শেয়ারের ওই মিইয়ে থাকা হাল প্রশ্ন তুলে দিয়েছে সেনসেক্সের সর্বজনীনতা নিয়ে। পরিসংখ্যান বলছে, তার এই রেকর্ড-ভাঙা দৌড়ে সামিল হয়নি সিংহভাগ শেয়ারই। বরং বম্বে স্টক এক্সচেঞ্জে নথিভুক্ত ৪,০০০ এবং ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জের (এনএসই) ২,০০০ শেয়ারের অধিকাংশের দরই গত ছ’বছরে কমেছে। তাই স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠেছে, বাজারের সত্যিকারের ছবির প্রতিফলন কি আদৌ দেখা যায় সেনসেক্সে? সূচকটির এই চুড়োয় অবস্থান কি আদৌ বাজারের বর্তমান হালের আয়না?

স্টুয়ার্ট সিকিউরিটিজের চেয়ারম্যান কমল পারেখের মতো বাজার বিশেষজ্ঞ বলছেন, “সূচকের লক্ষ্য হওয়া উচিত বাজারের হাল সম্পর্কে সঠিক বার্তা দেওয়া। কিন্তু তা হচ্ছে না। তাই এই সূচককে ঢেলে সাজা উচিত। যাতে সেখানে বাজারের সত্যিকারের অবস্থার প্রতিফলন ঘটে।” বিএসই কর্তৃপক্ষের অবশ্য দাবি, উল্লেখযোগ্য সমস্ত শিল্পক্ষেত্রের নানা সংস্থা সেনসেক্সে রয়েছে। তাই শেয়ার বাজারের সঠিক প্রতিবিম্বই দেখা যাচ্ছে সেখানে।

২০০৮ সালের ৮ জানুয়ারি, সেনসেক্স যে দিন প্রথম ২১ হাজার ছুঁয়েছিল, ওই দিন টাটা স্টিলের শেয়ারের দাম ছিল ৮৯১ টাকা। ভেল ২,৪৯৪। আর হিন্দালকোর দর ছিল ২০৯ টাকা। অথচ মাঝে ছ’বছর পেরিয়ে সেনসেক্স যখন সাড়ে ২২ হাজারের উপরে, তখন এই তিন নামী সংস্থার শেয়ার দরই কিন্তু অনেকখানি নীচে। এ দিন (১০ এপ্রিল) লেনদেন শেষের পর তাদের দাম দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে ৪১৬.৮০, ১৮৬.৫৫ এবং ১৪২.৬০ টাকা।

শুধু এই তিন সংস্থাই নয়। বিএসই এবং এনএসই-তে নথিভুক্ত সংস্থাগুলির সিংহভাগেরই শেয়ার দর গত ছ’বছরে নিম্নমুখী। যার মধ্যে রয়েছে বহু নামী সংস্থাও। যেমন রিলায়্যান্স ইন্ডাস্ট্রিজ, ওএনজিসি, টাটা মোটরস, ডিএলএফ, ভারতী টেলি, জেপি অ্যাসোসিয়েটস, স্টেট ব্যাঙ্ক, এনটিপিসি, বজাজ অটো, গ্রাসিম, এলঅ্যান্ডটি ইত্যাদি।

দেখা যাচ্ছে, সূচক তরতরিয়ে উঠেছে মাত্র কয়েকটি শেয়ারের উত্থানে ভর করে। তাদের দামে একটু এদিক-ওদিক হলেই তা তাল মিলিয়ে হেলছে। যেমন, টিসিএস। ২০০৮-এর ৮ জানুয়ারি এই সংস্থার শেয়ারের দাম ছিল ৯৯০.৫৫ টাকা। সেখানে বৃহস্পতিবার তা দাঁড়িয়েছে ২,১২৬.৫৫ টাকা। শুধু তা-ই নয়। ২০০৯ সালে প্রতিটি শেয়ারের জন্য একটি করে শেয়ার বোনাস দিয়েছিল টিসিএস। তার মানে, ২০০৮ সালে যাঁর কাছে সংস্থার একটি শেয়ার ছিল, তাঁর কাছে এখন আছে দু’টি। অর্থাৎ, ২০০৮-এ ৯৯০ টাকায় কেনা ওই শেয়ার এখন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২,১২৬.৫৫ টাকার দু’টিতে। যার মোট দাম ৪২৫৩.১০ টাকা। সুতরাং কার্যত ওই শেয়ারের দর ছ’বছরে ৯৯০ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ৪২৫৩।

এমন আরও উদাহরণ হাতের কাছে মজুত। যেমন, ইনফোসিস। ২০০৮ সালের ৮ জানুয়ারি ইনফোসিসের শেয়ার ছিল ১৬৬২.১৫ টাকায়। আর এখন তা ৩২০৬.৬০। একই কাহিনী আইটিসির-ও। ২৩১ থেকে বেড়ে তার শেয়ারের দাম এখন ৩৪২.৫৫ টাকায়। তার উপর তারা আবার প্রতি শেয়ারে একটি করে বোনাস শেয়ার দিয়েছে। অর্থাৎ, সে হিসেবে সংস্থাটির শেয়ারের দর কার্যত দাঁড়িয়েছে ৬৮৫ টাকার মতো। একই ভাবে, এইচসিএলের দাম ৩০১.২৫ থেকে বেড়ে হয়েছে ১,৩৫৭.৭৫ টাকা। মারুতি ৯৩৯.৬৫ থেকে পৌঁছেছে ১,৯৫৯.২০ টাকায়। অনেকখানি বেড়েছে হিন্দুস্তান ইউনিলিভারের দামও।

তাই লেনদেনের পরিসংখ্যান থেকেই স্পষ্ট যে, সেনসেক্সের এই রমরমা ওই গুটিকয় ‘হেভিওয়েট’ শেয়ারের দৌলতে। যাদের দাম বাড়লে, সেনসেক্স চড়চড় করে ওঠে। আর দাম পড়লে, উল্টোটা। যে কারণে অন্যান্য শেয়ারের দামে তেমন হেরফের না-হলেও সূচকের পারা চড়তে বা নামতে থাকে।

কমলবাবুরও দাবি, সূচক মূলত উঠছে-নামছে গোটা চারেক ‘হেভিওয়েট’ শেয়ারের হাত ধরে। সেনসেক্সে নথিভুক্ত সংস্থাগুলির মধ্যে টিসিএসের শেয়ারের গুরুত্ব (ওয়েটেজ) সব থেকে বেশি (১১.৫৪%)। আইটিসি (৭.৯৫%), ইনফোসিস (৫.১৬%) এবং হিন্দুস্তান ইউনিলিভারের (৩.৪৬%) গুরুত্বও ওই সূচকে যথেষ্ট। তাঁর মতে, “টিসিএসের শেয়ার এখন ২১০০ টাকার উপরে। কিন্তু মূলত দেশি-বিদেশি লগ্নিকারী সংস্থাই ওই শেয়ার কেনা-বেচা করে। সাধারণ লগ্নিকারীরা যে সব শেয়ারে লগ্নি করেন, তাদের দাম কিন্তু বাড়েনি। বরং পড়েছে। এটাকে আদৌ বাজারের তেজী ভাব বলা যায় না। অথচ সেনসেক্স দেখলে মনে হবে যেন বাজার খুব চাঙ্গা।” একই সুর ভ্যালু রিসার্চ সংস্থার চিফ এগ্জিকিউটিভ ধীরেন্দ্র কুমারের গলাতেও। বিএসই-র পরিসংখ্যানেও দেখা যাচ্ছে, সব সংস্থার সমস্ত শেয়ারের মোট যা দাম (টোটাল মার্কেট ক্যাপিটালাইজেশন), সেনসেক্সে তার প্রতিনিধিত্ব মাত্র ৪৯%। বরং এসঅ্যান্ডপি-বিএসই-৫০০ সূচকে তা ৯৪%।

অবশ্য শুধু ওয়েটেজ পরিবর্তন করলেই ফল হবে বলে অবশ্য মনে করেন না অর্থনীতির অধ্যাপক এবং পরিসংখ্যান বিশেষজ্ঞ অভিরূপ সরকার। তিনি বলেন, “বাজারের যা হাল, তাতে সূচক ঢেলে সাজা হলেও পরিস্থিতির তেমন পরিবর্তন হবে বলে মনে করি না। কারণ, বাজারে এখন মূলত দু’রকম লগ্নিকারী রয়েছে। এক, বিদেশি লগ্নিকারী সংস্থা। আর দুই, ফাটকাবাজ। এদের কেউই দীর্ঘকালীন লগ্নি করে না। এদের লগ্নি-কৌশলের সঙ্গে সূচকের সম্পর্ক নেই।”

pragyananda chowdhury sensex
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy