Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

বরাহনগরে তরুণীর মৃত্যুতে অভিযুক্ত মা-ছেলে এখনও অধরাই

এক তরুণীর মৃত্যুই যেন চোখ খুলে দিল গোটা এলাকার! দিনের পর দিন বরাহনগরের ফরোয়ার্ড কলোনির বাসিন্দা প্রীতম দেব স্থানীয় মেয়েদের সঙ্গে অভব্য আচরণ করলেও এক ‘অজানা ভয়’-এ কেউ প্রতিবাদ করতেন না।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২৫ অগস্ট ২০১৫ ০২:১১
Share: Save:

এক তরুণীর মৃত্যুই যেন চোখ খুলে দিল গোটা এলাকার!

দিনের পর দিন বরাহনগরের ফরোয়ার্ড কলোনির বাসিন্দা প্রীতম দেব স্থানীয় মেয়েদের সঙ্গে অভব্য আচরণ করলেও এক ‘অজানা ভয়’-এ কেউ প্রতিবাদ করতেন না। কিন্তু ওই যুবকের কটূক্তি, কুপ্রস্তাবের প্রতিবাদ করে উল্টে অপমানিত হয়ে এলাকারই এক তরুণী আত্মঘাতী হওয়ার পরে প্রতিবাদে এগিয়ে এলেন স্থানীয়েরা।

তাঁদের অভিযোগ, আগেও কিছু তরুণীর সঙ্গে অভব্য আচরণ করেছে দ্বাদশ শ্রেণির পড়ুয়া প্রীতম। কিন্তু তার পরিবারের সঙ্গে শাসক দলের স্থানীয় নেতাদের যোগ থাকায় কেউ প্রতিবাদের সাহস পেতেন না। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রতিবেশীর কথায়, ‘‘দিন আনি দিন খাই। তাই ঝামেলায় জড়াতে চাইনি। কিন্তু একটা ছেলের অভব্য আচরণের জন্য এক তরুণী মরে যাবে এ হতে দেওয়া যায় না।’’ যদিও বরাহনগরের তৃণমূল নেতৃত্ব স্পষ্ট জানান, ওই যুবককে সমর্থনের প্রশ্নই নেই। তৃণমূলের সঙ্গে ওই পরিবারের সম্পর্ক ছিল না।

তরুণীকে মারধর, অপমান ও আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগে রবিবারই রানা রায় ওরফে বুড়ো, শিবানী রায়, কমল কর, শুক্লা কর, পম্পা সরকার, টুম্পা ভৌমিক নামে ছ’জন গ্রেফতার হয়। সোমবার ব্যারাকপুর আদালতে বিচারক ৪ দিনের জন্য ধৃত দুই যুবককে পুলিশ হেফাজত ও মহিলাদের জেল হেফাজত দেন। পুলিশ কমিশনার নীরজ সিংহ বলেন, ‘‘প্রীতম, তার মা অচর্নার খোঁজ চলছে।’’

সোমবার ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায় এলাকায় রয়েছে পুলিশি পাহারা। স্থানীয় মহিলারা প্রীতম, তার মা ও বাবা বিশু দেবের শাস্তির দাবি জানান। স্থানীয়েরা জানান, ওই তরুণীর গায়ে আগুন দেওয়ার খবর পেয়ে তারা পালায়।

স্থানীয় এক মহিলা বলেন, ‘‘ইদানীং ছেলেটা এমন অভব্য আচরণ শুরু করলেও ওর মা-বাবা কিছু বলত না। আমরাও ভয়ে কিছু বলতাম না।’’ এক প্রতিবেশী চন্দনা দাস বলেন, ‘‘আগে প্রীতমদের পাশে ভাড়া থাকতাম। আমার ছোট মেয়ের সঙ্গে এমন আচরণ করে যে ভয়ে পাশের পাড়ায় চলে যাই।’’

কিন্তু ‘ভয়’টা কিসের? স্থানীয়দের অভিযোগ, শাসক দলের মিটিং-মিছিলে প্রীতম ও অচর্নাকে দেখা যেত। বাইরের অনেক ‘বদমাশ’ ছেলের সঙ্গে ঘুরত প্রীতম। আত্মঘাতী তরুণীর দাদা বলেন, ‘‘প্রথম যখন প্রীতম ও অর্চনা বোনকে মারল তখন স্থানীয় ক্লাবে জানাই। ওঁরা বলেন, পরে দেখবেন। স্থানীয় তৃণমূল নেতা নান্টু নন্দীর কাছে অভিযোগ করলেও তিনি কিছুই করেননি।’’ যদিও নান্টুবাবু বলেন, ‘‘আমাকে কেউ কিছু জানাননি। জানলে এই ঘটনা সমর্থন করতাম না।’’

এ দিন ওই তরুণীর বাড়িতে বিজেপি নেত্রী রূপা গঙ্গোপাধ্যায়, জয়প্রকাশ মজুমদার, গোপাল সরকার-সহ কয়েক জনের একটি প্রতিনিধি দল যায়। রূপা বলেন, ‘‘অনেক অপমান সহ্য করেই মেয়েটি আত্মহত্যা করে। শাসক দলের মদতে তাদের ছেলেরা এ সব করছে। পুলিশ সক্রিয় হলে এমন হত না। রাজনীতি করতে নয়, এক জন মহিলা হয়ে মানবিকতার খাতিরে অন্য মহিলার প্রতি হওয়া অন্যায়ের সুবিচারের জন্য এসেছি।’’ পরে বরাহনগর থানায় স্মারকলিপি দেন রূপারা।

এ দিন মহিলা কমিশনের প্রাক্তন সদস্য ভারতী মুৎসুদ্দি-সহ বামপন্থী বুদ্ধিজীবী সংগঠনের সদস্যেরা তরুণীর বাড়িতে যান। স্থানীয় তৃণমূল কাউন্সিলর অঞ্জন পাল বলেন, ‘‘সিপিএম চক্রান্ত করে আমাদের নাম জড়াচ্ছে। প্রীতম বা তার পরিবারের কেউ আমাদের দলের সঙ্গে যুক্ত নয়। মৃত্যু নিয়ে রাজনীতি করা হচ্ছে।’’ বরাহনগরের বিধায়ক তৃণমূলের তাপস রায় বলেন, ‘‘অভিযুক্তদের সঙ্গে দলের যোগ নেই। পুলিশকে বলেছি কাউকেই যেন রেয়াত করা না হয়।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE