Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

জীর্ণ বাড়িতে মশার আঁতুড়ঘর, বাড়ছে ডেঙ্গি-আতঙ্ক

শোভাবাজারের হরঢোল লেনের দোতলা বাড়িতে দাঁড়িয়ে ক্ষোভ উগরে দিচ্ছিলেন বর্ষীয়ান তাপস মুখোপাধ্যায়। পাশের পুরনো বাড়িটি দীর্ঘদিন তালাবন্ধ থাকায় পুরকর্মীরা পরিষ্কার করতে পারেন না। তাপসবাবুর কথায়, ‘‘কাকে বলব? কত বার বলব? জঞ্জাল আর পাত্রে জল জমে বাড়ির কী অবস্থা দেখুন। ডেঙ্গি হবে কি না, সেই আতঙ্কে থাকি।’’

বেহাল: আহিরীটোলার একটি বিপজ্জনক বাড়ির মধ্যে জমে আবর্জনা। ছবি: রণজিৎ নন্দী

বেহাল: আহিরীটোলার একটি বিপজ্জনক বাড়ির মধ্যে জমে আবর্জনা। ছবি: রণজিৎ নন্দী

দেবাশিস ঘড়াই
শেষ আপডেট: ১৭ অগস্ট ২০১৮ ০৩:৩১
Share: Save:

ছাদের উপরে রাখা পাত্রে জল জমছে। নীচে এক ফালির মতো জায়গায় জঞ্জালের স্তূপ, ছোট প্লাস্টিকের কাপেও জল। বহু বার বলেও লাভ হয়নি। বাড়ির মালিকেরা কেউ এখানে থাকেন না। ফলে তাঁরা মশা নিয়ে মাথাও ঘামান না!

শোভাবাজারের হরঢোল লেনের দোতলা বাড়িতে দাঁড়িয়ে ক্ষোভ উগরে দিচ্ছিলেন বর্ষীয়ান তাপস মুখোপাধ্যায়। পাশের পুরনো বাড়িটি দীর্ঘদিন তালাবন্ধ থাকায় পুরকর্মীরা পরিষ্কার করতে পারেন না। তাপসবাবুর কথায়, ‘‘কাকে বলব? কত বার বলব? জঞ্জাল আর পাত্রে জল জমে বাড়ির কী অবস্থা দেখুন। ডেঙ্গি হবে কি না, সেই আতঙ্কে থাকি।’’

হরঢোল লেন সংলগ্ন নাথের বাগান স্ট্রিটে আর একটি বিপজ্জনক বাড়িতেও এক অবস্থা। পিছনের বাগানে জঞ্জাল। শোলার পাত্রে জল। শহরের অন্য বিপজ্জনক বাড়ির মতো ওই বাড়িতেও শরিকি ঝামেলা, মালিক-ভাড়াটে বিবাদ। ফলে জমা জল কে ফেলবে, কে-ই বা জঞ্জাল পরিষ্কার করবে, তা নিয়ে ঠেলাঠেলি চলছে। এক বাসিন্দার কথায়, ‘‘বাড়ি নিয়ে ঝামেলা চলছে। তার মধ্যেই যে যার মতো পারে, পরিষ্কার করে।’’

স্থানীয় কাউন্সিলর শিখা সাহা জানালেন, বাড়ির যা অবস্থা তাতে পুর কর্মীরাই ছাদে উঠে জঞ্জাল পরিষ্কার ও জমা জল ফেলতে ভয় পাচ্ছেন। তাঁর কথায়, ‘‘ছাদের সিঁড়ি নড়বড় করছে। পুরকর্মীদেরও তো প্রাণের ভয় রয়েছে। এমন বাড়িতে ওঠা যায় না কি?’’

ডেঙ্গি নিয়ে আলোচনাতেও সেই পুরনো, বিপজ্জনক বাড়ি কলকাতা পুরসভার মাথাব্যথা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কোথাও শরিকি বিবাদ, মালিক-ভাড়াটে ঝামেলা, কোথাও আবার বাড়ি তালাবন্ধ। ফলে সেগুলি পরিষ্কার করতে পারেন না পুর কর্মীরা। বাড়ির ভিতরে ডেঙ্গির জীবাণু বহনকারী এডিস ইজিপ্টাইয়ের বংশবিস্তারের জন্য কতটা অনুকূল পরিবেশ হয়ে রয়েছে কিছুই বোঝা যায় না।

পুলিশকে জানিয়ে এমন বাড়ির তালা ভেঙে পরিষ্কারের নিদান দিয়েছে পুরসভা। কিন্তু তা কতটা সম্ভব, প্রশ্ন তুলেছেন কাউন্সিলরদের একাংশই। শিখাদেবী বলছেন, ‘‘তালা ভেঙে কি ঢোকা যায়?’’ আর এক কাউন্সিলরের কথায়, ‘‘অনেক কিছু নির্দেশ দেওয়া যায়, কিন্তু মাঠে নেমে তো আমাদেরই কাজ করতে হয়। ও ভাবে তালা ভাঙা যায় না।’’ ৫১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তথা ছ’নম্বর বরোর চেয়ারম্যান সঞ্চিতা মণ্ডল বলেন, ‘‘তালা মারা বাড়ির ভিতরের কী পরিস্থিতি, জানতেও পারি না।’’

বি কে পাল অ্যাভিনিউয়ের একটি পুরনো বাড়িতে দেখা গেল, অব্যবহৃত একটি জলের ট্যাঙ্ক খোলা অবস্থায় পড়ে। পাশেই সিমেন্টের তৈরি আর একটি অব্যবহৃত ট্যাঙ্ক। লোহার ঢাকনা খোলা। জল জমছে ভিতরে। কার দায়িত্ব ওই জায়গা পরিষ্কার করার, ওই বাড়ির ভাড়াটেরা তা জানেন না।

ওই অঞ্চলেরই একটি বাড়িতে খোলা রয়েছে জলের ট্যাঙ্কের ঢাকনা (ডান দিকে)। ছবি: রণজিৎ নন্দী

ফলে পুরসভা ডেঙ্গি রোধের যত উপায়ই বলুক না কেন, শহরে ডেঙ্গির বিরুদ্ধে লড়াই এখনও ‘অসম’ বলেই মনে করছেন অনেকে। ডেঙ্গি লড়াইয়ে এত ফাঁকফোকর রয়েছে, যে কোনও মুহূর্তে তার প্রাদুর্ভাব ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা। ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তথা দু’নম্বর বরোর চেয়ারম্যান সাধন সাহা বলেন, ‘‘বিপজ্জনক বাড়ির মধ্যে ডেঙ্গি পরিস্থিতি কেমন, তা নিয়ে প্রতিটি বরো-বৈঠকেই আলোচনা হচ্ছে। কী ভাবে তালা ভেঙে ঢোকা যায়, তা নিয়ে পুলিশের সঙ্গে কথা বলছি।’’ এক পুর স্বাস্থ্যকর্তার কথায়, ‘‘পুরকর্মীরা যতটা পারেন পরিষ্কার করেন। কিন্তু ওই বাসিন্দারা সচেতন না হলে তো মুশকিল।’’

ফলে বিপজ্জনক বাড়ি ভেঙে শুধু প্রাণহানির আশঙ্কাই নয়। সেগুলোয় জমা জল এবং জঞ্জালের স্তূপে যে ভাবে ডেঙ্গির আশঙ্কা বাড়ছে, সেটাই উদ্বেগ বাড়াচ্ছে কাউন্সিলরদের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Dengue Old House Abandoned Mosquito
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE