Advertisement
১৭ এপ্রিল ২০২৪

শিশু-মৃত্যুতে অভিযুক্ত বি সি রায় হাসপাতাল

চিকিৎসাধীন শিশু যে মারা যাচ্ছে, তা মানছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও। তবে তাঁদের বক্তব্য, মৃত্যুর সংখ্যা নিয়ে চিন্তিত হওয়ার কিছু নেই। নির্ধারিত মৃত্যুর হারের মধ্যেই রয়েছে সেই সংখ্যা।

মনীষা মালো

মনীষা মালো

জয়তী রাহা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০১ এপ্রিল ২০১৯ ০১:৫২
Share: Save:

গত দু’সপ্তাহ ধরে প্রতিদিন একাধিক শিশু মারা যাচ্ছে কলকাতার বি সি রায় পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ইনস্টিটিউট অব পেডিয়াট্রিক সায়েন্সেসে। অথচ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের এ নিয়ে কোনও হেলদোলই নেই। এমনই অভিযোগ করছেন পেডিয়াট্রিক ইন্টেন্সিভ কেয়ার ইউনিট (পিকু) বিভাগে ভর্তি শিশুদের অভিভাবকেরা। শুধু তাই নয়, হাসপাতালের চিকিৎসক এবং নার্সদের বিরুদ্ধে চিকিৎসায় গাফিলতি এবং রোগীর পরিজনেদের সঙ্গে দুর্ব্যবহারের অভিযোগও করছেন তাঁরা।

চিকিৎসাধীন শিশু যে মারা যাচ্ছে, তা মানছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও। তবে তাঁদের বক্তব্য, মৃত্যুর সংখ্যা নিয়ে চিন্তিত হওয়ার কিছু নেই। নির্ধারিত মৃত্যুর হারের মধ্যেই রয়েছে সেই সংখ্যা। প্রতি বছরই এই সময়ে বেশ কিছু শিশুর মৃত্যু হয়। এ বারেও তেমনটাই হয়েছে। মৃত্যুর কারণ হিসেবে হাম, বসন্তের পাশাপাশি অ্যাডেনোভাইরাস রয়েছে বলে মানছেন কর্তৃপক্ষ।

হাসপাতাল চত্বরে থাকা কয়েক জন অভিভাবকের দাবি, চলতি মাসের ১৯-২০ তারিখের মধ্যেই সাতটি শিশু মারা গিয়েছে। এত দিন ধরে একের পর এক মৃত্যুর ঘটনাতেও কর্তৃপক্ষ চুপ। গত ২৭ মার্চ মনীষা মালো নামে এক বছর তিন মাসের এক শিশুর মৃত্যুর পরে তার পরিবারের দায়ের করা অভিযোগের প্রেক্ষিতে সামনে আসে এই বিষয়টি। ৩১ মার্চ, রবিবার হাসপাতালে লিখিত অভিযোগ জমা করেছে মালো পরিবার। তাতে চিকিৎসক ও নার্সের বিরুদ্ধে কর্তব্যে গাফিলতির অভিযোগ এবং একের পর এক শিশু-মৃত্যুর কথা বলা হয়েছে।

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

তাঁরা জানিয়েছেন, গত ১৮ মার্চ গভীর রাতে দত্তপুকুরের সুকান্তপল্লির বাসিন্দা বাবাই মালো ও তাঁর স্ত্রী চন্দনা জ্বরে আক্রান্ত মেয়েকে নিয়ে ওই হাসপাতালের জরুরি বিভাগে আসেন। অভিযোগ, অনেক ক্ষণ অপেক্ষার পরে এক জন নার্স শিশুটিকে দেখে যান। মেয়ের অবস্থা খারাপ হতে দেখলে বাবাই চিকিৎসককে ডাকার জন্য বারবার অনুরোধ করেন ওই নার্সকে। তাঁর অভিযোগ, নার্স শিশুটিকে ইঞ্জেকশন দিয়ে তাঁদের আউটডোরে দেখানোর জন্য অপেক্ষা করতে বলেন। চন্দনা বলেন, ‘‘চোখের সামনে মেয়েকে কাঁপুনি দিয়ে ঝিমিয়ে পড়তে দেখলাম। সকাল সাড়ে ৮টা নাগাদ ডাক্তার এলে মনীষাকে দেখেই ভর্তি করিয়ে নেন। সেটাই পাঁচ ঘণ্টা আগে কেন করা হল না?’’ পরিবারের দাবি, প্রথমে সাধারণ বিভাগ, তার পরে এইচডিইউ-এ পাঠানো হয় মনীষাকে। সেখান থেকে পিকুতে স্থানান্তরিত করা হয়। ক্রমেই তার অবস্থার অবনতি হওয়ায় পাঁচ দিন ভেন্টিলেশনে রাখার পরে গত ২৭ তারিখ, বুধবার সকাল ৮টা ৩৫ মিনিটে মৃত্যু হয় মনীষার। চন্দনার আফশোস, “মেয়েকে ১৮ তারিখ আউটডোরে দেখানোর পরে ওই রাতে জ্বর বাড়তেই শিশু হাসপাতালে নিয়ে যাই। অত ক্ষণ ফেলে না রাখলে হয়তো মেয়েকে বাঁচানো যেত।” হাসপাতালে নার্স এবং কর্মীদের দুর্ব্যবহার নিয়েও অভিযোগ রয়েছে পরিবারগুলির। বাচ্চার সম্পর্কে বেশি প্রশ্ন করলে শিশুর মায়েদের গলাধাক্কা দিয়ে বার করে দেওয়ার হুমকি পর্যন্ত শুনতে হয় বলে অভিযোগ তাদের।

একই অভিযোগ আরেক মৃত শিশু মুস্তাজিম গাজীর বাবা আনিসুর গাজীর। সর্দি-কাশি নিয়ে ছ’মাসের শিশু মুস্তাজিমকে ১৯ মার্চ এই হাসপাতালে ভর্তি করিয়েছিলেন উত্তর ২৪ পরগনার স্বরূপনগরের বাসিন্দা, ভাগচাষি আনিসুর। গত শুক্রবার সকালে মারা যায় শিশুটি। অভিভাবকদের দাবি, ‘‘১২ শয্যার পিকুতে ভর্তি শিশুর মৃত্যু হলে তবেই একমাত্র খালি হচ্ছে শয্যা।’’

অভিযোগ প্রসঙ্গে বি সি রায় পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ইনস্টিটিউট অব পেডিয়াট্রিক সায়েন্সেসের অধ্যক্ষ মালা ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘শিশু-মৃত্যুর খবর সত্যি। তবে মৃত্যুর হার স্বাভাবিকের থেকে বেশি নয়। এই সময়ে ভাইরাসের আক্রমণ বেশি হয়। অ্যাডেনোভাইরাসও রয়েছে তার মধ্যে। তবে সব মৃত্যু যে ওই ভাইরাসের জন্য, এমনটা নয়। কী ধরনের ভাইরাস তা জানতে নাইসেডে (ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব কলেরা অ্যান্ড এন্টেরিক ডিজিজ়েস) পাঠানো হয়েছে নমুনা। রিপোর্ট আসতে সময় লাগবে।’’ চিকিৎসক, নার্স এবং কর্মীদের সম্পর্কে কোনও অভিযোগ মানতে চাননি কর্তৃপক্ষ। তাঁর দাবি, ‘‘সবটাই মনগড়া।’’

যদিও রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা অজয় চক্রবর্তী মানতে চাননি অধ্যক্ষের এমন উক্তি। তাঁর কথায়, ‘‘হাসপাতালে মৃত্যুর আবার স্বাভাবিক হার মানে? যে কোনও মৃত্যুই দুঃখজনক। মৃত্যু হার মানবে আমাদের কাছে, এমনটাই অঙ্গীকার থাকা উচিত চিকিৎসকদের।’’ বাকি অভিযোগ সম্পর্কে তাঁর বক্তব্য, ‘‘এ বিষয়গুলির কিছুই জানতাম না। খোঁজ নিচ্ছি। অবশ্যই সব অভিযোগ খতিয়ে দেখা হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Death Children B C Roy Hospital
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE