ফানুস ওড়ানোর প্রবণতা বাড়ায় প্রমাদ গুনছে এটিসি। ফাইল চিত্র
ঘরপোড়া গরুর গল্প তাঁরা জানেন। সিঁদুরে মেঘ দেখে তাই ডরাচ্ছেন!
গত বছর কালীপুজোর দিন দু’য়েক পরে কলকাতা থেকে ব্যাঙ্কক উড়ে যাওয়া একটি বিমানের কাছে চলে এসেছিল জ্বলন্ত একটি ফানুস। সে দিন সেই পাইলট একা নন, কমবেশি ১২ জন পাইলটের একই রকম অভিজ্ঞতা হয়েছিল। হাওয়ায় দুলে দুলে জ্বলন্ত ফানুস কখনও চলে এসেছিল বিমানের কাছে, কখনও বা রানওয়ের ধারে। একটি ফানুস উড়ে এসে রানওয়ের কাছে ট্যাক্সিওয়েতেও অবতরণ করেছিল। বিমানবন্দরের এক অফিসার দেখেছিলেন সেই দৃশ্য। বেশ কয়েকটি ফানুস উড়তে উড়তে বিমানবন্দরের উপরেও চলে এসেছিল।
আগামী ৬ নভেম্বর কালীপুজো। শব্দবাজি নিষিদ্ধ হওয়ার পরে শহরবাসীর ফানুস ওড়ানোর প্রবণতা বেড়েছে। ফলে আবারও বিমানবন্দর এলাকায় উড়ে আসতে পারে ফানুস— এমনই আশঙ্কা কলকাতা বিমানবন্দরের এয়ার ট্র্যাফিক কন্ট্রোল (এটিসি) অফিসারদের। মূলত বিমান ওঠানামার সময়ে এটিসি অফিসারেরাই পাইলটদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে দিকনির্দেশের কাজ করেন।
আরও পড়ুন: আটকে রেখে ১০ দিন ধরে গণধর্ষণ, কোণার্কে উদ্ধার কলকাতার তরুণী
আজ, শনিবার এটিসি অফিসারদের আন্তর্জাতিক দিবস। সেই উপলক্ষে বিমানবন্দরের আশপাশের মানুষদের সচেতনতার বার্তা দিতে
চান এটিসি অফিসারেরা। এটিসি অফিসার্স গিল্ড-এর পূর্বাঞ্চলের সম্পাদক কৈলাসপতি মণ্ডলের কথায়, ‘‘প্রতিটি বড় বিমানবন্দরের পাঁচ নটিক্যাল মাইল (প্রায় ৯ কিলোমিটার) এবং ছোট বিমানবন্দরের তিন নটিক্যাল মাইলের (সাড়ে পাঁচ কিলোমিটার) মধ্যে ফানুস ওড়ানো নিষিদ্ধ। যাঁরা নিছক মজার জন্য, কিছু ক্ষণের আনন্দের জন্য ফানুস ওড়ান, তাঁদের ভেবে দেখতে বলব, ওই একটি ফানুস থেকে বড়সড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। প্রাণ চলে যেতে পারে বহু মানুষের।’’
অভিজ্ঞ পাইলটদের মতে, ফানুসে লোহার তার থাকে। ইঞ্জিনের ভিতরে সেটি ঢুকে গেলে সেই ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে যেতে পারে। আর বিমান
নামা-ওঠার সময়ে আচমকা একটি ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে গেলে যে কোনও ধরনের বিপদ হতে পারে। পাইলটদের সঙ্গে কথা বলে জানা গিয়েছে, রানওয়েতে নামা-ওঠার সময়ে সব চেয়ে বেশি সতর্ক থাকতে হয় তাঁদের। তখন বিমানের কাছাকাছি ফানুস চলে এলে মনঃসংযোগে অসুবিধা হতে পারে। সেই কারণেও দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।
আরও পড়ুন: লাইনে দাঁড়িয়েই রাবণ পোড়ানো দেখছিল জনতা, পিষে দিল ট্রেন, অমৃতসরে মৃত অন্তত ৬০
গত বার কালীপুজোর দিন দুই পরে পাইলটদের কাছ থেকে অভিযোগ পেয়ে এটিসি-র তরফে তা জানানো হয়েছিল বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষকে। বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ তা স্থানীয় পুলিশকে জানান। কিন্তু কালীপুজোর দিন বা তার পরের দিন দু’য়েক কে কোথা থেকে ফানুস ওড়াচ্ছে, তা নিয়ন্ত্রণ করা পুলিশের পক্ষে যে সম্ভব নয়, সেটা সহজবোধ্য। পুলিশ অফিসারদের প্রশ্ন, কেউ যদি নিজের বাড়ির ছাদ থেকে ফানুস ওড়ান, তা হলে পুলিশ জানবেই বা কী করে এবং ধরবেই বা কী করে?
কৈলাসবাবু বলেন, ‘‘পুরোটাই নির্ভর করছে বিমানবন্দরের আশপাশে বসবাসকারী মানুষের বিচার-বিবেচনার উপরে। একই ভাবে ড্রোন নিয়েও আমরা আবেদন করছি। বিমানবন্দর এলাকায় ড্রোন ওড়ানোর ক্ষেত্রেও সতর্ক হতে হবে। কয়েক মাস আগে একটি ড্রোন বিমানের খুব কাছে চলে এসেছিল। ফানুস বা ড্রোনের ক্ষেত্রে এখনও কোনও বড় দুর্ঘটনা ঘটেনি। কিন্তু ঘটতে কত ক্ষণ? কেন আমরা সেই ঝুঁকি নেব? নিজের সামান্য আনন্দের জন্য কেন অন্যের এত বড় ক্ষতি করতে যাব?’’
জানা গিয়েছে, বাজারে যে ফানুস বিক্রি হয়, তার প্রতিটির প্যাকেটে পরিষ্কার করে লেখা থাকে, বিমানবন্দর চত্বরে ওই ফানুস ওড়ানো যাবে না। কিন্তু কত জন ফানুস ওড়ানোর আগে প্যাকেটের গায়ে লেখা ওই নির্দেশিকা পড়েন, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে বিমানবন্দরের অফিসারদের।
আবার আট কিলোমিটার ব্যাসার্ধ ধরলে তার মধ্যে বাগুইআটি, কেষ্টপুর, লেক টাউন, বিরাটি, গঙ্গানগর, সল্টলেক, রাজারহাট-সহ এক বিশাল এলাকা ঢুকে পড়বে। সরকারি নির্দেশের পরেও যাঁরা অবলীলায় শব্দবাজি ফাটিয়ে যান, তাঁদের এবং এই বিশাল এলাকার মানুষকে ফানুস ওড়ানো থেকে কী করে বিরত করা যাবে, সেটাই এখন প্রশ্ন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy