Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়

গরমিলের দায়ে শাস্তির মুখে অর্থ-অফিসার

ঠিকঠাক হিসেব দাখিল করতে না-পারার অভিযোগ উঠেছে তাঁর বিরুদ্ধে। এবং সেই আর্থিক অনিয়মের অভিযোগে দু’মাসেরও বেশি সময় ধরে সাসপেন্ড হয়ে আছেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিনান্স বা অর্থ-অফিসার। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রের খবর, তদন্তে যে নিয়ম মানা হয়নি, সেই অভিযোগ প্রাথমিক ভাবে প্রমাণিত হয়েছে। তাই ওই অফিসারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২৮ মার্চ ২০১৫ ০৩:১১
Share: Save:

ঠিকঠাক হিসেব দাখিল করতে না-পারার অভিযোগ উঠেছে তাঁর বিরুদ্ধে। এবং সেই আর্থিক অনিয়মের অভিযোগে দু’মাসেরও বেশি সময় ধরে সাসপেন্ড হয়ে আছেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিনান্স বা অর্থ-অফিসার। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রের খবর, তদন্তে যে নিয়ম মানা হয়নি, সেই অভিযোগ প্রাথমিক ভাবে প্রমাণিত হয়েছে। তাই ওই অফিসারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে।

কী কী অভিযোগ আছে?

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই অফিসারের বিরুদ্ধে মূলত নিয়মবহির্ভূত ভাবে স্থায়ী আমানত তৈরি এবং তার যথাযথ হিসেব দিতে না-পারার অভিযোগ উঠেছিল। সেই অভিযোগ খতিয়ে দেখার জন্য তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গড়েছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়-কর্তৃপক্ষ। শুক্রবার বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিনান্স কমিটির বৈঠকে তদন্ত কমিটির রিপোর্ট পেশ করা হয়। ওই রিপোর্ট নিয়ে আগামী মঙ্গলবার সিন্ডিকেটের বৈঠকে আলোচনা হবে বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। রিপোর্টে ঠিক কী আছে এবং অভিযোগ প্রমাণের জেরে ওই অর্থ-অফিসারের কী শাস্তি হতে পারে, সিন্ডিকেটে আলোচনার আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনও কর্তা সেই ব্যাপারে মুখ খুলতে রাজি নন।

অভিযুক্ত অর্থ-অফিসার আগেও অভিযোগ অস্বীকার করেছিলেন। এ দিনও তিনি বলেন, “আমি বেআইনি কিছু করিনি। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম মেনেই কাজ করেছি।” কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রের খবর, প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন বিষয়ের ভারপ্রাপ্ত যে-সব কমিটির সবুজ সঙ্কেত ছাড়া স্থায়ী আমানতের কাজে এগোনো যায় না, অনেক ফিক্সড ডিপোজিটের ক্ষেত্রেই তাদের অন্ধকারে রাখা হয়েছিল বলে তদন্তে জানা গিয়েছে। ২০০৩ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে বিভিন্ন রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে ২৬৯০টি স্থায়ী আমানত খোলা হয়েছিল। মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার পরে সেগুলি থেকে প্রায় ৭৮৩ কোটি টাকা পাওয়ার কথা। কিন্তু কোনও ক্ষেত্রেই আমানত খোলার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিনান্স কমিটি বা সিন্ডিকেটের মতো সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী সংস্থার অনুমোদন নেওয়া হয়নি। এমনকী দীর্ঘদিন ধরে জমতে থাকা স্থায়ী আমানতগুলির সুদের হিসেবেও গরমিল আছে বলে তদন্তে রিপোর্টে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে।

ওই গরমিল যে-সময়ে হয়েছে বলে অভিযোগ, তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের দায়িত্বে থাকা কর্তাদের বক্তব্যও জানতে চেয়েছিলেন তদন্তকারীরা। কেউ কেউ বলেছেন, তাঁরা এই বিষয়ে কিছু জানেন না। কেউ বা জানিয়েছেন, বিষয়টি ভুলে গিয়েছেন। তবে কয়েক জন প্রাক্তন কর্তা অনেক তথ্য দিয়েছেন বলে বিশ্ববিদ্যালয়েরই একটি সূত্রের খবর।

কলকাতার মতো ঐতিহ্যবাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্থিক হিসেবনিকেশ নিয়ে এত বড় মাপের গরমিলের অভিযোগ কার্যত নজিরবিহীন বলে শিক্ষা শিবিরের অভিমত। ব্যাপারটা শুধু গরমিলেই থেমে নেই। ওই অভিযোগের জেরে বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্থিক কাজকর্মেও সমস্যা হচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরে অর্থ-অফিসার সাসপেন্ড হয়ে থাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্থিক লেনদেন নিয়ে সমস্যা দেখা দিয়েছে বলে একটি সূত্রের খবর। গত কয়েক দিনে বিশ্ববিদ্যালয়ের দেওয়া কিছু চেক ‘বাউন্স’ করেছে অর্থাৎ ফিরে এসেছে। এই অবস্থায় শুক্রবার বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে কাউকে কোনও চেকই দেওয়া হয়নি। তাই বাইরের যে-সব সংস্থা বিশ্ববিদ্যালয়কে বিভিন্ন পরিষেবা দিয়ে থাকে, তারা বকেয়া প্রাপ্য পাচ্ছে না।

কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন পরিস্থিতি আগে কখনও তৈরি হয়েছে বলে মনে করতে পারছেন না প্রবীণ আধিকারিকেরা। উপাচার্য সুরঞ্জন দাস এই বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। মুখ খুলতে চাননি আর্থিক বিষয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্তা, বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য (অর্থ) সোনালি চক্রবর্তী বন্দ্যোপাধ্যায়ও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE