Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

মাঝ গঙ্গায় জাহাজে দুর্গাপুজো, বন্ধ করে দিল নবান্ন

নবান্নের অভিযোগ, বিজ্ঞাপনের ঢাক পেটানো শুরু হলেও হাওড়া পুলিশকে এ বিষয়ে পুরো অন্ধকারে রাখা হয়েছিল। হাওড়া পুলিশের তরফে বিষয়টি নিয়ে মন্তব্য করা হয়নি।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০৩ অক্টোবর ২০১৮ ০২:৪০
Share: Save:

চমকের তাস ছিল মাঝগঙ্গা। তাতেই কপাল পুড়ল পুজোর। বিজ্ঞাপনের ঢক্কানিনাদে শহর কাঁপানোর পরে নবান্নের শীর্ষ স্তরের নির্দেশে বন্ধ হয়ে গেল হাওড়া স্টেশনের কাছে রামকৃষ্ণপুর ঘাটে জাহাজে শোভিত দুর্গাপুজো।

রাজ্যের মন্ত্রী অরূপ রায় ছিলেন এ পুজোর অভিভাবক। তৃতীয়ার দিন মাঝগঙ্গায় জাহাজে চেপে স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সেই পুজোর উদ্বোধন করতে চলেছেন বলে দাবি করেছিলেন পুজোকর্তারা। কিন্তু তাতেও রেহাই মিলল না। নবান্নের শীর্ষ স্তর থেকে বিষয়টি খতিয়ে দেখে মঙ্গলবার ওই পুজো বন্ধ করার স্পষ্ট নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। নবান্নের বক্তব্য, ভিড়ের চাপে জীবনের ঝুঁকি থাকলে তেমন পরিস্থিতি প্রশাসন কোনও ভাবেই বরদাস্ত করবে না। নদীবক্ষে জাহাজে উঠে বা নদীর পাড়ে দাঁড়িয়ে তুমুল ভিড়ে প্রতিমা দর্শন একেবারেই নিরাপদ বলে মনে করছে না রাজ্য সরকার।

বিষয়টি নিয়ে যারপরনাই বিব্রত ওই পুজোর উদ্যোক্তা রামকৃষ্ণ স্বামীজি স্মৃতিসঙ্ঘের ‘গডফাদার’ তথা রাজ্যের সমবায়মন্ত্রী অরূপ রায়। তিনি বলেন, ‘‘এ বিষয়ে মন্তব্য করতে পারব না।’’ পুজোর কর্তা সত্যব্রত সামন্ত অবশ্য বোঝানোর চেষ্টা করেন, ‘‘বিষয়টি নিয়ে ভুল বোঝাবুঝি তৈরি হয়েছিল। জাহাজে উঠে নদীর বুকে ঠাকুর দেখতে গিয়ে লোকে পড়ে যেতে পারে ভেবে প্রশাসন দুশ্চিন্তায়। কিন্তু আমরা তো নদীর পাড়ে কংক্রিটের রেলিংয়ের সুরক্ষায় ঠাকুর দেখানোর বন্দোবস্ত করেছিলাম। তাতে সমস্যা হত না!’’

কিন্তু প্রশাসন বিষয়টি অন্য চোখে দেখছে। নদীর পাড়ে ঝুঁকে এত লোক ঠাকুর দেখলে সেটাও একই রকম বিপজ্জনক বলে সরকারের অভিমত। একই সঙ্গে প্রশাসনের তরফে পুজো কমিটির বিরুদ্ধে আরও একটি গুরুতর অভিযোগ উঠে এসেছে। নবান্নের অভিযোগ, বিজ্ঞাপনের ঢাক পেটানো শুরু হলেও হাওড়া পুলিশকে এ বিষয়ে পুরো অন্ধকারে রাখা হয়েছিল। হাওড়া পুলিশের তরফে বিষয়টি নিয়ে মন্তব্য করা হয়নি। তবে জনৈক পুলিশকর্তার কথায়, ‘‘বিজ্ঞাপনী প্রচারের আগে এ পুজোর কথা আমাদের জানা ছিল না।’’ তবে পুজোর আকর্ষণের পারদটা যে চড়ছে, তা বুঝেছিলেন কর্তারা। তার উপরে পুজোর পিছনে খোদ এক মন্ত্রী আছেন, সেটা ভেবেই এ পুজোর ভিড় সামলানোর পরিকল্পনা করছিলেন তাঁরা।

গঙ্গার ধারে গ্র্যান্ড ফোরশোর রোডে যান চলাচল বন্ধ রেখে পুজোপাগলদের ঠাকুর দেখানো যায় কি না, খতিয়ে দেখছিল পুলিশ। শেষ পর্যন্ত অবশ্য কিছুই করতে হচ্ছে না তাদের। কার্যত ত্রাতার ভূমিকায় অবতীর্ণ নবান্ন কর্তৃপক্ষই। ফলে, বড় ঝুঁকি নিয়ে পুজোর ভিড় সামলানোর দায় পুলিশের উপরে বর্তাচ্ছে না। পুজোর উদ্যোক্তারা অবশ্য এখনও হাল পুরোপুরি ছাড়ছেন না। প্রশাসনকে বুঝিয়ে একটা রাস্তা বার করতে তাঁরাও মরিয়া। তাতে অন্তত গোটা পুজোটা জলে পড়বে না।

তবে হাওড়ার পুজোর এই দুর্বিপাক অনেককেই মনে করিয়ে দিচ্ছে তিন বছর আগের এক পুজোর কথা। সে বার দেশপ্রিয় পার্কের পুজো ঘিরেও পরিস্থিতি আরও বেশি ঘোরালো হয়ে উঠেছিল। ‘সব থেকে বড় দুর্গা’ নাম দিয়ে বিজ্ঞাপনী গিমিকের আশ্রয় নেয় দেশপ্রিয় পার্কের পুজো। মণ্ডপের দুর্গা নয়, মণ্ডপের গায়ে ৮৮ ফুটের ফাইবারের প্রতিমাকেই ‘সব থেকে বড় দুর্গা’র তকমা দিয়ে লোক টানার চেষ্টা করেছিল ওই পুজো। জনবিস্ফোরণের জেরে সে বার একেবারে শেষ মুহূর্তে পঞ্চমীর দিন পুজো বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয় লালবাজার। এ বার অবশ্য তুলনায় কিছুটা আগে প্রশাসন সক্রিয় হয়েছে। দেশপ্রিয় পার্কের পুজোর সঙ্গে জড়িয়ে ছিলেন শাসক দলের এক পুর নেতা। এ বার হাওড়ার পুজোটির নেপথ্যে শাসক দলের মন্ত্রী। প্রশ্ন উঠেছে, প্রতিবারই কি কিছুটা রাজনৈতিক প্রভাবের জেরে পুজোর আয়োজনের আগে শেষ মুহূর্তে প্রশাসনের উপরে চাপ তৈরি হয়?

এ যাত্রা অবশ্য নবান্নের হস্তক্ষেপেই তীরে এসে কার্যত জলে ডুবছে পুজোর আয়োজকদের উচ্চাকাঙ্ক্ষা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Durga Puja Ship Mallikpur Nabanna
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE