Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

হাসপাতাল মুক্তাঞ্চল

কখনও শিশু চুরি, কখনও শিশু বদল। কখনও ওয়ার্ডের ভিতরে ঢুকে রোগিণীর শ্লীলতাহানি, আবার কখনও নিজের খুশিমতো কাউকে কিছু না বলে রোগীর বেরিয়ে যাওয়া।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১৫ মার্চ ২০১৭ ০২:৫২
Share: Save:

কখনও শিশু চুরি, কখনও শিশু বদল। কখনও ওয়ার্ডের ভিতরে ঢুকে রোগিণীর শ্লীলতাহানি, আবার কখনও নিজের খুশিমতো কাউকে কিছু না বলে রোগীর বেরিয়ে যাওয়া। সরকারি হাসপাতাল কি তা হলে আক্ষরিক অর্থেই এক মুক্তাঞ্চল? মঙ্গলবার মেডিক্যালের ঘটনার পরে এই প্রশ্ন আরও এক বার সামনে এল।

এ দিনের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে মেডিক্যাল কর্তৃপক্ষের যুক্তি, বিশাল বড় হাসপাতাল, অসংখ্য মানুষ প্রতি দিন ভিতরে ঢোকেন। কে রোগীর বাড়ির লোক, আর কে নন, তা আলাদা করে চিহ্নিত করা খুব কঠিন। প্রশ্ন উঠেছে, তা হলে কি যে কোনও সময়ে যে কেউ ভিতরে ঢুকতে পারেন? হাসপাতাল কর্তাদের যুক্তি, কার্ড দেখে ঢোকানোর ব্যবস্থা রয়েছে। কিন্তু বিকেলে ভিজিটিং আওয়ারে বা দুপুরে খাবার দেওয়ার সময়ে কাতারে কাতারে এত মানুষ ভিতরে ঢুকলে কার্যত কিছু করার থাকে না।

কেন কাতারে কাতারে মানুষ ভিতরে ঢুকবেন? কেন কার্ড দেখে এক জন করে বাড়ির লোককে ভিতরে ঢোকানো হবে না? কর্তৃপক্ষের কাছে এর কোনও জবাব নেই। তবে ভারপ্রাপ্ত স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা বিশ্বরঞ্জন শতপথী নিরাপত্তার ত্রুটি স্বীকার করে নিয়ে বলেছেন, ‘‘নিশ্চয় চেকিং-এ ফাঁকি ছিল। যাঁরা নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিলেন, তাঁদের সকলকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। সব মেডিক্যাল কলেজগুলিকে বার্তা দেওয়া হচ্ছে। সব জায়গাতেই নিরাপত্তা বাড়ানো হবে। বিশেষ করে শিশু ওয়ার্ডগুলির নিরাপত্তা নিয়ে আলাদা ভাবে ভাবনাচিন্তা চলছে।’’

এর আগে ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ ও আরজিকরে বহু বার শিশু চুরির অভিযোগ উঠেছে। সেই সময়েও নিরাপত্তা কড়া করার যে কথা ঘোষণা করেছিল স্বাস্থ্য দফতর, তা শুধু প্রতিশ্রুতিই থেকে গিয়েছে। হাসপাতালের কর্মী ও রোগীদের জন্য আলাদা পোশাকের প্রস্তাবও বাস্তবায়িত হয়নি। এ দিন বিশ্বরঞ্জনবাবু ফের জানান, আলাদা পোশাকের বিষয় তাঁরা গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করছেন।

যদিও মেডিক্যালের চিকিৎসকদের একাংশ এ দিন জানিয়েছেন, নিরাপত্তা নিয়ে স্বাস্থ্যকর্তাদের এই সব প্রতিশ্রুতি আদতে অর্থহীন। নিরাপত্তা কর্মীদের কাজকর্ম নিয়ে তাঁরা কর্তৃপক্ষকে একাধিকবার জানিয়েছেন। বহু সময়েই তাঁদের কাউকে গেটে পাওয়া যায় না। কেন কর্তৃপক্ষ বিষয়টিতে কান দেননি? প্রশ্ন শুনে সুপার শিখা বন্দ্যোপাধ্যায় ফোন নামিয়ে রাখেন। ডেপুটি সুপার জয়ন্ত সান্যাল বলেন, ‘‘স্বাস্থ্য ভবন থেকে টেন্ডার করেই ওই কর্মীদের নিয়োগ করা হয়েছে। আমাদের কোনও ভূমিকা নেই।’’ কিন্তু এ নিয়ে আগে কোনও অভিযোগ কি জমা পড়েছে? তাঁর জবাব, ‘‘এ ব্যাপারে মন্তব্য করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়।’’

এ দিনের ঘটনার পর ভিজিটিং আওয়ারে ওয়ার্ডে ঢোকা-বেরনো নিয়ে কড়াকড়ি শুরু হয়। বৈধ যে কার্ড নিয়ে রোগীর পরিজনদের হাসপাতালে প্রবেশাধিকার পাওয়ার কথা, তাও অনেকে পাননি বলে অভিযোগ। এ নিয়ে ক্ষোভে ফেটে পড়েন বহু আত্মীয়। তাঁদেরই এক জনের অভিযোগ, ‘‘হাসপাতালের বহু কর্মীই এই চক্রের সঙ্গে যুক্ত। বৈধ কার্ড নিয়ে ঢুকতে গেলেও হেনস্থা করা হয়। অথচ শিশু চোররা অবাধে ঘুরে বেড়ায়।’’ আর এক জনের কথায়, ‘‘একটা ঘটনা ঘটে যাওয়ার পরে নিরাপত্তার বাড়াবাড়ি! এত দিন এর ছিটেফোঁটা থাকলেও এমন ঘটনা ঘটতে পারত না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Government Hospitals Anomaly
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE