সৌপর্ণ দাশ।
খবরটা শোনার পর থেকেই নিজের অভিজ্ঞতার কথা বারবার মনে পড়ছে। গত বছরের ১৫ জানুয়ারি মা উড়ালপুলের উপরে যে ঘটনা আমার সঙ্গে ঘটেছিল, এ তো তারই পুনরাবৃত্তি!
মা উড়ালপুলে ঘুড়ির সুতোয় আমার গলা কেটে যাওয়ার ঘটনার তদন্ত করেছিল রাজ্য মানবাধিকার কমিশন। তার পরে ‘চাইনিজ মাঞ্জা’ ব্যবহারের উপরে নিষেধাজ্ঞা জারি করার নির্দেশ দিয়েছিল রাজ্যকে। প্রশ্ন হচ্ছে, তার সবটাই কি কথার কথা ছিল? তা হলে এখনও কি অবাধে বিক্রি হচ্ছে ছুরির মত ধারালো ওই বিপজ্জনক সুতো?
আজও সে দিনের কথা মনে পড়তে আতঙ্কে মেরুদণ্ড বেয়ে ঠান্ডা স্রোত বয়ে গেল। চোখের সামনে ভেসে উঠল সেই অভিশপ্ত দুপুরের স্মৃতি। নিউ টাউনের একটি বেসরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে তখন আমি দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। রবিবার হওয়ায় কলেজ ছুটি ছিল। নিউ টাউনে পেয়িং গেস্ট থাকা এক বন্ধুকে ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের একটি বই পৌঁছে দিতে হাওড়ার শিবপুরের বাড়ি থেকে মোটরবাইক নিয়ে রওনা হয়েছিলাম। মাথায় ফুলমাস্ক হেলমেট ছিল। পার্ক সার্কাস থেকে মা উড়ালপুল হয়ে চিংড়িহাটার দিকে যাওয়ার সময়ে প্রায় জনশূন্য ছিল উড়ালপুল। আমার সামনে-পিছনে একটিও গাড়ি ছিল না। ফাঁকা উড়ালপুলে বেশ নিশ্চিন্ত মনেই বাইক চালাচ্ছিলাম। সব চেয়ে বড় কথা, যেহেতু সে দিন কলেজ খোলা ছিল না, তাই সময়ে ক্লাসে পৌঁছনোর তাড়াও ছিল না। তাই অন্য দিনের তুলনায় আমার মোটরবাইকের গতিও ছিল বেশ কিছুটা কম। সেই কম গতির জন্যেই যে আজও বেঁচে রয়েছি, তা বুঝলাম কিছুক্ষণ পরেই।
সায়েন্স সিটির কিছুটা আগে মা উড়ালপুলের উপর দিয়ে যাওয়ার সময়ে হঠাৎই গলায় একটা তীব্র জ্বালা। মনে হল, যেন গলায় কেউ ব্লেড চালিয়ে দিল। সঙ্গে সঙ্গেই ডান হাত গলায় দিয়ে বুঝলাম, ঘুড়ির সুতো আটকে গিয়ে রীতিমতো চেপে বসেছে গলায়। রক্ত বেরোতে শুরু করেছে। গাড়ি না থামিয়ে এক হাতে সুতোটাকেই চেপে ধরার চেষ্টা করি। বুঝতে পারলাম, ধারালো সুতোয় ফালা ফালা হয়ে কেটে যাচ্ছে হাতের তালু, আঙুল।
কিছু ক্ষণ এ ভাবে যাওয়ার পরে দেখলাম, সুতোটা আচমকা ছিঁড়ে গেল। তত ক্ষণে হাতে, গলায় যন্ত্রণা শুরু হয়ে গিয়েছে। রক্ত ঝরছে। ওই অবস্থাতেই মোটরবাইক চালিয়ে বাকি পথটা পেরিয়ে এসেছিলাম। প্রথমে চিংড়িহাটার কাছে একটি ওষুধের দোকানে গিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা করাই। তখনই কাঁধে থাকা ব্যাগ আর গায়ের জ্যাকেটটার দিকে নজর গেল। দেখি, ব্যাগের মোটা স্ট্র্যাপটা এমন ফালা ফালা করে কাটা যে মনে হবে যেন কেউ তার উপরে ছুরি চালিয়েছে। জ্যাকেটেরও প্রায় একই দশা।
সে দিন মোটরবাইকের গতি কম থাকায় অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচেছিলাম। ওই ঘটনার পরে বেশ কয়েক মাস আমি মা উড়ালপুল এড়িয়ে চলতাম। এখন অবশ্য ওই একই পথে মোটরবাইক চালিয়ে কলেজ যাই। কারণ, রাজ্য মানবাধিকার কমিশনের পক্ষ থেকে আমাকে যে রিপোর্ট পাঠানো হয়, তা পড়ে আমার মনে হয়েছিল যে রাজ্যে এখন হয়তো ওই মাঞ্জা আর কেনাবেচা হয় না। তাই ভয়ের কিছু নেই। ঘুড়ির সুতো নিয়ে অভয় দিয়েছিল খোদ কলকাতা পুলিশও। কিন্তু মা উড়ালপুলে আজকের ঘটনার কথা শুনে ফের সেই আতঙ্ক চেপে বসছে। এখন তো দেখছি, বিপদ আদৌ কাটেনি!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy