Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪

বাবা-মাকে হারিয়ে ‘আত্মঘাতী’ তরুণী

অস্বাভাবিক মৃত্যুর এই ঘটনাটি ঘটেছে তিলজলা থানা এলাকার চৌবাগা রোডের একটি বাড়িতে। পুলিশ জানায়, মৃতার নাম উত্তরা চৌধুরী ওরফে জুয়েল (১৯)। তিনি সাউথ সিটি কলেজে বি কম পড়তেন। মা-বাবার একমাত্র সন্তান।

মর্মান্তিক: মায়ের সঙ্গে উত্তরা।

মর্মান্তিক: মায়ের সঙ্গে উত্তরা।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০১ জুলাই ২০১৮ ০২:২৭
Share: Save:

কিডনির অসুখে ভুগে বাবা মারা গিয়েছেন বছর চারেক আগে। কয়েক মাস আগে চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে মেয়ে বুঝতে পেরেছিলেন, কিডনির অসুখে আক্রান্ত তাঁর মা-ও আর বেশি দিন বাঁচবেন না। অসুখ তীব্র আকার নেওয়ায় বৃহস্পতিবার মাকে বেসরকারি হাসপাতালে তিনিই নিয়ে গিয়ে ভর্তি করান। শুক্রবার রাতে হাসপাতালে মাকে দেখে বাড়ি ফিরে আসার পরেই চিকিৎসকদের কাছ থেকে খবর পান, মা আর বেঁচে নেই। তার কিছু ক্ষণ পরেই শোয়ার ঘর থেকে পুলিশ ওই তরুণীর ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার করে। প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশের অনুমান, নিঃসঙ্গতা ও অবসাদে ভুগেই তিনি আত্মহত্যা করেছেন।

অস্বাভাবিক মৃত্যুর এই ঘটনাটি ঘটেছে তিলজলা থানা এলাকার চৌবাগা রোডের একটি বাড়িতে। পুলিশ জানায়, মৃতার নাম উত্তরা চৌধুরী ওরফে জুয়েল (১৯)। তিনি সাউথ সিটি কলেজে বি কম পড়তেন। মা-বাবার একমাত্র সন্তান।

পুলিশ জানায়, রাত সাড়ে দশটা নাগাদ ঘর থেকে উত্তরাকে উদ্ধার করে চিত্তরঞ্জন ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। কিন্তু সেখানকার চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।

এই বাড়িতেই থাকতেন তাঁরা।

তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, ওই তরুণীর মৃতদেহের সুরতহালে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। বাড়ি থেকে সুইসাইড নোটও শনিবার রাত পর্যন্ত মেলেনি। মৃত্যুর সঠিক কারণ জানতে মৃতদেহটি ময়না-তদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে। ওই অস্বাভাবিক মৃত্যু নিয়ে পুলিশের কাছে এখনও পর্যন্ত কেউ অভিযোগ জানাননি।

শনিবার ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, চৌধুরী বাড়ির সামনে প্রতিবেশীদের জটলা। উত্তরার জেঠু তুলসীবাবু বাড়ির ভিতরে থাকলেও অপরিচিত লোকজনের সঙ্গে কথা বলবেন না বলে জানান। প্রতিবেশীরা জানান, উত্তরার বাবা উত্তমবাবু রেলে কাজ করতেন। কর্মরত অবস্থাতেই তিনি কিডনির রোগে ভুগতে শুরু করেন। পরে পরিস্থিতি এমন হয় যে, চিকিৎসকেরা জানিয়ে দেন, কি়ডনি প্রতিস্থাপন ছাড়া তাঁকে বাঁচানো যাবে না। কিডনিদাতা পাওয়া যাচ্ছে না দেখে উত্তরার মা জুলিদেবী চিকিৎসকদের জানান, তিনি নিজের একটি কিডনি স্বামীকে দান করতে চান। কিন্তু স্ত্রীর কিডনি পেয়েও বেশি দিন বাঁচতে পারেননি উত্তমবাবু।

এলাকা সূত্রে জানা গেল, উত্তমবাবুরা দুই ভাই। তুলসীবাবু বড়। তাঁরা অবাঙালি। বাঙালি জুলিদেবীর সঙ্গে উত্তমবাবুর আলাপ হয় গানের আসরে। উত্তমবাবুর বাদ্যযন্ত্র বাজানোর শখ ছিল। চাকরি করেও শখের আসরে জুলিদেবীর গানের সঙ্গে তাঁকে বাজাতে দেখা যেত। পরে তাঁরা বিয়ে করেন।

প্রতিবেশীদের একাংশের দাবি, তুলসীবাবুর পরিবারের সঙ্গে উত্তরাদের তেমন যোগাযোগ ছিল না। উত্তমবাবুর একমাত্র সন্তান উত্তরা এক বাড়িতে থেকেও বাবা ও মাকে ছাড়া আর কাউকে ছোটবেলা থেকে সঙ্গী হিসেবে পাননি। সেই কারণে বেশ নিঃসঙ্গ ছিলেন ওই তরুণী।

এ দিন পাড়ার কয়েক জন ব্যক্তি ও বয়স্ক মহিলা জানান, উত্তরার কলেজের কোনও বন্ধুবান্ধবকেও তাঁরা কখনও বাড়িতে আসতে দেখেননি। লাজুক ও মিষ্টভাষী ছিলেন ওই তরুণী। নিজের একাকিত্ব ও পরিবার নিয়ে কারও সঙ্গে কখনও আলোচনা করতেন না। তাঁরা মনে করেন, বেঁচে থাকার একমাত্র সম্বল মা-ও চলে যাওয়ায় নিজের বেঁচে থাকার ইচ্ছাটাই হারিয়ে ফেলেন ১৯ বছরের মেয়েটি।

—নিজস্ব চিত্র।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE