কালীপুজো ও দীপাবলির আগেই শহরের বায়ুদূষণের লেখচিত্র ঊর্ধ্বমূখী।—ফাইল চিত্র।
বাজি ফাটা এখনও সে ভাবে শুরু হয়নি। তার আগেই শহরের বায়ুদূষণের লেখচিত্র ঊর্ধ্বমূখী। সেপ্টেম্বর মাসের যে শহরের বায়ুসূচকের (এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স) মান ছিল ‘ভাল’ বা ‘সন্তোষজনক’, তা অক্টোবরে এক ঝটকায় নেমে ‘মাঝারি’ ও ‘খারাপ’ হতে শুরু করেছে। কালীপুজো ও দীপাবলিতে শব্দবাজি এবং আতসবাজির সৌজন্যে শহরের বায়ুসূচকের মান এমনিতেই খারাপ হয়। এ বার আলোর উৎসব শুরুর আগেই পরিস্থিতি খারাপ হতে শুরু করায় বিপদের ঝুঁকি অনেকটা বেশি বলে সতর্ক করছেন পরিবেশকর্মীরা।
সাধারণত ঠান্ডা পড়তে শুরু করলেই বাতাসে ভাসমান ধূলিকণা মাটির কাছাকাছি চলে আসে। তখন শ্বাসপ্রশ্বাসের সঙ্গে সেই ধূলিকণাই শ্বাসনালীতে প্রবেশ করে। শুরু হয় স্বাস্থ্য-বিপর্যয়। কিন্তু দেখা যাচ্ছে যে, গত কয়েক বছরের তুলনায় এ বারের অক্টোবরে ইতিমধ্যেই বায়ুসূচকের মান তুলনামূলক ভাবে খারাপ। রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ সূত্রের খবর, চলতি মাসে ১ অক্টোবর থেকে ২২ অক্টোবর পর্যন্ত সময়সীমার মধ্যে ১৩ দিনই কলকাতা ও সংলগ্ন এলাকায় বাতাসের মান ছিল ‘মাঝারি’। আর দু’দিন (১৭ ও ২১ অক্টোবর, যথাক্রমে রবীন্দ্রভারতী ও ভিক্টোরিয়া এলাকায়) বায়ুসূচকের মান ছিল ‘খারাপ’।
এমনিতে গত কয়েক বছরের বায়ুদূষণ সংক্রান্ত তথ্য বলছে, কালীপুজোর কয়েক দিন আগে থেকেই কলকাতার বায়ুসূচকের মান ক্রমশ খারাপ হতে থাকে। তবে গত বছরের কালীপুজো ও দীপাবলিতে অতীতের সমস্ত রেকর্ড ভেঙে গিয়েছিল। গত বছরের ৬ নভেম্বর (কালীপুজোর দিনে) বিটি রোডের রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় বায়ুসূচকের মান ছিল ‘খুব খারাপ’। তার পরের দিন, অর্থাৎ দীপাবলিতে ছিল ‘মারাত্মক’। সে দিন বাতাসে ভাসমান ধূলিকণার পরিমাণ ছিল প্রতি ঘনমিটারে ১৭২৭.২ মাইক্রোগ্রাম (যা সহনশীল মাত্রার থেকে ১৭ গুণ বেশি)। ফলে এ বছরেও আশঙ্কায় দিন গুনছেন পরিবেশকর্মীরা। এক পরিবেশকর্মীর কথায়, ‘‘যত দিন যাচ্ছে ততই শব্দবাজি ফাটানোর প্রবণতা বাড়ছে, তা পরিসংখ্যান দেখলেই স্পষ্ট। এ বারও তার পুনরাবৃত্তি হবে বলে আমাদের আশঙ্কা।’’
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘অ্যাটমস্ফেরিক সায়েন্সেস’ বিভাগের শিক্ষক সুব্রতকুমার মিদ্যা বলেন, ‘‘ঠান্ডায় ভাসমান ধূলিকণা মাটির কাছাকাছি নেমে আসে। ফলে দূষণের মাত্রাও বাড়ে। বাজি বেশি ফাটলে এই দূষণের মাত্রা আরও বাড়ে।’’ আর দূষণের এই ক্রমবর্ধমান হার শিশু ও বয়স্কদের ক্ষেত্রে বিপজ্জনক হয়ে পড়ে। বক্ষরোগ চিকিৎসক রাজা ধর বলেন, ‘‘গত পাঁচ বছরে শীতের সময়ে বক্ষরোগ বা শ্বাসকষ্ট নিয়ে আসা রোগীদের সংখ্যা ক্রমশ বেড়েছে। যাঁদের ইতিমধ্যেই কোনও সমস্যা রয়েছে, তাঁরা তো বটেই, এই সময়ে অনেক নতুন রোগীও আমাদের কাছে আসছেন চিকিৎসার জন্য। পরিবেশ নিয়ে সচেতনতা না বাড়লে রোগের এই প্রকোপ ঠেকানো যাবে না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy