Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

বাতি নেই, ব্যাজ আছে

লাল বাতি গিয়েছে তো কুছ পরোয়া নেহি। দাপট বোঝাতে দলের ব্যাজই কাফি! গাড়ির মাথায় লাল বাতি লাগিয়ে ঘোরার নিষেধাজ্ঞার পরে এটাই এখন শহরের রাজনীতির দস্তুর।

সঙ্কেত: প্রভাবের গাড়ি। ছবি: সুমন বল্লভ

সঙ্কেত: প্রভাবের গাড়ি। ছবি: সুমন বল্লভ

অনুপ চট্টোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ১৪ মে ২০১৭ ০১:১২
Share: Save:

লাল বাতি গিয়েছে তো কুছ পরোয়া নেহি। দাপট বোঝাতে দলের ব্যাজই কাফি! গাড়ির মাথায় লাল বাতি লাগিয়ে ঘোরার নিষেধাজ্ঞার পরে এটাই এখন শহরের রাজনীতির দস্তুর।

দিন পনেরো আগের ঘটনা। লাল বাতি লাগানো গাড়িতে বিবাদী বাগে সরকারি অফিসে ঢুকলেন শাসক দলের এক নেতা। তিনি সরকারি নিগমের পদাধিকারীও বটে। লাল বাতির পাশাপাশি গাড়ির ড্যাশবোর্ডে সারি দিয়ে সাজানো তেরঙ্গা ব্যাজ। ১ মে থেকে লাল বাতি নিষিদ্ধ হলেও এ ভাবেই চলতে অভ্যস্ত তিনি। তবে তাঁর চালক বলছেন, ‘‘লাল বাতি খুলতে হলেও পরোয়া করি না। ব্যাজটাই যথেষ্ট কাজের।’’

চালকের ওই ‘দম্ভ’ যে অতিশয়োক্তি নয়, তা মালুম হয়েছে চাঁদনি চক মেট্রোর সামনে একটি ঘটনায়। দিন কয়েক আগে একটি জিপ ‘ব্যাক’ করতে গিয়ে ধাক্কা মারে রাস্তার পাশে দাঁড়ানো একটি গাড়িতে। শুরু হয় বচসা। ছুটে আসে ট্র্যাফিক পুলিশ। জিপ চালককে ধমকাতে গিয়ে চোখ পড়ে ড্যাশবোর্ডে থাকা সারি সারি তেরঙ্গা ব্যাজে। হঠাৎ বদলে যায় পুলিশের সুর।

পুলিশ দেখে বোধহয় ভরসা পেয়েছিলেন গাড়িচালক। কিন্তু দেখা গেল, জিপের চালককে ছেড়ে তাঁকেই ধমকাচ্ছে পুলিশ। কেন তিনি রাস্তার পাশে গাড়ি রেখেছেন, প্রশ্ন তোলে পুলিশ। শুরু হয় বেআইনি পার্কিং নিয়ে তিরস্কার। ধাক্কা খাওয়া গাড়ির চালক বলতে গিয়েছিলেন, জিপটিও তবে বেআইনি পার্কিং করেছিল। তাতে কান দেয় কে? পুলিশকর্মীর মন্তব্য ছিল, ‘‘বেশি তর্ক করবেন না। তাড়াতাড়ি যান।’’

বড় নেতারা তো ছিলেনই, পুরসভার কাউন্সিলরেরাও লাল বাতি নিয়ে দাপিয়ে বেড়াতেন। পুরসভার অন্দরে অনেকে বলছেন, পরিবর্তনের জমানায় যেন এই ‘লাল’-এর হিড়িক আরও বেড়েছিল। বাতিলের পরে লাল বাতি খুলে ফেলেছেন। বদলে এখন তেরঙ্গার ছড়াছড়ি! শুধু শাসক দল নয়, কংগ্রেস-বিজেপি-র কিছু নেতাও গাড়িতে ব্যাজের সংখ্যা বাড়াচ্ছেন। রাজনীতির লোকেরাই বলছেন, ব্যাজ-প্রেম ছোট নেতাদের মধ্যে বেশি। কারণ, মন্ত্রীরা পুলিশের পাইলট নিতে পারেন। আইনের বলে পুলিশের লাল বাতি তো রয়েছেই।

নেতারা অবশ্য এই ব্যাজ-দাপট মানতে চাননি। তবে এত ব্যাজ কেন গাড়িতে? দক্ষিণ শহরতলির এক বিধায়ক বলেন, ‘অনেক অনুষ্ঠানেই ব্যাজ পরায়। সেগুলিই গাড়িতে পড়ে থাকে। ও দেখিয়ে কোনও সুবিধা মেলে নাকি!’’ পুলিশকর্তারা সরাসরি কিছু বলতে নারাজ। তবে ব্যাজ সাজিয়ে যে দাপট দেখানো হয়, তা মানছেন অনেকেই। বলছেন, ‘‘এখন তো পাড়ার এলেবেলে নেতারাও ব্যাজ লাগিয়ে আইন ভাঙছে।’’

কিন্তু পুলিশ তা মানছে কেন? ট্র্যাফিক পুলিশের এক কর্তা মেনে নেন, গত চার–পাঁচ বছর এই প্রবণতাটা বেড়েছে। তাঁর বক্তব্য, আইন ভাঙলে কাগজ-কলমে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা রয়েছে। কিন্তু বাস্তব হল, গাড়িতে ব্যাজ, পতাকা দেখলে পুলিশকর্মীরা বাড়তি সমীহ দেখান। একটা ‘কেস’ দিলে ১০টা ফোন আসবে। ‘‘সাধ করে রাজনৈতিক ঝামেলায় জড়াতে আর কে চায়?’’ বক্তব্য তাঁর। প্রভাবের প্রতীক বোধ হয় একেই বলে!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Red Beacon Badge Political Leaders
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE