বাদুড়ঝোলা: মেট্রো হোক বা বাস, ভিড় উপচে পড়ল শহর জুড়েই। শনিবার। —নিজস্ব চিত্র।
সোনারপুর থেকে পাঁচ নম্বর সেক্টর, এই পথ পেরোতে শনিবার সময় লাগল প্রায় তিন ঘণ্টা। পাঁচ নম্বর সেক্টরে কর্মরত রূপক চট্টোপাধ্যায় এ দিন ভোগান্তির আশঙ্কা করে হাতে ঘণ্টা দুই সময় নিয়ে সোনারপুর থেকে বেরিয়েছিলেন। কিন্তু ৪৫ মিনিট গড়িয়ে যায় তাঁর অটো পেতেই। এর পরে গড়িয়া থেকে সরকারি পরিবহণ নিগমের এসি বাস পেলেও বাইপাসে চূড়ান্ত যানজটে পড়তে হয় তাঁকে। মিছিলে আসা শয়ে শয়ে বাস এবং ম্যাটাডরের চাপে কার্যত তখন থমকে বাইপাস। সব বাধা পেরিয়ে সওয়া বারোটায় অফিসে পৌঁছন তিনি।
এ দিন সকালে সাঁতরাগাছি স্টেশনে স্ত্রী এবং ছেলেকে নিয়ে স্টিল এক্সপ্রেস থেকে নামেন জিতেন্দ্র পাসোয়ান নামে এক যাত্রী। ভবানীপুরের যাওয়ার জন্য আধ ঘণ্টার চেষ্টাতেও অ্যাপ-ক্যাব ধরতে পারেননি তিনি। শেষে ছ’শো টাকায় একটি হলুদ ট্যাক্সি ভাড়া করেন। মিছিল শুরু হতেই হাওড়ায় যানজটে নাকাল হতে হয় যাত্রীদের। হাওড়া এবং শিয়ালদহের মতো স্টেশন চত্বর মিছিলে আসা কর্মী-সমর্থকদের কার্যত দখলে চলে যায়। ফলে হাওড়া, শিয়ালদহ এবং কলকাতা স্টেশনে ট্রেন ধরতে যাওয়া এবং ট্রেন থেকে নামা যাত্রীদের নাজেহাল হতে হয়েছে। পাশাপাশি জেলা ও শহরতলি থেকে সমাবেশে আসা কর্মী-সমর্থকদের ভিড়ে ঠাসা ছিল লোকাল ট্রেনও।
এ দিন যে বেসরকারি বাস এবং মিনিবাস পথে নামবে না, তা আগেই জানিয়েছিলেন বাসমালিক সংগঠনের কর্তারা। তবে বিকেলের পর থেকে হাতে গোনা কয়েকটি রুটে বেসরকারি বাস চলেছে। এ দিকে, সরকারি বাস রাস্তায় থাকবে বলে জানিয়েছিলেন নিগমের আধিকারিকেরা। বাস্তবে সকাল ৯টা বাজতেই মধ্য কলকাতার বেশির ভাগ রাস্তায় ট্র্যাফিকের বিধি-নিষেধে তা-ও বন্ধ ছিল। দুপুর আড়াইটে-তিনটে পর্যন্ত শহরের মূল বাণিজ্যিক এলাকায় সরকারি বাসের দেখা মেলেনি। তবে বাইপাস, নিউ টাউন, সল্টলেক, বিমানবন্দর এলাকায় সরকারি বাস চলেছে। রাজ্য পরিবহণ নিগমের ডিরেক্টর নারায়ণস্বরূপ নিগমের দাবি, “শনিবার হওয়া সত্ত্বেও সপ্তাহের অন্য দিনের মতোই ছিল বাস। কর্মী এবং আধিকারিকেরা সকাল থেকেই পরিস্থিতি সামাল দিতে যথাসাধ্য চেষ্টা চালিয়ে গিয়েছেন।”
হুগলি নদী জলপথ পরিবহণ সমবায় সমিতি সূত্রে খবর, এ দিন সকাল ৬টা থেকে দুপুর ২টো পর্যন্ত প্রায় এক লক্ষ যাত্রী পারাপার করেন। যাঁদের অধিকাংশই সমাবেশে যোগ দিতে আসা কর্মী ও সমর্থক। নিরাপত্তার কারণে লঞ্চঘাটে বাড়তি স্বেচ্ছাসেবক মোতায়েন করা হয়েছিল।
সকাল ৯টার পর থেকে অ্যাপ-ক্যাব কার্যত শহরের রাস্তা থেকে উবে গিয়েছিল বলে অভিযোগ বহু মানুষের। অভিযোগ, অনেক ক্যাবচালকই যাত্রী তুলতে গন্তব্যে পৌঁছতে না পারার আশঙ্কায় অ্যাপ বন্ধ রেখেছিলেন।
সকাল থেকে উত্তর এবং দক্ষিণ কলকাতার বিভিন্ন রুটে অটো দেখা যায়নি। হাতে গোনা দু-তিনটি রুট ছাড়া স্ট্যান্ডগুলি ছিল সুনসান। আইএনটিটিইউসি-র উত্তর কলকাতা অটো ইউনিয়নের নেতা মানা চক্রবর্তী জানান, তাঁদের ইউনিয়নের সদস্যদের বড় অংশ এ দিন শিয়ালদহ থেকে তৃণমূলের শহিদ দিবসের মিছিলে যোগ দেন। দক্ষিণ কলকাতার অটো ইউনিয়নের নেতা গোপাল সুতার জানান, তাঁদের সংগঠনের বেশির ভাগ সদস্যই এ দিন সমাবেশে যোগ দিয়েছেন। তবে রুট বন্ধ রাখার কথা তাঁরা স্বীকার করতে চাননি।
বাস, অটো ও অ্যাপ-ক্যাব কার্যত বন্ধ থাকায় কালীঘাট, এসপ্ল্যানেড, গিরিশ পার্ক, শ্যামবাজারের মতো মেট্রো স্টেশনগুলোয় ভিড় উপচে পড়তে দেখা গিয়েছে। তবে অন্য দিনের মতোই এ দিনও ভুগিয়েছে মেট্রো। দুপুরের পর থেকে মেট্রোর সময়সূচি অনেকটা অনিয়মিত হয়ে পড়ে বলে অভিযোগ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy