প্রতীকী ছবি।
এক অন্তঃসত্ত্বা যাত্রীকে নিয়ে দু’ভাগে ভাগ হয়ে গেলেন বিমানের যাত্রীরা। ৩৪ সপ্তাহের অন্তঃসত্ত্বা ওই মহিলার আদৌ আড়াই ঘণ্টা বিমানে করে যাওয়া উচিত কি না, তা নিয়ে যাত্রীদের মধ্যে বাদানুবাদ চলল বিস্তর। আর সেই কারণে মঙ্গলবার সকালে কলকাতা থেকে জেট এয়ারওয়েজের বেঙ্গালুরুর উড়ান ছাড়তে দেরী হল ৫০ মিনিট।
বিমানবন্দর সূত্রের খবর, প্রথমে পাইলটও ‘ফিট টু ফ্লাই’ সার্টিফিকেট ছাড়া ওই মহিলা শুভপ্রদা নটরাজকে নিয়ে যেতে চাননি। শেষে নিজের চিকিৎসকের কাছ থেকে হোয়াটসঅ্যাপে ওই ফিট টু ফ্লাই সার্টিফিকেট আনিয়ে তবে উড়ে যান শুভপ্রদা। ইকনমি আসনের টিকিট থাকলেও তাঁকে শেষে সপরিবার বিজনেস শ্রেণিতে নিয়ে যায় জেট।
জেটের এক কর্তার কথায়, ‘‘অনেকেই বুঝতে চান না, ওই ৫০ মিনিট ধরে বিমানের দু’টি ইঞ্জিন অন অবস্থায় কতটা জ্বালানি নষ্ট হল। এমন এক জন যাত্রী মাঝ আকাশে অসুস্থ হয়ে পড়লে কাছের বিমানবন্দরে নামতে হত বিমানকে। এই ধরণের পরিস্থিতিতে জ্বালানি ও সময় নষ্ট হওয়ায় কত লক্ষ টাকার ক্ষতি হয় তা সাধারণ মানুষের বোঝার কথা নয়।’’
কলকাতা বিমানবন্দরের চিকিৎসক শর্মিলা কবিরাজ জানিয়েছেন, ২৮ সপ্তাহের বেশি গর্ভাবস্থা হলে বিমানে যাতায়াতের জন্য ‘ফিট টু ফ্লাই’ সার্টিফিকেট নেওয়াই নিয়ম।
বিমানবন্দর সূত্রে খবর, এ দিন সকাল ৭টা ২০ মিনিটে কলকাতা থেকে জেট-এর বেঙ্গালুরুর উড়ান ছাড়ার কথা ছিল। সোমনাথ পাইন নামে এক যাত্রী জানান, তিনি ১৪সি আসনে ছিলেন। তাঁর পিছনেই ছিলেন ওই অন্তঃসত্ত্বা মহিলা, তাঁর মা ও মহিলার ছোট ছেলে। বিমানসেবিকারা এসে বলেন, তিনি যেতে পারবেন না। এ নিয়ে শুভপ্রদার সঙ্গে বাদানুবাদ শুরু হয়। শুভপ্রদার দাবি ছিল, তিনি যখন বোর্ডিং কার্ড নিলেন, তখন কেন তাঁকে বলা হল না? জেট এর দাবি, শুভপ্রদার সঙ্গে তাঁর স্বামী নটরাজ চন্দ্রশেখরও ছিলেন। তিনি কলকাতা থেকে দিল্লি যাচ্ছিলেন। নটরাজ নিজে সব টিকিট নিয়ে চেক-ইন কাউন্টারে যান। সেখানে বিমানসংস্থার কর্মী যখন বাকিদের সম্পর্কে জানতে চান, তখন নটরাজ দেখিয়ে দেন একটু দূরে স্ত্রী ও অন্যেরা দাঁড়িয়ে। চাদর জড়ানো শুভপ্রদাকে দূর থেকে দেখে বোঝা যায়নি তিনি ৩৪ সপ্তাহের অন্তঃসত্ত্বা। জেটের দাবি, বোর্ডিং গেট পেরিয়ে যখন তিনি বিমানে ওঠেন তখনও এমন ভাবে চাদর জড়িয়ে রেখেছিলেন যে ৩৪ সপ্তাহের গর্ভাবস্থার কথা বোঝা যায়নি। যদিও চন্দ্রশেখর তা মানতে চাননি। এ দিন সন্ধ্যায় ফোনে তিনি বলেন, ‘‘চেক ইন করার সময়ে আমরা এক সঙ্গেই ছিলাম। আমাদের দেখেই বোর্ডিং কার্ড দিয়েছে জেট।’’
জেট এর দাবি, বিমানে উঠে আসনে বসে চাদর সরানোর পরে বিমানসেবিকারা শুভপ্রদাকে ওই অবস্থায় দেখেন। এক বিমানসেবিকা বলেন, তাঁকে এখন নেমে যেতে হবে। এই অবস্থায় তাঁকে নিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। বিমানবন্দরের চিকিৎসকদের দেখিয়ে ফিট টু ফ্লাই সার্টিফিকেট নিয়ে পরে তাঁকে পাঠানো হবে। কিন্তু, রাজি হননি তিনি। এই বাদানুবাদ চলাকালীন বেশ কিছু যাত্রী বিমান সংস্থার পক্ষ নেন। সকালের উড়ান ধরে বেঙ্গালুরু গিয়ে তাঁদের জরুরি কাজ রয়েছে, এমন কথা বলে সেই যাত্রীদের দাবি ছিল, মহিলাকে নামিয়ে দেওয়া হোক। কিন্তু, অন্য এক দল যাত্রী তাঁদের বিরোধিতা শুরু করে দেন।
শেষে এক বিমানসেবকের মধ্যস্থতায় শুভপ্রদা যোগাযোগ করেন তাঁর নিজের চিকিৎসকের সঙ্গে। সেই চিকিৎসক তখন ফিট টু ফ্লাই সার্টিফিকেট লিখে, তার ছবি তুলে শুভপ্রদার হোয়াটসঅ্যাপে পাঠিয়ে দেন। সেটা দেখে শুভপ্রদাকে নিয়ে উড়তে রাজি হয়ে যায় জেট। তত ক্ষণে ৫০ মিনিট পার হয়ে গিয়েছে। পরে মহিলাকে বিজনেস শ্রেণির ফাঁকা আসনে বসিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy