এত দিন ধরে নিউ টাউনে বিস্তীর্ণ এলাকার আইনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য ছিল মাত্র একটি থানা। মাঝেমধ্যেই সেখানে চলেছে সিন্ডিকেটের জুলুম-সহ নানা ধরনের গণ্ডগোল। কিন্তু অভিযোগ, বাড়তি থানা তো দূরের কথা কোনও আউটপোস্ট করারও প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেনি বিধাননগর কমিশনারেট। দিন দুই আগে নিউ টাউনের একটি নামী তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থার নির্মীয়মাণ অফিসে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনার পরে তড়িঘড়ি সেখানে আউটপোস্ট তৈরি হয়েছে। কিন্তু পরিকাঠামোর সামগ্রিক উন্নতি না করে একটি আউটপোস্ট ও থানা কি নিউ টাউনের ২৪ বর্গ কিলোমিটারের মতো বিস্তীর্ণ এলাকার আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করতে পারবে, প্রশ্ন তুলছেন ক্ষতিগ্রস্ত সংস্থার কর্মী থেকে স্থানীয় বাসিন্দা, সকলেই।
বুধবার নিউ টাউনের অ্যাকশন এরিয়া টু-এর চকমাচুরিয়া এলাকায় নির্মীয়মাণ অফিসের সামনে একটি শ্রমিক বিক্ষোভকে ঘিরে অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে ওই তথ্যপ্রযুক্তি ক্যাম্পাস। অভিযোগ, বুধবার সকালে যখন হাজার চারেক শ্রমিক অফিসের সামনে বিক্ষোভ দেখাচ্ছিলেন, তখন প্রথমে খবরই ছিল না নিউ টাউন থানার কাছে। ক্যাম্পাস থেকে খবর যায়, শ্রমিকেরা বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন। প্রথমে ওই বিক্ষোভ সামলাতে আসেন জনা পাঁচেক পুলিশকর্মী। হাজার চারেক শ্রমিকের বিক্ষোভ পাঁচ জন পুলিশ সামলাতে গেলে যা হওয়ার, তা-ই হয়। পরিস্থিতি আরও ঘোরালো হয়ে ওঠে। পুলিশের জিপ, ওই তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থার গাড়ি-সহ মোটরবাইকে আগুন লাগানো হয়। বেশ কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুরও চলে। নিউ টাউন এলাকার আইনশৃঙ্খলার কী পরিস্থিতি, এই ঘটনা তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়।
এই ঘটনা থেকে ‘শিক্ষা’ নিয়ে ওই তথ্যপ্রযুক্তি অফিসের সামনে একটি আউটপোস্ট করা হয়েছে। তবে সাধারণ মানুষের দাবি, এ রকম একটি আউটপোস্ট নয়, নিউ টাউনের বিস্তীর্ণ জায়গা সামলাতে এ রকম আরও বেশ কয়েকটি আউটপোস্ট দরকার। নিউ টাউনের মূল সমস্যা হল সিন্ডিকেট। অভিযোগ, এই সিন্ডিকেট নিয়ে গণ্ডগোল হলে অধিকাংশ ক্ষেত্রে পুলিশ ঠিক সময়ে পৌঁছতে পারে না। ফলে পরিস্থিতি ঘোরালো হয়ে ওঠে। পুলিশ ঘটনাস্থলে আসার আগেই দোষীরা পালিয়ে যায়।
নিউ টাউন এলাকার একটি নির্মাণ সংস্থার এক আধিকারিক বলেন, “আমাদের অ্যাকশন এরিয়া থ্রি-তে যেখানে এই নির্মাণকাজ চলছে, সেখান থেকে নিউ টাউন থানা অনেক দূরে। পুলিশ টহলদারি কালেভদ্রে দেখা যায়। কোনও অশান্তি হলে অত দূরে থানায় যাওয়ার সাহস পর্যন্ত হয় না। সিন্ডিকেটের জুলুম সংক্রান্ত নানা ধরনের অভিযোগও সব সময়ে নথিভূক্ত করা সম্ভব হয় না।” এলাকার অধিকাংশ নির্মাণ সংস্থার কর্মী থেকে শুরু করে এলাকার বাসিন্দাদারে অভিযোগ, আউটপোস্ট করার জন্য আমরা থানায় আগেও আর্জি জানিয়েছি। কিন্তু এখনও কাজের কাজ কিছু হয়নি।
নিউ টাউনে সম্প্রতি তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থার অফিসে ভাঙচুরের ঘটনায় পর্যাপ্ত পুলিশ এতটাই দেরিতে আসে যে, কারা ভাঙচুরের সঙ্গে যুক্ত এখনও পর্যন্ত তা চিহ্নিত করতে পারেনি পুলিশ। ফলে কেউ ধরাও পড়েনি।
নিউ টাউনে আরও আউটপোস্ট যে প্রয়োজন, তা কার্যত স্বীকার করেছেন বিধাননগর কমিশনারেটের কর্তারাও। নিউ টাউন থানার পুলিশ জানাচ্ছে, তাদের ২৪ বর্গ কিলোমিটার বিস্তীর্ণ এলাকার আইনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য পুলিশ অফিসার, কনস্টেবল ও গ্রিন পুলিশ নিয়ে মোট ১০০ জনের মতো কর্মী রয়েছেন। সারা দিনে এঁদের ডিউটি বিভিন্ন স্লটে ভাগ করা রয়েছে।
বিধাননগর কমিশনারেটের এডিসিপি অনন্ত নাগ বলেন, “ওই তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থার সামনে যে আউটপোস্ট বসেছে সেটি শুধু ওই সংস্থার জন্যই নয়, গোটা এলাকার দায়িত্ব নেবে। এ রকম আরও দরকার ঠিকই, তবে আমাদেরও কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। ওই আউটপোস্টের ঘর তৈরি করতে তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থাটি সাহায্য করেছে। রাতারাতি ওখানে ওই পরিকাঠামো তৈরি করা কার্যত খুবই কঠিন ছিল।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy