সমীর মণ্ডল
ফের ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু। বিধাননগরের সুকান্তনগর এলাকার ঘটনা। মৃত সমীর মণ্ডল (৫২) কলকাতা পুলিশে কনস্টেবল পদে কর্মরত ছিলেন। এই নিয়ে এ বছর বিধাননগরে ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হল মোট তিন জনের বলে পুরসভা সূত্রে খবর।
স্থানীয় সূত্রে খবর, সুকান্তনগরের সি ব্লকে একাধিক ব্যক্তি জ্বরে আক্রান্ত হয়েছেন। বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, কালীপুজোর পর থেকেই ওই ব্লকে জ্বর ছড়াচ্ছে। এ দিন পুরসভার স্বাস্থ্য বিভাগের কেন্দ্রীয় একটি দল এলাকা পরিদর্শন করে। কিন্তু জ্বরের প্রকোপ বৃদ্ধির কোনও নির্দিষ্ট কারণ এখনও চিহ্নিত করা যায়নি বলেই বিধাননগর পুরসভা সূত্রের খবর।
মৃত সমীরবাবুর পুত্রবধূ পায়েল মণ্ডল এ দিন জানান, কালীপুজোর পরে পেটে ব্যথার কারণে ওই ব্যক্তিকে এনআরএস মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। সেখানে প্রয়োজনীয় চিকিৎসার পরে তিনি সুস্থ হয়ে যান। কিন্তু গত ৮ তারিখ রাত থেকেই ফের পেট ব্যথা শুরু হয়। সঙ্গে বমি আর জ্বর। ৯ তারিখ ভোরে সমীরবাবুকে সল্টলেকের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরীক্ষায় দেখা যায়, তাঁর খাদ্যনালীতে ফুটো রয়েছে। তাঁর অস্ত্রোপচারের করা হয়। অস্ত্রোপচারের পরে রক্ত পরীক্ষা করে দেখা যায়, তিনি ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়েছেন। প্লেটলেট ৩৫ হাজারে নেমে যায়। ১০ তারিখ হাসপাতাল থেকে বলা হয়, সমীরবাবুর ডায়ালিসিস করতে হবে। সে দিন ডায়ালিসিস চলাকালীনই মৃত্যু হয় তাঁর।
সমীরবাবুদের এলাকারই বাসিন্দা মুকুন্দ ঘোষ, তাঁর স্ত্রী কল্পনা এবং ১৭ বছরের ছেলে অয়নও জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ১১ তারিখ ফুলবাগান এলাকার একটি হাসপাতালে ভর্তি হন। স্থানীয় সূত্রে খবর, এখন ওই পরিবারের সকলেই সুস্থ। মুকুন্দবাবুর দাবি, তিন জনের রক্ত পরীক্ষার রিপোর্টেই এনএস-১ পজিটিভ পাওয়া গিয়েছে। একাদশ শ্রেণির ছাত্র অয়নের শারীরিক অবস্থা বেশি খারাপ হয়েছিল। তাঁর প্লেটলেট ৪৫ হাজারে নেমে যায়। মুকুন্দবাবুর প্রতিবেশী সুনীতা বর সম্প্রতি পদ্মপুকুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তিনি এখনও চিকিৎসাধীন।
বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগ, পুরকর্মীরা ব্লিচিং ছড়ানো, ধোঁয়া দেওয়া, মশার তেল স্প্রে করার কাজ করলেও তা নিয়মিত হয় না। বড় রাস্তার ধারে সেই কাজ করলেও গলিতে তাঁরা যান না। যদিও স্থানীয় ৩৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর জয়দেব নস্করের যদিও দাবি, নিয়মিতই হয় মশা নিধনের কাজ। তিনি জানান, মঙ্গলবার রাতেই মৃত্যুর খবর পান তিনি। সঙ্গে সঙ্গেই এলাকায় গিয়েছিলেন। কী কারণে জ্বর ছড়াচ্ছে, তা খতিয়ে দেখা হবে।
কিন্তু ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়ে এক বাসিন্দার মৃত্যুর চার দিনের মধ্যেও বিধাননগর পুরসভা খবর পায়নি কেন, প্রশ্ন তুলেছেন বাসিন্দারা। অভিযোগ, এলাকায় জ্বরের প্রকোপ বৃদ্ধির খবরও সময়ে পৌঁছয়নি পুরসভায়। এই অভিযোগকে কার্যত সমর্থন জানিয়ে বিধাননগরের মেয়র পারিষদ (স্বাস্থ্য) প্রণয় রায় বলেন, ‘‘কেন খবর এল না, তা খতিয়ে দেখা হবে।’’ তবে তিনি জানান, অক্টোবর পর্যন্ত ওই এলাকায় মশাবাহিত রোগ বৃদ্ধির কোনও রিপোর্ট নেই। আচমকা একটি এলাকায় কেন এমন হচ্ছে, তা খতিয়ে দেখা হবে। কোথাও জমা জল পাওয়া যায়নি। তিনি বলেন, ‘‘মশা নিধনের কাজে কোনও গাফিলতির প্রমাণ মিললে ক়ড়া পদক্ষেপ করা হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy