ফাইল চিত্র।
কলকাতা বিমানবন্দরে নামার পরে বিদেশ থেকে আসা যাত্রীদের করোনা পরীক্ষা করানোর প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। যে সমস্ত যাত্রীর কাছে কোভিড নেগেটিভ সার্টিফিকেট থাকবে না, কলকাতায় নামার পরে তাঁদের দেহরসের নমুনা দিতে হবে। তার পরে বিমানবন্দরেই তাঁদের আট থেকে ন’ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হবে। কোভিড পরীক্ষার ফল নেগেটিভ এলে তাঁরা সরাসরি নিজেদের গন্তব্যে চলে যেতে পারবেন। আর পজ়িটিভ এলে উপসর্গ অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এখনও পর্যন্ত নিয়ম হল, বিদেশ থেকে সরাসরি কেউ কলকাতায় এসে নামলে তাঁর কাছে কোভিড নেগেটিভ সার্টিফিকেট থাকতে হবে। অন্যথায় তাঁকে শহরে ঢুকতে দেওয়া হয় না। এ রাজ্যে করোনা সংক্রমণ আটকাতে পশ্চিমবঙ্গ সরকারই এই নিয়ম চালু করেছিল। কিন্তু তার জেরে যাত্রী-সংখ্যা কমে গিয়েছে। এর মাঝে ‘বন্দে ভারত’ প্রকল্পের আওতায় লন্ডন ও কলকাতার মধ্যে সরাসরি উড়ান চালু করেছে এয়ার ইন্ডিয়া। সেই উড়ানেও যাত্রী হচ্ছিল কম। অভিযোগ, লন্ডন থেকে কোভিড পরীক্ষা করানো দুঃসাধ্য এবং ব্যয়সাপেক্ষ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এ দিকে, এ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়ে দেন, কলকাতা-লন্ডন উড়ান যাতে পাকাপাকি ভাবে যাতায়াত করে, তার জন্য রাজ্য সচেষ্ট হবে। গত ১৪ অক্টোবর কেন্দ্রের বিমানসচিব প্রদীপ খারোলাকে চিঠি দিয়ে মুখ্যসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, যাত্রী-সংখ্যা বাড়ানোর স্বার্থে বিদেশ থেকে আসার ক্ষেত্রে রাজ্যের যে নিয়ম রয়েছে, তা শিথিল করা হবে। বদলে রাজ্য চায়, কলকাতা-লন্ডন রুটে পাকাপাকি ভাবে দিনে অন্তত একটি করে উড়ান যাতে চলে, তা নিশ্চিত করুক কেন্দ্র। এমনকি, ইউরোপের অন্যান্য শহরেও কলকাতা থেকে একটি করে সরাসরি উড়ান চায় রাজ্য। এখন এয়ার ইন্ডিয়া কলকাতা-লন্ডন রুটে সপ্তাহে দু’দিন করে উড়ান চালাচ্ছে।
রাজ্যের তরফে নিয়ম শিথিল করার কোনও লিখিত নির্দেশ এখনও পর্যন্ত বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের হাতে পৌঁছয়নি। তবে, ইতিমধ্যেই রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের আধিকারিকেরা ঘুরে গিয়েছেন বিমানবন্দর। বিদেশ থেকে শহরে নামার পরে যে সমস্ত যাত্রী নমুনা দিয়ে পরীক্ষার ফলাফলের জন্য আট থেকে ন’ঘণ্টা বিমানবন্দরে অপেক্ষা করবেন, তাঁদের ওই সময়ে কোথায় রাখা হবে, তা নিয়ে প্রাথমিক ভাবে পরিকল্পনা হচ্ছে। কলকাতায় নামার পরে অভিবাসন ও শুল্ক দফতর পেরিয়ে যে লাউঞ্জ রয়েছে, সেখানে চেয়ার থাকলেও অত ক্ষণ ধরে অপেক্ষা করাটা কষ্টসাধ্য।
কলকাতা বিমানবন্দরের অধিকর্তা কৌশিক ভট্টাচার্য শুক্রবার জানিয়েছেন, পুরনো যে ডোমেস্টিক বিল্ডিং পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে, সেটিকে এই কাজে ব্যবহার করা যায়। যে যাত্রীরা দীর্ঘ পথ বিমানযাত্রা করে এসে আবার বিমানবন্দরে অত ক্ষণ অপেক্ষা করবেন, তাঁদের ন্যূনতম আরামের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। বসার সোফা, সঙ্গে শৌচালয়, খাবার-জল-চা-কফির ব্যবস্থাও করতে হবে। নয়তো অত ক্ষণ ধরে অপেক্ষা করতে গিয়ে তাঁরা বিরক্ত হয়ে যেতে পারেন। আবার তাঁদের মধ্যে কারও কারও শরীরে সংক্রমণ থাকতে পারে। ফলে, সাধারণ যাত্রীদের সঙ্গে তাঁদের রাখা যাবে না। তাঁদের নিজেদের মধ্যেও শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা প্রয়োজন। সম্প্রতি ওই ভবনেই কোয়রান্টিন কেন্দ্র তৈরির জন্য পরিকাঠামো গড়ে তোলা হয়েছিল। সেখানে নতুন করে শৌচালয় ও বসার ঘরও তৈরি করা হয়েছিল।
কেন্দ্রীয় সরকার ইতিমধ্যেই দেশের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরগুলিতে আরটিপিসিআর পরীক্ষার পরিকাঠামো তৈরির প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে। দিল্লি ও মুম্বই বিমানবন্দরে ইতিমধ্যেই সেই পরীক্ষা হচ্ছে। কলকাতায় সেই ব্যবস্থা চালু করতে সময় লাগবে বলে মনে করা হচ্ছে। যত দিন না সেই ব্যবস্থা চালু হচ্ছে, তত দিন যাত্রীদের কাছ থেকে নমুনা নিয়ে বিমানবন্দরের কাছাকাছি সরকার-স্বীকৃত কোনও পরীক্ষাগারে পরীক্ষা করানো হবে। রিপোর্ট নেগেটিভ এলেও সংশ্লিষ্ট যাত্রীকে বাড়িতে গিয়ে ১৪ দিনের জন্য কোয়রান্টিনে থাকার পরামর্শ দেওয়া হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy