Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

ছেলের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিতে অ্যাম্বুল্যান্সে শুয়ে কোর্টে হাজির মা

আলিপুর আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে, হরিদেবপুর থানা এলাকার বাসিন্দা, আশি বছরের বৃদ্ধা লক্ষ্মীরানি দাসের স্বামী জিতেন্দ্র দাস ২০১১ সালে মারা যান। অভিযোগ, বাবার মৃত্যুর পরে বড় ছেলে জীবনকৃষ্ণ দাস ২০১২ সালে চিকিৎসা করানোর অছিলায় মাকে কলকাতার ব্যাঙ্কশাল আদালতে নিয়ে গিয়ে পৈতৃক বাড়ি ও সাড়ে তিন কাঠা জমি নিজের নামে জোর করে লিখিয়ে নিয়েছিলেন।

নিরুপায়: অ্যাম্বুল্যান্সে চেপেই আলিপুর আদালতে লক্ষ্মীরানি দাস। মঙ্গলবার। —নিজস্ব চিত্র।

নিরুপায়: অ্যাম্বুল্যান্সে চেপেই আলিপুর আদালতে লক্ষ্মীরানি দাস। মঙ্গলবার। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ৩০ অগস্ট ২০১৭ ০২:৩৮
Share: Save:

সম্পত্তি নিয়ে বিবাদ। অশক্ত, অসুস্থ, অশীতিপর মা তাই অ্যাম্বুল্যান্সে চেপে আদালতে এসেছিলেন ছেলের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিতে। কিন্তু শেষমেশ দুর্বল শরীরে সিঁড়ি ভেঙে বিচারকক্ষ অবধি পৌঁছতে না পেরে ফিরেই গেলেন তিনি। মঙ্গলবার এই ঘটনার সাক্ষী রইল আলিপুল আদালত চত্বর।

আলিপুর আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে, হরিদেবপুর থানা এলাকার বাসিন্দা, আশি বছরের বৃদ্ধা লক্ষ্মীরানি দাসের স্বামী জিতেন্দ্র দাস ২০১১ সালে মারা যান। অভিযোগ, বাবার মৃত্যুর পরে বড় ছেলে জীবনকৃষ্ণ দাস ২০১২ সালে চিকিৎসা করানোর অছিলায় মাকে কলকাতার ব্যাঙ্কশাল আদালতে নিয়ে গিয়ে পৈতৃক বাড়ি ও সাড়ে তিন কাঠা জমি নিজের নামে জোর করে লিখিয়ে নিয়েছিলেন। তার পরে পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করেন ওই বৃদ্ধা।

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, লক্ষ্মীরানি দাসের এক মেয়ে ও দুই ছেলে। জিতেন্দ্রবাবু ও লক্ষ্মীরানিদেবীর নামে দু’টি বাড়ি রয়েছে। এ ছাড়া, লক্ষ্মীরানিদেবীর নামে একটি সাড়ে তিন কাঠা জমিও রয়েছে। অভিযোগ, মায়ের নামে থাকা ওই তিন কাঠা জমি ও পৈতৃক একটি বাড়ি জোর করে লক্ষ্মীরানিদেবীর কাছ থেকে লিখিয়ে নেওয়ার পরে জীবনকৃষ্ণ ওই বাড়ি থেকে ছোট ভাই বাসুদেবকে তাড়িয়ে দেন।

লক্ষ্মীরানিদেবীর মেয়ে শিখা বলেন, ‘‘বড়দার অত্যাচারে ওই বাড়ি ছেড়ে চলে গিয়েছে ভাই। মা তাঁর নিজের নামের বাড়িতে চলে গিয়েছেন। ওই বাড়িতে দু’টি ঘর রয়েছে। একটি ঘরে মা থাকেন। পাশের ঘরটি ভাড়া দেওয়া হয়েছে।’’

আরও পড়ুন: বদলাচ্ছেন ভারত, কুর্নিশ সুবাসিনীকে

আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১২ সালে জীবনকৃষ্ণের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়। তার পর থেকেই আলিপুর দায়রা আদালতে মামলার বিচারপর্ব চলছে। এ দিন লক্ষ্মীরানিদেবীর সাক্ষ্য ছিল। শিখাদেবীর কথায়, ‘‘গত সপ্তাহ দুয়েক ধরে মা খুবই অসুস্থ। আমি ও ভাই মাকে নার্সিংহোমে ভর্তি করেছিলাম। কিছুটা সুস্থ হওয়ার পরে বাড়িতে নিয়ে আসি। সোমবার রাতে বড়দা মায়ের বাড়িতে গিয়ে প্রবল শাসানি দিতে থাকেন। আমি ওই সময়ে মায়ের কাছেই ছিলাম। মায়ের সমস্ত ওষুধ ফেলে দেওয়া হয়। সেই সঙ্গে নানা ভাবে হুমকি। ঘরে ঢুকে দাদা জিনিসপত্র উল্টে ফেলে দেন। আমরা রাতেই হরিদেবপুর থানায় অভিযোগ দায়ের করি।’’

আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন আলিপুর দায়রা আদালতে অ্যাম্বুল্যান্সে করে লক্ষ্মীরানিদেবীকে নিয়ে আসা হয়। কিন্তু তিনতলার বিচারকক্ষে যাওয়ার মতো শারীরিক অবস্থায় ছিলেন না তিনি। লক্ষ্মীরানিদেবী। তার পরেই বিচারক আগামী ২ সেপ্টেম্বর ফের সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য দিন ঘোষণা করেছেন বলে আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে। এ দিন লক্ষ্মীরানিদেবী বলেন, ‘‘আমি বড় ছেলেকে হাতজোড় করে অত্যাচার বন্ধ করতে অনুরোধ করেছিলাম। তা সত্ত্বেও আমার উপরে শারীরিক ও মানসিক অত্যাচার চালিয়ে গিয়েছে। ছোট ভাই ও বিবাহিত বোনের উপরেও অত্যাচার করে চলেছে জীবনকৃষ্ণ।’’

লক্ষ্মীরানিদেবীর মেয়ে শিখার অভিযোগ, ‘‘এলাকার বিভিন্ন দুষ্কৃতীর নাম করে আমাদের শাসানি দেওয়া হয়। আমরা এ নিয়ে একাধিক বার পুলিশে অভিযোগ করেছি।’’ অভিযোগের তদন্ত শুরু হয়েছে বলে হরিদেবপুর থানা সূত্রে জানা গিয়েছে। তবে জীবনকৃষ্ণবাবুর সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোনও মন্তব্য করবেন না বলে জানিয়ে দেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE