Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

ডেঙ্গিতে ভুগে ফের মৃত্যু বিধাননগরে

ফের ডেঙ্গিতে এক জনের মৃত্যু হল বিধাননগর পুরসভা এলাকায়। দিন সাতেক আগেই বিধাননগরের সুকান্তনগরে ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছিল কলকাতা পুলিশের কনস্টেবল সমীর মণ্ডলের (৫২)।

বুকভাঙা: প্রণব রায়ের (ইনসেটে) মৃত্যুর খবর পাওয়ার পরে তাঁর স্ত্রী মৈত্রেয়ীকে সান্ত্বনা পরিজনেদের। নিজস্ব চিত্র

বুকভাঙা: প্রণব রায়ের (ইনসেটে) মৃত্যুর খবর পাওয়ার পরে তাঁর স্ত্রী মৈত্রেয়ীকে সান্ত্বনা পরিজনেদের। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১৮ নভেম্বর ২০১৮ ০২:১১
Share: Save:

ফের ডেঙ্গিতে এক জনের মৃত্যু হল বিধাননগর পুরসভা এলাকায়। দিন সাতেক আগেই বিধাননগরের সুকান্তনগরে ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছিল কলকাতা পুলিশের কনস্টেবল সমীর মণ্ডলের (৫২)। তার পরেই শুক্রবার রাতে ডেঙ্গিতে মারা গেলেন হাতিয়াড়ার একটি আবাসনের বাসিন্দা প্রণব রায় (৪৫)। প্রণব বেশ কিছু দিন ধরেই ভেন্টিলেশনে ছিলেন। মৃত্যুর কারণ হিসেবে তাঁর ডেথ সার্টিফিকেটে লেখা আছে, ‘ডেঙ্গি শক’ এবং তার সঙ্গে ‘নিউমোনিয়া’, ‘সেপটিক শক’ ও ‘মাল্টি-অর্গান ফেলিওর।’

প্রণবের পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, দুর্গাপুজোর দশমীর দিন তিনি জ্বরে আক্রান্ত হন। ওই রাতেই জ্বর অনেকটা বেড়ে যাওয়ায় পরদিন তাঁকে বাগুইআটির এক নার্সিংহোমে ভর্তি করা হয়। সেখানে রক্ত পরীক্ষা করে ডেঙ্গি ধরা পড়তেই তাঁকে দ্বাদশীর দিন সল্টলেকের একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। প্লেটলেট ১৫ হাজারে নেমে আসে। সেখানে অবস্থার আরও অবনতি হওয়ায় প্রণবকে ভেন্টিলেশনে দেওয়া হয়। কিডনি বিকল হতে থাকায় শুরু হয় ডায়ালিসিস। এর পরে টানা দু’সপ্তাহ ভেন্টিলেশনেই রাখা হয় প্রণবকে।

চিকিৎসকেরা জানান, প্রণবের প্লেটলেট পরে কিছুটা বাড়লেও তাঁর কিডনি ও লিভারের অবস্থা খারাপ হতে থাকে। বেশ কয়েক বার ডায়ালিসিস করতে হয়। দিন কয়েক আগে তাঁকে ভেন্টিলেশন থেকে বার করা হলেও অবস্থার উন্নতি হয়নি। শুক্রবার রাতে পরপর দু’বার হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হন তিনি। এর পরে রাত ১১টা ৪০ নাগাদ প্রণবের মৃত্যু হয়।

কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগের ছাত্র প্রণব চাকরিজীবনের প্রথম কয়েক বছর সাংবাদিকতা করলেও পরে একটি প্রাথমিক স্কুলে শিক্ষকতার চাকরি নেন। নিজের পাড়া ও কর্মক্ষেত্রে জনপ্রিয় প্রণব অন্যের বিপদে-আপদে ঝাঁপিয়ে প়ড়তেন বলেই জানিয়েছেন পরিচিত ও পরিজনেরা। তাঁর এই অকালমৃত্যুকে তাই মানতে পারছেন না কেউই। প্রণব আদতে বালুরঘাটের বাসিন্দা। এখানে রাজারহাটের একটি প্রাথমিক স্কুলে শিক্ষকতা করতেন। তাঁর স্ত্রী মৈত্রেয়ী বসুও ওই এলাকার অন্য একটি প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষিকা। মৈত্রেয়ী বলেন, ‘‘আমার স্বামীর জ্বর হওয়ার পরের দিনই রক্ত পরীক্ষা করিয়েছিলাম। সল্টলেকের এক বড় হাসপাতালে ভর্তি করাই। এত দিন ধরে সেখানে চিকিৎসা হওয়ার পরেও ওকে সুস্থ করে তোলা গেল না। ওর শরীরে সংক্রমণের তীব্রতা ক্রমেই বেড়ে যেতে লাগল।’’

আরও পড়ুন: বাড়িতে চড়াও হয়ে ‘হুমকি’, হৃদ্‌রোগে মৃত্যু হল মহিলার

প্রণব যে চিকিৎসকের অধীনে ছিলেন, সেই পার্থসারথি ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘সংক্রমণটা এতটাই বেড়ে গেল যে, লিভার থেকে শুরু করে কিডনি, ফুসফুসেও ছড়িয়ে পড়েছিল। ফলে ওঁর প্রতিরোধক্ষমতা খুবই কমে গিয়েছিল। অ্যান্টিবায়োটিক দিয়েও কোনও কাজ হচ্ছিল না।’’ চিকিৎসকদের মতে, এ বছর ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা হয়তো গত বছরের তুলনায় কিছুটা কম, কিন্তু ডেঙ্গি রোগীদের ‘মাল্টি-অর্গান ফেলিওর’ বেশি হচ্ছে। ডেঙ্গি ভাইরাসের চরিত্র বদল হওয়াতেই এই জটিলতা বলে অনেক চিকিৎসকের মত।

নভেম্বর মাস পড়ে গেলেও বিধাননগর পুরসভার বেশ কিছু এলাকায় জ্বরের প্রকোপ থামছে না। চলতি মাসে দু’জনের মৃত্যু হল। যদিও পুরসভার দাবি, গত বারের তুলনায় এ বছর ডেঙ্গির প্রকোপ অনেক কমেছে। কমেছে মৃত্যুর হারও। তবু নভেম্বরে ডেঙ্গিতে দু’টি মৃত্যুর ঘটনা ঘটল কেন? মেয়র পারিষদ (স্বাস্থ্য) প্রণয় রায় বলেন, ‘‘খুবই দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা। পুজোর ছুটির মধ্যেও পুরসভার সাফাইকর্মীরা কাজ করেছেন। সাফাই অভিযান চলেছে। নতুন করে বৃষ্টিও হয়নি। তা-ও কেন এমন ঘটছে, তা আমরা খতিয়ে দেখব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Death Dengue Bedhannagar
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE