Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
Suicide

গভীর রাতে বহুতলের ফ্ল্যাট থেকে ‘ঝাঁপ’ চিকিৎসকের

এই মৃত্যু নিয়ে রহস্য দেখা দিয়েছে। পুলিশ জানায়, বুধবার রাত ১২টার পরে ওই চিকিৎসকের স্ত্রী ভূমিকা ভাবনা তাদের ফোন করে জানান, তাঁর স্বামী তাঁকে ফ্ল্যাট থেকে বার করে দিয়ে দরজা বন্ধ করে দিয়েছেন।

ধর্মেন্দ্রকুমার চৌধুরী

ধর্মেন্দ্রকুমার চৌধুরী

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ জানুয়ারি ২০২০ ০২:০৬
Share: Save:

ফ্ল্যাটের বাইরে তখন দরজা ভাঙার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে পুলিশ। ভিতর থেকে ভেসে আসছে চিৎকার, জিনিসপত্র ভাঙার আওয়াজ। প্রতিবেশীরাও বাইরে থেকে বোঝানোর চেষ্টা করছেন ঘরের মধ্যে থাকা ব্যক্তিকে। আচমকা বন্ধ হয়ে গেল সব আওয়াজ। কিছু ক্ষণ পরে সকলে ভারী কিছু নীচে পড়ার মতো শব্দ শুনলেন। ছুটে গিয়ে দেখা গেল, ঘরের মধ্যে এতক্ষণ যিনি ছিলেন, তিনিই পড়ে আছেন রক্তাক্ত অবস্থায়।

বুধবার গভীর রাতে নিউ টাউনের একটি বহুতলের ১৩ তলার ফ্ল্যাট থেকে পড়ে এ ভাবেই মৃত্যু হয়েছে এক চিকিৎসকের। তাঁর নাম ধর্মেন্দ্রকুমার চৌধুরী (২৮)। প্রাথমিক ভাবে পুলিশের অনুমান, ফ্ল্যাট থেকে ঝাঁপ দিয়ে আত্মঘাতী হয়েছেন তিনি। তবে মৃত্যুর কারণ জানতে দেহটি ময়না-তদন্তের জন্য আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করে তদন্তে নেমেছে ইকো পার্ক থানা।

এই মৃত্যু নিয়ে রহস্য দেখা দিয়েছে। পুলিশ জানায়, বুধবার রাত ১২টার পরে ওই চিকিৎসকের স্ত্রী ভূমিকা ভাবনা তাদের ফোন করে জানান, তাঁর স্বামী তাঁকে ফ্ল্যাট থেকে বার করে দিয়ে দরজা বন্ধ করে দিয়েছেন। তা শুনে ঘটনাস্থলে যায় পুলিশ। খবর দেওয়া হয় দমকলেও। পুলিশ ও দমকলকর্মীরা যতক্ষণে দরজা ভাঙার চেষ্টা করেন, তার মধ্যেই নীচে পড়ে যান ধর্মেন্দ্র। ১৩ তলা থেকে পড়ার সময়ে পাঁচতলার একটি ফ্ল্যাটের বারান্দার গ্রিলে ধাক্কা খান।

দুই বাসে রেষারেষি, গুরুতর জখম ভ্যানচালক

পুলিশ জানিয়েছে, এর পরে ফ্ল্যাটে ঢুকে দেখা যায় ঘর লন্ডভন্ড। দেওয়ালে এসি বসানোর জায়গাটি ফাঁকা। তদন্তকারীদের অনুমান, সেখান থেকেই ঝাঁপ দেন ধর্মেন্দ্র। জানা গিয়েছে, ওই চিকিৎসক জেনারেল ফিজিশিয়ান। বছরখানেক আগে তাঁরা ওই ফ্ল্যাটটি ভাড়া নেন। ভূমিকার সঙ্গে কথা বলে পুলিশ জেনেছে, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় স্বামী-স্ত্রী বাজারে গিয়েছিলেন। সেখান থেকে মদ কেনেন ধর্মেন্দ্র। বাড়ি ফিরেই মদ খেতে শুরু করেন। তখন তাঁর মোবাইলে একটি ফোন আসে। সে সময়েই ভূমিকা লক্ষ করেন, তাঁর স্বামী উত্তেজিত হয়ে ফোনে কথা বলছেন। তিনি তা দেখে পুলিশে ফোন করেন।

পুলিশ প্রথমে রাত ৯টা নাগাদ গিয়ে ওই চিকিৎসককে শান্ত করে। কিন্তু কিছু ক্ষণ পরে ধর্মেন্দ্র ফের উত্তেজিত হয়ে মদ খেতে শুরু করেন। স্ত্রী আটকানোর চেষ্টা করলেও লাভ হয়নি। উল্টে ধর্মেন্দ্র স্ত্রীকে বার করে দিয়ে দরজা বন্ধ করে দেন। এমনকি, কেউ যাতে দরজা ভেঙে ঢুকতে না পারে তার জন্য সমস্ত আসবাব দরজার পিছনে জড়ো করেন। বাধ্য হয়ে পড়শিদের সাহায্য চান ভূমিকা। তাঁরা এসে দরজায় ধাক্কা দিয়ে, জানলা দিয়ে চিৎকার করে ধর্মেন্দ্রকে নিরস্ত করার চেষ্টা করেন। কিন্তু তাতেও কাজ না হওয়ায় পুলিশকে খবর দেওয়া হয়।

ওই বহুতলের অন্য আবাসিকেরা জানিয়েছেন, ধর্মেন্দ্র খুবই শান্ত প্রকৃতির ছিলেন। প্রাথমিক ভাবে পুলিশ জেনেছে, তিনি বিভিন্ন জায়গায় রোগী দেখতেন। ঘটনার রাতে একাধিক বার ফোন এসেছিল ধর্মেন্দ্রর মোবাইলে। তবে কে বা কারা ফোন করেছে, বলতে পারেননি ভূমিকা। ওই চিকিৎসকের মোবাইলের কল লিস্ট পরীক্ষা করছেন তদন্তকারীরা। কেন এমন ঘটল, তা জানতে তাঁর পরিজনেদের সঙ্গে কথা বলেছেন তাঁরা। তবে স্বামীর মৃত্যু নিয়ে ভূমিকা কোনও মন্তব্য করতে চাননি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Suicide New Town Doctor Crime
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE