Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

গলায় ফাঁস দিয়ে, জ্বালিয়ে প্রৌঢ়াকে খুন

পুলিশ জানায়, শিখাদেবীর স্বামী ১০ বছর আগে মারা গিয়েছেন। যাদবপুর থানা এলাকার বিজয়গড়ে তাঁদের দোতলা বাড়ি। ওই বাড়ির চারটি অংশ। একতলার একাংশে একাই থাকতেন শিখাদেবী।

মৃত শিখা দত্ত (ইনসেটে)। এমনই লন্ডভন্ড অবস্থায় মেলে ঘরের জিনিসপত্র। নিজস্ব চিত্র

মৃত শিখা দত্ত (ইনসেটে)। এমনই লন্ডভন্ড অবস্থায় মেলে ঘরের জিনিসপত্র। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ এপ্রিল ২০১৯ ০১:৫৫
Share: Save:

ঘর লন্ডভন্ড। আলমারি খোলা। মেঝের উপরে পড়ে আছে এক মহিলার দেহ। দাউদাউ করে জ্বলছে সেটি। মাথাটা ঘরের দরজার দিকে। বুকের উপরে ডাঁই করা একাধিক জ্বলন্ত শাড়ি। গত বৃহস্পতিবার রাত দেড়টা নাগাদ এ ভাবেই মাকে পড়ে থাকতে দেখে খুনের অভিযোগ তুলেছিলেন ছেলে। ওই রাতেই যাদবপুর থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন তিনি। তদন্তে নেমে শনিবার পুলিশ নিশ্চিত হয়, শিখা দত্ত (৫২) নামে ওই মহিলাকে খুন করা হয়েছে। প্রথমে গলায় ওড়না জড়িয়ে শ্বাসরোধ করে মারার পরে দেহটি জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। এই ঘটনায় পঞ্চানন মণ্ডল ওরফে নাটা নামে এক যুবককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। পুলিশের দাবি, বছর চল্লিশের নাটা জেরার মুখে খুনের কথা স্বীকার করেছে।

পুলিশ জানায়, শিখাদেবীর স্বামী ১০ বছর আগে মারা গিয়েছেন। যাদবপুর থানা এলাকার বিজয়গড়ে তাঁদের দোতলা বাড়ি। ওই বাড়ির চারটি অংশ। একতলার একাংশে একাই থাকতেন শিখাদেবী। তাঁর ছেলে সোম স্ত্রী পাপিয়াকে নিয়ে বিজয়গড় এলাকাতেই আলাদা বাড়িতে থাকেন। শিখাদেবীর বাড়ির বাসিন্দারা জানিয়েছেন, ওই রাতে পোড়া গন্ধ পেয়ে ছুটে গিয়ে তাঁরা দেখেন, বাড়িতে শিখাদেবীর অংশে ঢোকার দরজা বাইরে থেকে বন্ধ। তবে বাড়ির পিছনের দিক থেকে ওই অংশে ঢোকার অন্য একটি রাস্তা রয়েছে। সে দিক দিয়ে গিয়ে তাঁরা অগ্নিদগ্ধ শিখাদেবীকে দেখতে পান। এক বাসিন্দার কথায়, ‘‘চোখের সামনে দেখি, দিদির সারা শরীর জ্বলছে। ধোঁয়ায় ধোঁয়া। আমরাই এর পরে জল দিয়ে আগুন নেভানোর চেষ্টা করতে থাকি। কোনও মতে আগুন নিভলে দেখি, ওঁর বুকের কাছে বেশ কয়েকটি শাড়ি পড়ে রয়েছে। ঘরের আলমারি খোলা!’’

এর পরে প্রতিবেশীরাই শিখাদেবীর ছেলেকে খবর দেন। তিনি ও তাঁর স্ত্রী ঘটনাস্থলে পৌঁছে দেখেন, মায়ের পোড়া দেহ মেঝেতে পড়ে। তত ক্ষণে ঘটনাস্থলে পৌঁছে গিয়েছে পুলিশ ও দমকল। অগ্নিদগ্ধ শিখাদেবীকে এম আর বাঙুর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। দেহটি ময়না-তদন্তে পাঠানো হয়। ওই রাতেই পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন মৃতার ছেলে সোম। তাঁর দাবি, সম্প্রতি পঞ্চানন শিখাদেবীর বাড়িতে থাকতে শুরু করে। ঘটনার পর থেকেই সে বেপাত্তা ছিল। সোমের দাবি, ‘‘আমার বিশ্বাস, ও-ই মাকে মেরেছে। না-হলে ও ভাবে মায়ের বুকের উপরে শাড়িগুলো পড়ে থাকত না। আলমারিও খোলা থাকত না। কোনও কিছু লুট করে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করতে গিয়েই এই কাণ্ড ঘটানো হয়েছে। আমরা দোষীর

শাস্তি চাই।’’

পুলিশ সূত্রের খবর, পঞ্চানন আদতে জয়নগরের বাসিন্দা। সে আগে রিকশা চালাত। কয়েক মাস আগে রিকশা বেচে দিয়ে শিখাদেবীর সঙ্গে কেটারিং এবং বাড়ি বাড়ি খাবার সরবরাহের ব্যবসা শুরু করে সে। সেই সূত্রে শিখাদেবীর বাড়িতেই সে থাকত। পুলিশ জানায়, জেরায় পঞ্চানন বলেছে, রাগের মাথায় সে শিখাদেবীকে মেরেছে। সে দিন কোনও এক কারণে শিখাদেবীর সঙ্গে তার বচসা হয়। এর পরে রাগ করে সে বেরিয়ে যায়। পরে মত্ত অবস্থায় রাতের দিকে বাড়ি ফিরে গলায় ওড়নার ফাঁস দিয়ে শিখাদেবীকে খুন করে সে। প্রতিবেশীরা পুলিশকে জানিয়েছেন, প্রায়ই মত্ত অবস্থায় ঝামেলা করত পঞ্চানন। ঘটনার রাতেও সে রকমই কিছু হয়েছিল। ধৃতকে আজ, রবিবার আদালতে তোলার কথা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Crime Murder Woman
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE