Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

কিছু লিখলে বার করে দেব

পিছু পিছুই সামনে এসেছে বেহালার অন্য এক স্কুলেও মাস তিনেক আগে ঘটে যাওয়া যৌন নির্যাতনের অভিযোগ।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০৬ ডিসেম্বর ২০১৭ ০৩:৪৫
Share: Save:

রানিকুঠির এক নামী স্কুলের শৌচালয়ে চার বছরের খুদে ছাত্রীকে যৌন নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে দুই শিক্ষকের বিরুদ্ধে। এর পিছু পিছুই সামনে এসেছে বেহালার অন্য এক স্কুলেও মাস তিনেক আগে ঘটে যাওয়া যৌন নির্যাতনের অভিযোগ।

অভিযোগ সামনে আসার পরে দু’টি ঘটনারই পুলিশি তদন্ত চলছে। পাশাপাশি, তুমুল প্রতিবাদে ফেটে পড়েছে সারা শহর। আর এই প্রতিবাদের আঁচে ক্রমাগত পুড়ছে সোশ্যাল মিডিয়াও। কিন্তু প্রশাসনিক তদন্ত বা বিচারের জন্য অপেক্ষা না করেই সমস্ত শিক্ষক সমাজকে যে ভাবে অপমান ও আক্রমণের শিকার করা হচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়া জুড়ে, তা শুধু অনাকাঙ্ক্ষিতই নয়, নিন্দনীয়ও।

বিভিন্ন রকম ট্রোল, মিম, কোট তৈরি করে বারবার নিচু করা হচ্ছে শিক্ষকতা পেশাকে। শিক্ষকদের নামে ছড়ানো হচ্ছে কুৎসা। আর এই সুযোগেই স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের একাংশও তাদের শিক্ষকদের বিরুদ্ধে তাঁদের মান, অভিমান, ক্ষোভ ব্যক্ত করছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। এই বিষয়টি নিয়ে এ বার ছাত্রছাত্রীদের সতর্ক করলেন স্কুল কর্তৃপক্ষ। মঙ্গলবার দমদমের একটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে রীতিমতো নোটিস দিয়ে জানিয়ে দিলেন, সোশ্যাল মিডিয়ায় স্কুলের শিক্ষকদের নিয়ে কোনও রকম বিতর্কিত মনোভাব প্রকাশ করলে, কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এই নোটিস ঘিরেই তৈরি হয়েছে বিতর্ক।

স্কুলের অভিভাবকদের একাংশের অভিযোগ, নোটিসে বলা হয়েছে, স্কুলের কিছু পড়ুয়া সোশ্যাল মিডিয়ায় স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের সম্পর্কে মন্তব্য করেছে। তাতে শিক্ষকদের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়েছে। সংশ্লিষ্ট ছাত্রদের সতর্কও করা হয়েছে। তবে এর পরেও যদি কোনও ছাত্র বা ছাত্রী সোশ্যাল মিডিয়ায় এই ধরনের বিতর্কিত মতামত রাখে, তা হলে তাকে ট্রান্সফার সার্টিফিকেট ধরিয়ে দেওয়া হবে।

অভিভাবকেরা জানাচ্ছেন, কোনও পড়ুয়া যদি এমন কাণ্ড ঘটিয়ে থাকে, সে ক্ষেত্রে শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগ এনে শাসন করা কিংবা তার অভিভাবককে ঘটনাটি জানানো-সহ সংশোধনের বেশ কিছু প্রক্রিয়া থাকে। তাঁদের ক্ষোভ, সে পথে না-হেঁটে সরাসরি স্কুল থেকে বার করে দেওয়ার ভয় দেখানো হচ্ছে পড়ুয়াদের। তাঁদের দাবি, এ ধরনের চরম পদক্ষেপের হুমকি না-দিয়ে যদি আর একট খতিয়ে দেখা হয় পড়ুয়াদের ক্ষোভের কারণ কী, তা উভয় পক্ষের জন্যই ভাল।

শিক্ষকদের একাংশের পাল্টা যুক্তি, শহরের দু’টি স্কুলের ঘটনা নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় গোটা শিক্ষক সমাজ সম্পর্কে যে নেতিবাচক মনোভাব তৈরি করা হচ্ছে তা গভীর দুঃখের। এমনকী ছাত্রছাত্রীদের একাংশও এর মধ্যে জড়িয়ে পড়ছে, যা কোনও ভাবেই অভিপ্রেত নয়।

দমদমের ওই স্কুলের অধ্যক্ষ বিশ্বরূপ মণ্ডল বলেন, ‘‘এটা একেবারেই স্কুলের অভ্যন্তরীণ বিষয়। এই বিষয়ে কোনও কথা বলব না।’’ স্কুল কর্তৃপক্ষেরই একাংশ আবার বলছে, ‘‘ছাত্রেরা ভুল করলে তাঁদের সতর্ক করাই উচিত। স্কুলের শিক্ষকদের সম্পর্কে সোশ্যাল সাইটে কোনও ছাত্র যা খুশি তাই মতামত দেবে, যাতে শিক্ষকদের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হবে, তা কোনও ভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।’’

অভিভাবকেরা বলছেন, ‘‘ছাত্র-ছাত্রীরা শিক্ষকদের ভাবমূর্তি নষ্ট করলে তা কিছুতেই মানা যায় না। সে ক্ষেত্রে অবশ্যই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ প্রয়োজন। কিন্তু এর সমাধান কোনও ছাত্রকে স্কুল থেকে বার করে দেওয়া নয়। বরং শিক্ষক-ছাত্র সম্পর্কে কেন এমন দূরত্ব তৈরি হচ্ছে, তা স্কুল কর্তৃপক্ষের দেখার প্রয়োজন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE