অষ্টমীর রাতে গড়িয়াহাটের ভিড়ে ঠাসা রাস্তায় দাঁড়িয়ে কুলকুল করে ঘামছিলেন তরুণ গুহ। বহু বছর পরে স্ত্রীকে নিয়ে কলকাতায় ঠাকুর দেখতে এসেছেন তিনি। এমন ভিড়ে যোধপুর পার্ক কোন দিকে আর হিন্দুস্থান পার্ক কোন দিকে ঠাহর করতে পারছিলেন না তিনি! শেষমেশ রাস্তায় ডিউটিরত পুলিশকে ধরে মণ্ডপের রাস্তা চিনলেন তিনি।
নিউ আলিপুর সুরুচি সঙ্ঘে আগে যাওয়া হবে নাকি চেতলা অগ্রণীতে? এ নিয়ে আলিপুরের রাস্তায় তুমুল ঝগড়া টুকাই-টুবাইয়ের। ঝগড়া থামাতে হঠাৎ সুমন প্রশ্ন করল, সুরুচির এ বারের থিম কী? আর চেতলা কী করেছে? উত্তর দিতে না পেরে বাক্যহারা যুযুধান দুই বন্ধু।
পুজোর শহরে তরুণবাবু, টুকাই, টুবাইয়ের মতো চরিত্রদের দেখা মেলে আকছার। কারণ, মানুষ আর গাড়ির ভিড়ে অন্য সময়ের চেনা শহরটা যেন বদলে যায়! তাই পুজোয় মানুষকে সাহায্য করতে এ বার অ্যাপ্ চালু করছে কলকাতা পুলিশ। নাম দেওয়া হয়েছে ‘উৎসব’। লালবাজারের কর্তারা জানান, ইতিমধ্যেই কলকাতা পুলিশের ওয়েবসাইট এবং গুগল প্লে-স্টোরে এই অ্যাপ্ ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। সেখান থেকেই ডাউনলোড করা যাবে।
লালবাজারের কর্তারা বলছেন, শুধু অ্যাপ্-ই নয়, এ বার পুজোয় পথভোলা শিশু এবং বৃদ্ধদের জন্যও বিশেষ ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে। নারী ও শিশুকল্যাণ দফতরের সহযোগিতায় শহরের আটটি ডিভিশনে ৮টি গাড়ি ঘুরবে। এক পুলিশকর্তা জানান, ‘‘হারিয়ে যাওয়া শিশুদের নজর কাড়তে গাড়িগুলি রঙিন বেলুন দিয়ে সাজানো হবে। গত বছরও এই কাজ করা হয়েছিল। ভাল সাড়াও মিলেছিল।’’
পুলিশকর্তাদের কেউ কেউ বলছেন, পথভোলা যুবক-যুবতীদের পথ দেখাবে তাঁদের নয়া অ্যাপ্। কারণ, শহরের প্রথম সারির পুজোগুলির থিম থেকে যাবতীয় বিশদ তথ্য ওই অ্যাপ্-এ থাকবে। কোথায় গাড়ি পার্ক করা যাবে, তা-ও থাকবে। পুলিশের এক শীর্ষ কর্তার কথায়, ‘‘এখনও অ্যাপ্-এ পুজো ম্যাপ আপলোড করা হয়নি। কারণ, পুজো ম্যাপ আনুষ্ঠানিক ভাবে উদ্বোধন করা হয়। সেই পর্ব মিটে গেলেই অ্যাপ্-এ মিলবে পুজো ম্যাপও।’’ পুলিশ সূত্রের
খবর, পুজোকর্তাদেরও নম্বর মিলবে অ্যাপ্ থেকে।
কেউ কেউ আবার অবশ্য বলছেন, ম্যাপ না হয় মিলল। কিন্তু রাস্তার হালহকিকত কী তা জানতে তো সেই ২২১৪-৩২৩০ (মূল কন্ট্রোল) বা ২২১৪-৩৬৪৪ (ট্রাফিক কন্ট্রোল) নম্বরে ফোন করতে হবে।
যদিও লালবাজারের কর্তারা
জানাচ্ছেন, ফোন করার অসুবিধাও কাটাবে অ্যাপ্। কারণ, কোন রাস্তায় যানজট এবং কোন রাস্তায় গাড়ির গতি মসৃণ, তা-ও নিয়মিত জানিয়ে দেবে ‘উৎসব’।
এই অ্যাপ্ নিয়ে লালবাজারের অন্দরে গুঞ্জনও রয়েছে। এর আগে মহিলাদের নিরাপত্তা, ট্রাফিক পরিষেবা-সহ নানা অ্যাপ্ তৈরি করেছে লালবাজার। কিন্তু তার জনপ্রিয়তা নিয়ে সন্দিহান খোদ লালবাজারের কর্তারাই। কিন্তু তাঁদের আশা, পুজোর মতো সর্বজনীন উৎসবে এই অ্যাপ্ অনেক বেশি জনপ্রিয় হবে। কলকাতা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (সদর) রাজীব মিশ্র বলেন, ‘‘মানুষের জন্যই এই অ্যাপ্। তাঁরা সহযোগিতা করলে আমরা নিরাপত্তা আরও জোরদার করতে পারব।’’
উৎসব কাপে প্রতিবারই চ্যাম্পিয়ন হয় লালবাজার। উৎসব অ্যাপে পুলিশ কতটা সফল হয়, সেটাই এখন দেখার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy