ব্যাকুল: অগ্নিকাণ্ডের পরে পরি। শনিবার। ছবি: সজল চট্টোপাধ্যায়
ঘরে দাউদাউ করে জ্বলছে আগুন। তাতে নিজের আট সন্তানকে ঝলসে যেতে দেখে স্থির থাকতে পারেনি পরি।
সন্তানদের উদ্ধার করতে মরিয়া চেষ্টা চালালেও আগুনের কাছে হার মানতে হয়েছে পরিকে। শেষে চিৎকার জুড়ে আগুনে ঝাঁপ মারতে গেলে তাকে টেনে বার করে আনা হয়। তার পর থেকেই ছলছল চোখে ওই ঘরের দিকে তাকিয়ে চেঁচিয়ে চলেছে আট সন্তানের মা পরি!
শনিবার দুপুরে বরাহনগরের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের কুমোরপাড়া লেনের বাসিন্দা কাউন্সিলর পৃথা মুখোপাধ্যায়ের বাড়িতে এই অগ্নিকাণ্ড ঘটে। সেই আগুনেই ‘বলি’ হল দিন সাতেক বয়সের আটটি কুকুর ছানা। কোনও মতে বাঁচানো গিয়েছে তাদের ছ’বছরের মা পরি ওরফে মুম্বিকে। এরা সকলেই ল্যাব্রাডর প্রজাতির।
আরও পড়ুন: পাভলভে ভর্তি হলেন ঝাঁপ দিতে যাওয়া যুবক
আগুনে পৃথাদেবীর দোতলা বাড়ির মেজ়েনাইন ফ্লোরের ঘরটি ভস্মীভূত হয়ে গিয়েছে। বাড়ির পাশের পুকুর থেকে প্রথমে জল নিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন স্থানীয়েরা। পরে দমকলের চারটি ইঞ্জিন দু’ঘণ্টার চেষ্টায় পরিস্থিতি স্বাভাবিক করে। আসে পুলিশও। দমকলের অনুমান, শর্ট সার্কিট থেকেই আগুন। পৃথাদেবী বলেন, ‘‘আটটা বাচ্চাকে হারানোর যন্ত্রণা বলে বোঝাতে পারছি না। মুম্বি যদি একটাকেও মুখে করে নিয়ে আসতে পারত!’’
আরও পড়ুন: ৮৫ বছরের মাকে ফ্ল্যাটে বন্দি করে ৪ মাস বেপাত্তা ছেলে!
ঘটনার সময়ে বাড়িতে পরি, তার ছানারা ছাড়াও পৃথাদেবীর দু’বছরের নাতনি দীপ্তায়নীকে নিয়ে ছিলেন পরিচারিকা মালতি সর্দার। মালতি জানান, তিনি দোতলায় বসে ছিলেন। ঘরে ঘুমোচ্ছিল শিশুটি। পোড়া গন্ধ পেয়ে মেজ়েনাইন ফ্লোরে গিয়ে দেখেন, দাউদাউ করে জ্বলছে আগুন। দরজার কোনায় বসে চেঁচাচ্ছে পরি। তিনি বলেন, ‘‘দরজা খুলতেই ধোঁয়ায় বাড়িটি ভরে যায়। ভয়ে বাচ্চাটাকে নিয়ে রাস্তায় চলে যাই। তখন কুকুর ছানাগুলোর কথা মাথায় আসেনি।’’
স্থানীয়েরা জানান, মালতিদেবীর চেঁচামেচিতে তাঁরা এসে পাঁচিলে উঠে জানলা দিয়ে ঘরে জল ঢালতে থাকেন। তখন পুরসভায় ছিলেন পৃথাদেবী। তাঁর স্বামী সুজিত-সহ বাড়ির বাকিরাও বেরিয়েছিলেন। খবর পেয়ে বাড়ি ফিরে কাউন্সিলর ও তাঁর স্বামী নাতনিকে দেখার পরেই খোঁজ করেন পোষ্যদের।
স্থানীয় যুবক মইদুল ইসলাম, সুরেন্দ্র রায়রা জানান, গোটা ঘরটি আগুনের গ্রাসে চলে গিয়েছিল। তার মাঝেই সন্তানদের বাঁচানোর চেষ্টা করছিল পরী। কোনও মতে টেনে তাকে নামিয়ে পাশের বাড়ির বাগানে আটকে রাখা হয়। পৃথাদেবী জানান, ২০১৩ সালে মুম্বই থেকে পরিকে কিনেছিলেন তাঁর ছেলে ঐন্দ্রায়ন। শহরে ফেরার সময়ে পরিকেও নিয়ে আসেন। বরাহনগর পুরসভার চেয়ারম্যান পারিষদ দিলীপনারায়ণ বসু দেখা করতে এলে তাঁকে দেখেই কেঁদে ফেলেন পৃথাদেবী। তিনি বলেন, ‘‘মুম্বই থেকে এসেছিল বলে আদর করে মুম্বি বলে ডাকতাম। ওর জরায়ুতে সমস্যা ছিল। অনেক চিকিৎসার পরে এই আটটি ছানা হয়েছিল।’’
বাড়ির উল্টো দিকের বাগানে বন্ধ গ্রিলের দরজার সামনে বসে তখন ফ্যালফ্যাল চোখে তাকিয়ে পরি। তাকে দেখে এক পড়শির আক্ষেপ, ‘‘মা তো! সন্তান হারানোর যন্ত্রণা তো হবেই।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy