Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪

সিভিক পুলিশের হাতে পথ কি আদৌ নিরাপদ

টালিগঞ্জ ট্রাম ডিপোর মোড়। ধর্মতলামুখী রাস্তার এক ধারে পথচারীদের জন্য আলাদা করে রেলিং দিয়ে ঘেরা জায়গা। তার সামনে দাঁড়িয়ে রয়েছেন দুই মহিলা সিভিক ভলান্টিয়ার।

বিপজ্জনক: ওয়াকিটকিতে কথা বলতে ব্যস্ত কর্তব্যরত সিভিক ভলান্টিয়ার। তাঁর পাশ দিয়েই নিয়ম ভেঙে পথচারীদের যাতায়াত। সোমবার, পার্ক সার্কাস মোড়ে। নিজস্ব চিত্র

বিপজ্জনক: ওয়াকিটকিতে কথা বলতে ব্যস্ত কর্তব্যরত সিভিক ভলান্টিয়ার। তাঁর পাশ দিয়েই নিয়ম ভেঙে পথচারীদের যাতায়াত। সোমবার, পার্ক সার্কাস মোড়ে। নিজস্ব চিত্র

দীক্ষা ভুঁইয়া
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৭ অগস্ট ২০১৯ ০২:৫৩
Share: Save:

পার্ক সার্কাসের সাত মাথার মোড়। এ দিক-ও দিক থেকে যাতায়াত করছে অজস্র গাড়ি। শহরের গুরুত্বপূর্ণ এই মোড়ে ট্র্যাফিক সামলাচ্ছেন তিন সিভিক ভলান্টিয়ার। সিগন্যাল সবুজ হলেই তাঁদের মধ্যে দু’জন গাড়ির গতি ঠিক রাখতে সমানে হাত নাড়ছেন। কিন্তু তারই মাঝখান দিয়ে অবাধে হেঁটে চলেছেন বিভিন্ন বয়সের পথচারীরা। সে দিকে অবশ্য ভ্রূক্ষেপ নেই ভলান্টিয়ারদের। তাঁরা ওয়াকিটকি নিয়ে কথা বলতেই ব্যস্ত। গাড়ি থামিয়ে সেই পথচারীদের নিরাপদে রাস্তা পেরোতে সাহায্য করার বদলে কলের পুতুলের মতো হাত নেড়ে চলেছেন তাঁরা।

টালিগঞ্জ ট্রাম ডিপোর মোড়। ধর্মতলামুখী রাস্তার এক ধারে পথচারীদের জন্য আলাদা করে রেলিং দিয়ে ঘেরা জায়গা। তার সামনে দাঁড়িয়ে রয়েছেন দুই মহিলা সিভিক ভলান্টিয়ার। পথচারীরা যাতে কোনও মতেই ফুটপাত ছেড়ে রাস্তায় না নামেন, তার জন্যই তাঁদের দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছে। অথচ দেখা গেল, উল্টো দিক থেকে এক দল মানুষ রাস্তা দিয়েই হেঁটে এলেন। রাসবিহারী অ্যাভিনিউ মোড়ে আবার দেখা গেল, দু’জন ট্র্যাফিক কনস্টেবল যখন রাস্তার মাঝে দাঁড়িয়ে পথচারীদের সঙ্গে গাড়ির মিছিল সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন, তখন দুই সিভিক ভলান্টিয়ার বসে রয়েছেন রাস্তার মোড়ের একপাশে থাকা কিয়স্কের ভিতরে। পথে নেমে ট্র্যাফিক সামলানোর কোনও কাজেই তাঁদের কোনও ভূমিকা চোখে পড়ল না। কোথাও আবার দেখা গেল, দ্রুত গতিতে চলা গাড়ির সামনে এসে হাত দেখিয়ে দাঁড় করিয়ে দিয়েছেন সিভিক ভলান্টিয়ার। ফলে আচমকা ব্রেক কষতেই সেই গাড়ির পিছনে ধাক্কা মেরেছে অন্য গাড়ি! শুধু পার্ক সার্কাস, টালিগঞ্জ বা রাসবিহারী নয়, এ ছবি প্রত্যহ দেখা যায় শহরের সর্বত্রই।

সোমবার কলকাতা পুলিশের পথ নিরাপত্তা সপ্তাহের প্রথম দিনই ধরা পড়ল নিরাপত্তাহীনতার বেশ কিছু ছবি। যা দেখে অনেকেরই প্রশ্ন, শহরের রাস্তায় ট্র্যাফিক সামলানোর মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজে এই সিভিক ভলান্টিয়ারেরা কি আদৌ উপযুক্ত? প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ কি আদৌ দেওয়া হয় তাঁদের? কারণ, পথচারী ও গাড়িচালকদের অধিকাংশই রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা সাদা পোশাকের ট্র্যাফিক পুলিশকর্মীদের যতটা মানেন, সবুজ পোশাকের সিভিক ভলান্টিয়ারদের ততটা মানতে চান না। তাঁদের দেখলেই কেমন যেন ‘দূর ছাই’ গোছের মুখ করে এগিয়ে যান তাঁরা। অবলীলায় ভাঙেন ট্র্যাফিকের নিয়মকানুন। যার জেরে অনেক সময়েই দুর্ঘটনা ঘটে যায়।

সিভিক ভলান্টিয়ারদের ভূমিকা নিয়ে অবশ্য সন্দেহের অবকাশ রাখতে নারাজ কলকাতা ট্র্যাফিক পুলিশের কর্তারা। তাঁদের মতে, কলকাতা পুলিশের ট্র্যাফিক বিভাগে হোমগার্ড হিসেবে যাঁরা নিযুক্ত হন, তাঁদের দশ দিনের ‘বেসিক অ্যান্ড ট্র্যাফিক ট্রেনিং’ হয়। সেখানে আইন থেকে শুরু করে ট্র্যাফিক ম্যানেজমেন্ট পর্যন্ত শেখানো হয়। ওই একই প্রশিক্ষণ সিভিক ভলান্টিয়ারদেরও দেওয়া হয়। বরং আরও বেশি সময় ধরে। তাই সিভিক ভলান্টিয়ারদের প্রশিক্ষণে ঘাটতির অভিযোগ মানছেন না পুলিশের কর্তারা। তবে পুলিশকর্মীদের মতো দক্ষ হয়ে উঠতে তাঁদের সময় লাগবে, সে কথা মানছেন ডিসি (ট্র্যাফিক) সন্তোষ পাণ্ডে । তিনি বলেন, ‘‘কোথাও কিন্তু একা সিভিক ভলান্টিয়ার থাকেন না। স্থানীয় ট্র্যাফিক গার্ডের সার্জেন্ট বা আধিকারিকের সঙ্গে তাঁরা থাকেন। ফলে নিরাপত্তায় ঘাটতি থাকে না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Road Safety Civic Volunteers
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE