Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

রেললাইনের ধারে ছাত্রীর নিথর দেহ, প্রেমিকের খোঁজে পুলিশ

রীতাদেবী জানিয়েছেন, ঘটনাস্থলে গিয়ে তিনি দেখেন রেললাইনের ধারে মাটিতে পড়ে রয়েছে প্রিয়াঙ্কার নিথর দেহ। মাথার এক দিকের ঘিলু বেরিয়ে এসেছে। কান এবং নাক দিয়ে রক্ত বেরিয়ে জমাট হয়ে রয়েছে। পাশেই বসে পীযূষ। দ্রুত নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে প্রিয়াঙ্কাকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসকেরা। 

প্রিয়াঙ্কা দাস

প্রিয়াঙ্কা দাস

নীলোৎপল বিশ্বাস
শেষ আপডেট: ৩১ অগস্ট ২০১৮ ০১:১০
Share: Save:

উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার আগে প্রি-টেস্ট চলছে স্কুলে। বৃহস্পতিবার ভূগোল পরীক্ষার আগে বুধবার ছুটি ছিল। বাড়িতে বসেই পড়াশোনা করছিলেন হোলি চাইল্ড স্কুলের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রী প্রিয়াঙ্কা দাস (১৮)। বেলার দিকে হঠাৎ একটি ফোন পেয়ে তিনি বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান। কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই আর একটি ফোন আসে প্রিয়াঙ্কার মা রীতাদেবীর কাছে। তাঁর দাবি, পীযূষ সাউ নামে মেয়ের এক বন্ধু ফোনে জানান, দ্রুত হাজরাবাগান রেল ক্রসিংয়ে পৌঁছতে হবে। প্রিয়াঙ্কা অসুস্থ হয়ে পড়েছেন!

রীতাদেবী জানিয়েছেন, ঘটনাস্থলে গিয়ে তিনি দেখেন রেললাইনের ধারে মাটিতে পড়ে রয়েছে প্রিয়াঙ্কার নিথর দেহ। মাথার এক দিকের ঘিলু বেরিয়ে এসেছে। কান এবং নাক দিয়ে রক্ত বেরিয়ে জমাট হয়ে রয়েছে। পাশেই বসে পীযূষ। দ্রুত নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে প্রিয়াঙ্কাকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসকেরা।

এর পরেই এই মৃত্যু ঘিরে রহস্য দানা বেঁধেছে। রীতাদেবী জানান, মৃতদেহ নিয়ে তাঁর সঙ্গেই হাসপাতালে গিয়েছিলেন পীযূষ। তবে অভিযোগ, প্রিয়াঙ্কাকে মৃত ঘোষণা করার পরেই তিনি চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলতে যাওয়ার নাম করে বেরিয়ে যান। আর ফেরেননি। সঙ্গে নিয়ে গিয়েছেন প্রিয়াঙ্কার মোবাইল ফোনও!

রীতাদেবীর দাবি, শিয়ালদহ জিআরপি-র তদন্তকারী অফিসারেরা হাসপাতালে পৌঁছেই জানতে চান, প্রিয়াঙ্কার সঙ্গে ঘটনাস্থলে যে যুবক ছিলেন, তিনি কোথায়? কিন্তু তত ক্ষণে পীযূষ বেরিয়ে গিয়েছেন। পুলিশ জানায়, রহস্যের তল পেতে বুধবার রাত থেকেই পীযূষের খোঁজে তল্লাশি শুরু হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত তাঁর খোঁজ পাওয়া যায়নি। পীযূষের বাবা-মাও রহস্যজনক ভাবে বুধবারই বিহারে নিজেদের গ্রামের বাড়িতে চলে গিয়েছেন বলে জেনেছে পুলিশ।

মর্মান্তিক: হাজরাবাগান রেল ক্রসিংয়ের কাছেই বুধবার মেলে প্রিয়াঙ্কা দাসের দেহ। ছবি: সুমন বল্লভ

এই মৃত্যু কী ভাবে হয়েছে এবং মৃত্যুর কারণ কী, ঘটনার ২৪ ঘণ্টা পরেও তা নিয়ে ধন্দে পুলিশ। তরুণীর ফোন নিয়ে পীযূষের পালিয়ে যাওয়া এবং প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ান অনুযায়ী, তরুণী এবং যুবকের মধ্যে তর্কাতর্কি থেকে পুলিশের সন্দেহ, ওই যুবকই তরুণীকে ট্রেনের সামনে ধাক্কা মেরে ফেলে দিয়েছিলেন। পুলিশ জানায়, রীতাদেবীও তদন্তকারীদের জানিয়েছেন, রেল ক্রসিংয়ে যাওয়ার পরে পীযূষ কান্নায় ভেঙে পড়ে বলেছিলেন, ‘ভুল হয়ে গিয়েছে!’ তবে ‘ভুল’টা কী, তা পরিষ্কার নয়। আপাতত অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। ময়না-তদন্তের রিপোর্টের অপেক্ষা করা হচ্ছে।

স্থানীয় সূত্রের খবর, পটারি রোডে বাবা-মা এবং ভাইয়ের সঙ্গে থাকতেন প্রিয়াঙ্কা। বাবা বিমলকান্তি দাস পুরসভার অবসরপ্রাপ্ত কর্মী। মা গৃহবধূ। মৃতার পরিবার সূত্রে দাবি, প্রিয়াঙ্কার সঙ্গে বেশ কিছু দিন ধরেই আইনের পড়ুয়া পীযূষের ঘনিষ্ঠতা ছিল। পীযূষদের আদি বাড়ি বিহারে হলেও থাকতেন প্রিয়াঙ্কাদের পাড়াতেই। এক প্রতিবেশী বলেন, ‘‘হাজরাবাগান রেল ক্রসিংয়ে প্রায়ই ওঁদের দেখা যেত।’’ বুধবার দুপুরেও প্রিয়াঙ্কাকে ফোন করে পীযূষই হাজরাবাগান রেল ক্রসিংয়ে ডেকেছিলেন বলে দাবি পুলিশের।

বৃহস্পতিবার দুপুরে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা গেল, আশপাশের রাস্তা বেশ ফাঁকা। কয়েকটি ট্রেন শুধু চলে যাচ্ছে দ্রুত গতিতে। স্থানীয়েরা জানালেন, ঘটনার পরে অনেকেই মৃতদেহ দেখতে গিয়েছিলেন। কিন্তু ঘটনাটি প্রথম থেকে চোখে পড়েনি কারও। স্থানীয় বাসিন্দা জয়ন্ত দে বলেন, ‘‘ওঁদের এক বার ঝগড়া করতে দেখেছি। তবে ছেলেটিই ওঁকে ট্রেনের সামনে ফেলে দিয়েছেন কি না, সেটা খেয়াল করিনি।’’ আপাতত পুলিশও এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজছে। রীতাদেবী এ দিন বলেন, ‘‘ওরা বিয়ে করবে বলেছিল। বলেছিলাম, পড়াশোনা কর, তার পরে বিয়ে দেব। আর কিছুই হওয়ার নেই। মেয়েটাকে ডেকে নিয়ে গিয়ে মেরেই ফেলল!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Death Girl Railway Crossing
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE