Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

আবর্জনা নিজেরাই সাফ করুক বহুতল, চান মেয়র

শহরের কোথাও বহুতল আবাসন, পাঁচতারা হোটেল বা অন্য কোনও বড় নির্মাণ করতে হলে জঞ্জাল ফেলার ব্যবস্থা তাদের নিজেদেরই করতে হবে। সম্প্রতি পুর প্রশাসনের তরফে এমনই নিদান দিয়েছেন মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়।

নরক-পথ। শনিবার, পোদ্দার কোর্ট এলাকায়। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক

নরক-পথ। শনিবার, পোদ্দার কোর্ট এলাকায়। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক

অনুপ চট্টোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ১৫ জানুয়ারি ২০১৭ ০০:৪৭
Share: Save:

শহরের কোথাও বহুতল আবাসন, পাঁচতারা হোটেল বা অন্য কোনও বড় নির্মাণ করতে হলে জঞ্জাল ফেলার ব্যবস্থা তাদের নিজেদেরই করতে হবে। সম্প্রতি পুর প্রশাসনের তরফে এমনই নিদান দিয়েছেন মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়। তা বলে খোলা জায়গায় সেই জঞ্জাল ফেলা চলবে না। রীতিমতো কম্প্যাক্টর মেশিন বসিয়ে তা করতে হবে বলে জানিয়ে দিয়েছেন পুরকর্তারা। এর জন্য যে জায়গার প্রয়োজন, তা-ও দিতে হবে ওই সব নির্মাণ সংস্থাকেই। পুরসভার এই নতুন ফরমান মেনে ইতিমধ্যেই ই এম বাইপাস সংলগ্ন একটি হোটেল এবং একটি বহুতল আবাসন সংস্থা কাজ শুরু করে দিয়েছে।

কিন্তু জঞ্জাল সাফাইয়ের কাজ তো পুরসভার। তা হলে ওই সব সংস্থাকে তা করতে বাধ্য করা হচ্ছে কেন?

কলকাতায় এখন দৈনিক চার হাজার মেট্রিক টন জঞ্জাল জমে। শহরের কলেবর বাড়ার সঙ্গে জঞ্জালের পরিমাণও বাড়ছে। দফতরের এক অফিসার জানান, বাড়ছে বহুতল বাড়ি এবং হোটেলের সংখ্যাও। তবে জায়গার অভাবে অনেক জায়গায় কম্প্যাক্টর স্টেশন করা যাচ্ছে না। সে সব ভেবেই ওই সব প্রতিষ্ঠানের নির্মাণ সংস্থাকে জঞ্জাল ফেলার স্থায়ী ব্যবস্থা রাখতে বলা হচ্ছে। ইতিমধ্যেই বাইপাসের ধারে দু’টি বড় আবাসন এবং একটি হোটেল প্রস্তুতকারক সংস্থা জায়গা দিয়েছে। সেখানে কম্প্যাক্টর মেশিন বসানোর জন্য পুরসভাকে টাকাও দিয়েছে। ক্রিস্টোফার রোডেও আবাসন গড়ছে একটি সংস্থা। মেয়র জানান, তারাও পুরসভার শর্ত মেনে জঞ্জাল ফেলার ব্যবস্থা করছে।

কম্প্যাক্টর স্টেশন করার জায়গা না থাকায় অনেক এলাকায় এখনও নজরে পড়ে রাস্তার পাশে ডাঁই হয়ে পড়ছে জঞ্জালের স্তূপ। দুর্গন্ধে সেখানে টেকা দায়। মেয়র শোভনবাবু নিজেও জানান, লালবাজার লাগোয়া এলাকা পোদ্দার কোর্টের কাছে রাস্তার পাশে স্তূপীকৃত জঞ্জাল বারবার মনে করিয়ে দিচ্ছে পুরসভার দেওয়া প্রতিশ্রুতি।

গত কলকাতা পুরভোটের আগে মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় জোর গলায় বলেছিলেন, শহরের আর কোথাও খোলা ভ্যাট থাকবে না। শহরকে ভ্যাটমুক্ত করতে তৃণমূল পুরবোর্ড সদর্থক ভূমিকা নিয়েছে বলেও দাবি করেন তিনি। এটা ঠিক, বছর পাঁচেক আগেও শহরের বিভিন্ন রাস্তার পাশে জঞ্জাল পড়ে থাকার যে চিত্র ছিল, তার অনেকটাই এখন উধাও। এর জন্য পুরসভার জঞ্জাল অপসারণ দফতরের ভূমিকায় খুশি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও।

এর পরেও পোদ্দার কোর্টের পাশে রাস্তায় জমা জঞ্জালের বিষয়টা খোঁচার মতো বিঁধছে পুরসভাকে। ভাবনা বাড়িয়েছে বেহালার জেমস লং সরণি এবং বাইপাসের ধারে একটি বেসরকারি হাসপাতালের সামনে জঞ্জালের স্তূপ নিয়েও। তবে পোদ্দার কোর্টের সামনে খোলা ভ্যাটে জঞ্জালের স্তূপ সরানোর কাজে তাদের কোনও গাফিলতি নেই বলে দাবি পুরকর্তাদের। জঞ্জাল দফতরের এক অফিসার জানান, সেখানে কম্প্যাক্টর স্টেশন করার কাজও শুরু হয়েছিল। কিন্তু জায়গা নিয়ে মামলা হওয়ায় তা বন্ধ হয়ে আছে অনেক দিন ধরে। তবে ওই এলাকায় খোলা ভ্যাট নিয়ে তিতিবিরক্ত পথচলতি মানুষও।

সেই জট সারাতেই এ বার তৎপর হয়েছেন মেয়র শোভনবাবু। শনিবার তিনি লালবাজারে গিয়ে পদস্থ পুলিশ কর্তাদের সঙ্গে কথা বলেন। শোভন জানান, রাস্তার পাশে কম্প্যাক্টর করতে হলে অনেক সময় ট্র্যাফিক নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি মাথায় রাখতে হয়। এমনিতেই কলকাতা শহরে রাস্তার পরিমাণ অন্য মেট্রোপলিটন শহরের তুলনায় কম। এখানে তা মাত্র মোট আয়তনের ৬.৮ শতাংশ। তাই পুলিশের পরামর্শ নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় কম্প্যাক্টর স্টেশন গড়ার পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে। এর জন্য কোনও জায়গার প্রয়োজন হলে তা যে বৃহত্তর স্বার্থে নেওয়া হবে, সে কথা স্থানীয় বাসিন্দাদের বোঝানো হবে বলে জানান তিনি।

পুরসভা সূত্রের খবর, বর্তমানে শহরে ৬৯টি কম্প্যাক্টর স্টেশন চালু রয়েছে। আরও আটটি তৈরির কাজ শেষ। এ ছাড়া ওই স্টেশনগুলিতে ১৪৫টি কন্টেনার রয়েছে। জঞ্জাল কম্প্যাক্টরে পিষে যাওয়ার পরে তা ফেলা হয় কন্টেনারে। জঞ্জাল ভর্তি সেই কন্টেনার টেনে নিয়ে যাওয়ার জন্য রয়েছে ৪৮টি প্রাইম মুভার। এ ছাড়াও শহরে ৪২টি মুভেবল কম্প্যাক্টর রয়েছে, যেগুলি বিভিন্ন জায়গা থেকে জঞ্জাল তুলে কম্প্যাক্টর স্টেশনে ফেলে দেয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Mayor Sovan Chatterjee
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE