Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
উড়ালপুল বিপর্যয়

অনিশ্চিত ভবিষ্যতের মুখে ১১ দোকান

ঘটনার পরে এক মাস হতে চলল। বিবেকানন্দ উড়ালপুল ভেঙে পড়ার জেরে যে ১১টি দোকান বন্ধ হয়ে গিয়েছিল, সেগুলি খোলার নামই নেই। ঘটনাস্থলে গিয়ে মেয়র সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছিলেন।

দোকান ফের চালু হবে কবে, জানা নেই ওঁদের। — শুভাশিস ভট্টাচার্য

দোকান ফের চালু হবে কবে, জানা নেই ওঁদের। — শুভাশিস ভট্টাচার্য

মেহবুব কাদের চৌধুরী
শেষ আপডেট: ২৫ এপ্রিল ২০১৬ ০২:৩৩
Share: Save:

ঘটনার পরে এক মাস হতে চলল। বিবেকানন্দ উড়ালপুল ভেঙে পড়ার জেরে যে ১১টি দোকান বন্ধ হয়ে গিয়েছিল, সেগুলি খোলার নামই নেই। ঘটনাস্থলে গিয়ে মেয়র সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছিলেন। সেই আশ্বাস পালিত হয়নি। এর পরে সাহায্য পেতে মেয়রের ঘরে ছুটেছিলেন ব্যবসায়ীরা। ফের আশ্বাস দিয়েছিলেন মেয়র। কিন্তু কোথায় কী! এই মুহূর্তে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের মুখোমুখি ওই ১১টি দোকানের মালিক ও কর্মচারীরা। সংখ্যাটা সব মিলিয়ে ৭০ তো হবেই।

গত ৩১ মার্চ নির্মীয়মাণ বিবেকানন্দ উড়ালপুলের একাংশ ভেঙে পড়ে মৃত্যু হয় ২৭ জনের। ভাঙা অংশ পুরোপুরি পরিষ্কার হয়ে গিয়েছে বৃহস্পতিবারই। শনিবার উড়ালপুলের ৪০ নম্বর স্তম্ভটি সরানো হয়েছে। কিন্তু দোকানদারেরা জানেন না, কবে তাঁরা ফের ব্যবসা শুরু করতে পারবেন। কেন বন্ধ ওই ১১টি দোকান? পুলিশ জানাচ্ছে, উড়াপুলটির অংশবিশেষ ভেঙে পড়েছিল ৩বি, কালীকৃষ্ণ ঠাকুর স্ট্রিট লাগোয়া একটি তিনতলা বাড়ির বারান্দার উপরে। পাঁচটি বাড়ি এমন ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় যে, সেখানকার বাসিন্দাদের অন্যত্র সরে যেতে বলা হয়। ওই পাঁচটি বাড়িতেই ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে ১১টি দোকান।

দুর্ঘটনার পরদিনই মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় ঘটনাস্থলে এসে আশ্বাস দিয়েছিলেন, উড়ালপুল ভেঙে পড়ায় যে সব বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তা সরকারি তরফে সংস্কার করে দেওয়া হবে। কিন্তু তাতে কোনও কাজ না হওয়ায় ব্যবসায়ীদের তরফে এলাকায় বিক্ষোভ দেখানোর প্রস্তুতি নেওয়া হয়। ভোটের আগে ‘ড্যামেজ কন্ট্রোলে’ নামেন স্থানীয় ২৩ নম্বর ওয়ার্ডের ব্লক তৃণমূল যুব সভাপতি স্বপন বর্মণ। গত ৩ এপ্রিল স্বপনবাবু কালীকৃষ্ণ ঠাকুর স্ট্রিটের ব্যবসায়ীদের নিয়ে বেহালায় মেয়রের বাড়িও যান। বন্ধ থাকা কাপড়ের দোকানের ব্যবসায়ী জগদ্বন্ধু নন্দী বলেন, ‘‘বেহালার বাড়িতে মেয়র আমাদের আশ্বাস দিয়েছিলেন, ৭২ ঘণ্টার মধ্যে বারান্দা সারিয়ে বন্ধ দোকান খোলা হবে। কিন্তু ঘটনার পরে ২৪ দিন কেটে হলেও বারান্দা আগের অবস্থাতেই রয়েছে। আমরা দোকান চালু করতে পারছি না।’’

ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, ভোটের আগে তাঁদের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু ভোট মিটে গেলেও সংস্কার হয়নি ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ি। দোকান খোলার ছাড়পত্র দেয়নি পুলিশ। এক ব্যবসায়ীর আক্ষেপ, ‘‘ভোট পেরিয়ে যাওয়ার পরে কোনও নেতার দেখা মিলছে না।’’ ৩১ মার্চ থেকে মিষ্টির দোকান বন্ধ শ্যাম শর্মার। একই ভাবে টানা ২৪ দিন ধরে ফুলের দোকান বন্ধ সন্দীপ অগ্রবালের। শ্যাম, সন্দীপদের ক্ষোভ, ‘‘ভোটের আগে আমাদের তৃণমূলের তরফে অনেক আশ্বাস দেওয়া হল। এখন ভোট ফুরিয়ে যেতেই কোনও নেতাকে দেখছি না। আমাদের কী হবে?’’

স্থানীয় ২৩ নম্বর ওয়ার্ডের ব্লক তৃণমূল যুব সভাপতি স্বপন বর্মণ বলেন, ‘‘৩বি কালীকৃষ্ণ ঠাকুর স্ট্রিটের বাড়ির বারান্দা সংস্কারের কাজ শীঘ্রই শুরু হবে। আমরা আগেই বাড়ির বাসিন্দাদের বলেছিলাম পুরসভাকে একটি চিঠি লিখতে। কিন্তু ওঁরা এখনও চিঠি জমা দেননি।’’ ব্যবসায়ীরা কেন চিঠি দেননি মেয়রকে? এক ব্যবসায়ী জগদ্বন্ধু নন্দী রবিবার বলেন, ‘‘খবরের কাগজ থেকে ফোন যাওয়ার পরেই স্বপনবাবু পুরসভায় চিঠি লিখতে বলেছেন। তার আগে তিনি আমাদের কিছুই বলেননি।’’

ক্ষুব্ধ ব্যবসায়ীদের কথায়, ‘‘আমাদের পেটে টান পড়ছে। কিন্তু কেউ কিছু করছে না। আমরা ঠিক করেছি সোমবার থেকে গণেশ টকিজ মোড়ে রবীন্দ্র সরণি অবরোধ করে লাগাতার বিক্ষোভ দেখাব। তাতে যদি প্রশাসনের টনক নড়ে।’’ ব্যবসায়ীদের ক্ষোভ প্রসঙ্গে মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়ের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি কোনও মন্তব্য করতে চাননি। পুরসভার ডিজি (বিল্ডিং) দেবাশিস চক্রবর্তী বলেন, ‘‘ভেঙে যাওয়া উড়ালপুলের অংশ সরিয়ে ফেলার কাজ সবেমাত্র হয়েছে। কালীকৃষ্ণ ঠাকুর স্ট্রিটের বাড়ি মেরামতির কাজও শীঘ্রই শুরু হবে।’’ কবে? তার দিন-তারিখ অবশ্য জানাতে পারেননি ডিজি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

uncertain future shops Flyovercollapse
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE